পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᎼᎼᏬ কিন্তু বিদেশীর আবিষ্কৃত সেই সম্পদ সুদূর ভারতের স্বদুর বঙ্গের এক নিভৃত কোণে থাকিয়া আমরাও তুল্যরূপে উপভোগ করিতেছি। জড়জগতের উন্নতি সম্বন্ধে যে কথা অন্তর্জগতের উন্নতি সম্বন্ধেও সেই কথা । কিন্তু সেই উন্নতি আয়ত্ত করিবার প্রণালী স্বতন্ত্র। বাষ্পীয়যান এবং তাড়িতবান্তর্ণ পাইবার জন্ত আমাদিগকে ভাবিতে হয় নাই, পয়সার লোভে বা কার্য্যের সুবিধায় যে গরজ মনে করিয়াছে, সে ঐগুলি বিনা প্রার্থনায় আনিয়া আমাদিগের দ্বারে উপস্থিত করিয়াছে ! ঐগুলি এখন আমাদের দেশের সম্পদ, জাতীয় সম্পদ, কেননা আমরা সকলেই তুল্যরূপে ঐ সকলের সুবিধা ভোগ করিতে পরিতেছি । যাহা ভোগ করিবার অধিকার বা সুবিধা তুল্যরূপ নহে, তাহাকে জাতীয় সম্পদ বলিতে পারি না । সাহিত্যকে তখনই প্রকৃত জাতীয় সম্পদ বলিতে পারিব, যখন তাঁহা উপভোগ করিবার সুযোগ এবং অধিকার জাতীয় আপামর সাধারণ সকলের তুল্যরূপ হইবে। বাপীয়যান এবং তাড়িতবাৰ্ত্ত এদেশে যে ভাবে আসিয়াছে, ইংরাজের সাহিত্য-সম্পদ, সাহিত্যের ইতিহাস সে ভাবে আসিতে পারে না । দেশে সে সম্পদ আনিতে তইলে অনুবাদ দ্বারা মাতৃভাষার ভিতর দিয়া তাহাঁকে আনিতে হইবে, তবে তাহাতে সকলের অধিকার জন্মিবে, সকলে তাহা উপভোগ করিবার সুযোগ পাইবে । সত্য বটে ইংরাজী ভাষা শিক্ষার গুণে এখন আপনার অনেকেই সেই সকল গ্রন্থ পাঠ করিয়া উপকৃত হইতেছেন ; কিন্তু যে পর্য্যস্ত ঐ সকল উপাদেয় গ্রন্থ অনুবাদ করিয়া স্বজাতীয় সৰ্ব্বসাধারণের দ্বারে উপস্থিত করিতে না বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ষ, অষিাঢ়, ১৩১৯ পারিতেছেন, সে পর্যন্ত সে সম্পদ আপনাদের জাতীয় সম্পদ নহে, আপনাদের দেহ-পাতের সঙ্গে সঙ্গেই তাহার প্রভাব এবং অস্তিত্ব বিলুপ্ত হইবে। যে ভাষা আয়ত্ত করিবার জন্ত, মে সাহিত্যের চিত্র, সৌন্দর্য্য এবং প্রভাব উপলব্ধি করিবার জন্য আপনার বাল্যকাল হইতে এত যত্ন পরিশ্রম, এত অর্থব্যয়, এত রাত্রি জাগরণ করিয়াছেন, তদ্বারা যদি স্বজাতির উন্নতি করিতে না পারিলেন, সেই কষ্ট্রোপার্জিত সম্পদ যদি স্বজাতিকে উপহার দিতে না পরিলেন, তাহা হইলে আপনাদের সেই কষ্ট, সেই জ্ঞান, সেই আহৃত সম্পদ সার্থক হইল, কেমন করিয়া বলিব ? হিন্দু-মুসলমান মাতৃভাষায় এবং মাতৃভাবার সাহিত্যে হিন্দু-মুসলমানের স্বার্থ এবং অধিকার এক । বাস্তবিক এ ক্ষেত্রে কাহারও স্বার্থ বা অধি কারের কিছুমাত্র পার্থক্য নাই। এশানে উচ্চ-নীচ, স্ত্রী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র, হিন্দু-মুসলমান সকলেরই সমান স্বার্থ, সমান অধিকার এবং সমান সুযোগ। পণ্ডিত এবং মূর্থেরও অধি কার এবং স্বার্থ এক, তবে ভাষার বিশুদ্ধি সাধনে এবং সাহিত্যের উন্নতিবিধানে পণ্ডিতের অর্থাৎ শিক্ষিতের যে পরিমাণ সুযোগ আছে, মুর্গের সে পরিমাণ সুযোগ নাই, এইমাত্র প্রভেদ । । হিন্দুর স্থায় অনেক মুসলমানও বঙ্গ সাহিত্যের সেবা করিয়াছেন, বঙ্গ-সাহিত্যের পুষ্টি সাপনে যথেষ্ট সহায়তা করিয়াছেন। বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ এবং উত্তরবঙ্গ-সাহিত্য পরিষৎ অনেক মুসলমান গ্রন্থকারের গ্রন্থ বিবরণ ৪ জীবন বৃত্তাপ্ত প্রকাশ করিয়া আমাদের