পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ડશ મઃ-ા ] যদি কবি জ্ঞানদাস বৈষ্ণবকবি না হইয়। সাধারণ কবি হইতেন, তাহা হইলে ইহার অধিক আমরা আর কিছু দেখিতে বা বুঝিতে চাহিতাম না। কিন্তু আমরা জানি যে জ্ঞানদাসের গীতি ইতর ইন্দ্রিয়পরায়ণের গীতি নহে, তুচ্ছ কামর্গাথা নহে। যদি তাহা ভাবিতাম তাহা হইলে জ্ঞানদাসের পদাবলী লইয়া এতটা বকবিকি করিতাম কি ন৷ সন্দেহ। অতএব এই চরণ কয়টার যথার্থ প্যাখ্যা করিবার চেষ্টা করিব। আমরা এখন যে অর্থ করিব তাহাও শব্দ প্রয়োগচাতুর্য্যব্যঞ্জক এবং সেই জন্যই এই স্থলে সে ব্যাখ্যার অবতারণা অপ্রাসঙ্গিক হইলে না। আমাদিগকে এই স্থলে বৈষ্ণবকবির যথার্থ স্বরূপের প্রতি ক্ষণিক দৃষ্টিপাত করিতে হইবে, নচেৎ এ চরণের অর্থ পরিস্ফুট হইবে না। বৈষ্ণবকবির কাছে শ্ৰীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধ প্রণয়ী প্রণয়িণী মাত্র নহেন, তাহীদের কাছে কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং এবং রাধা ভক্তিময়ী— ভগবানের হলদিনী শক্তি ; শ্রীকৃষ্ণ পরমাত্মা —ঐরাধ। জীবাত্ম। এইটুকু মনে রাখিয়া উদ্ধত কবিতাংশের ব্যাখ্যায় প্রবৃত্ত হইলেই উহার তাৎপৰ্য্য আর ঢাকা থাকিবে না। কবি “দানলীলা” বর্ণনা করিয়াছেন, অর্থাৎ পরমাত্মা জীবাত্মার কাছে তাহার প্রাপ্য দান বুঝিয়া লইতেছেন, ভগবান ভক্তের কাছে আত্মসমর্পণরূপ দান গ্রহণ করিতে আসিয়াছেন। তিনি দেখিয়া লইতে চাহেন যে ভক্ত র্তাহাকে কতদূর পর্য্যন্ত বিশ্বাস করিতে পারে, কত খানি আত্মসমর্পণ করিতে পারে। ভগবান বুঝিতেছেন যে এই জীবাত্মা এই ভক্ত র্তাহীরই অন্বেষণে জ্ঞানদাস ૨૦ જે ঘরের বাহির হইয়াছে, ইহার হৃদয়ে ভগবৎপ্রাপ্তির, ভগবানে আত্মসমর্পণের আত্যন্তিক আগ্রহ বিরাজমান রহিয়াছে ; ভক্তি রূপ মুক্ত। তাহার হৃদয়ে বলকিতেছে, তাই তিনি বলিতেছেন— অমূল্য রতন করিয়া গোপন রেখেছ হিয়ার মাঝে । যখন ভক্ত প্রথম ভক্তির পথে অগ্রসর হয়, তখন তাহার অনেক বাধাবিপত্তি উপস্থিত হয় ; তখম তাহাৰু মন একদিকে সংসারের টান আর দিকে ভগবানের টান, এই দুই বিপরীতমুখী বৃত্তির মধ্যে পড়িয়৷ সংশয়ে দোলায়মান হয় । সংসার বলে আমাকে ঠেলিয়া কোথায় যাও, আমিই তোমার সব, আবার ভক্তি বলে তুমি এ কি করিতেছ, তুচ্ছ সংসারমোহে পড়িয়া আসল জিনিষ অবহেলা করিতেছে। এইরূপ দ্বিধাভাবাপন্ন হইয়া জীবাত্মার হৃদয় সংশয়াকুল হয় । সে সংসারও ছড়িতে পারে না, অথচ ভগবানকে ছাড়িবার প্রবৃত্তি তাহার হয় না । যতক্ষণ এইরূপ অবস্থায় থাকে ততক্ষণ তাহার অনেক লুকোচুরি থাকে,অনেক বিমিশ্র ভাব থাকে, লজ্জা ঘৃণা ভয় তাহকে চঞ্চল করিয়া তোলে! এমন অবস্থায় সংসারাসক্তি আসিয়া তাহাকে চাপিয়া ধরে, “হু কুলটা হম বর কুলকামিনী নিকটে ইত্যাদি ।” তখন মনে হয় যে ভক্তির প্ররোচনা সকল বুঝি থাটি নয়, এমন সংসারকে কি চেলা যায় ? ভগবানের বাক্য তখন “ইহ সব কুবচন" বলিয়া উড়াইয়া দিবার ইচ্ছাও না জাগে তাহা নহে। নব অঙ্কুরাগ জাগিয়াছে, আমার তাহ প্রকাশ করিবার ইচ্ছা