পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२० মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বাঙ্গালী ভদ্রলোকদিগের মধ্যে, নুতন ইংরাজী শিক্ষার প্রভাবে, স্বদেশের সনাতন ভাব ও আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি একেবারেই লোপ পাইতেছিল । সমগ্র দেশই তখন ঘোরতর তামসিকতার দ্বারা আচ্ছন্ন হইয়া, নিজেদের প্রাচীন সভ্যতার ও সাধনার প্রাণহীন ও অর্থশূন্য বাহ্যিক ক্রিয়াকলাপের অনুসরণেই নিযুক্ত ছিল। তার ভিতরকার সত্যের ও মহত্বের অনুভূতি, সাধুসন্ন্যাসিগণের মধ্যে রূচিৎ থাকিলেও, সাধারণ গৃহস্থদিগের মধ্যে একেবারে ছিল না বলিলেই হয়। তার উপরে, সুরেন্দ্রনাথের পিতা, ডাক্তার দুর্গাচরণ বন্দোপাধ্যায়, যুরোপীয় সভ্যতার ও সাধনার প্রবল রাজসিক আদর্শের দ্বারা একান্তই অভিভূত হইয়া পড়িয়ছিলেন। র্তার সমসাময়িক ইংরেজীশিক্ষিত বাঙ্গালী মাত্রেরই স্বল্পবিস্তর এই দশ ঘটিয়াছিল। দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সুরেন্দ্রনাথকে কেবল ইংরেজী শিখাইয়াই ক্ষান্ত হন নাই। ইংরেজের চালচলন অভ্যাস ও ইংরেজের চরিত্র লাভ করিবার জন্য, তিনি অতি অল্প বয়সেই সুরেন্দ্রনাথকে ডভটন স্কুলে প্রেরণ করেন। এইরূপে সুরেন্দ্রনাথ একরূপ বাল্যাবধিই কলিকাতার ইংরেজ ও ইউরেশীয় বালকগণের সংসর্গে থাকিয়া স্কুল কলেজের শিক্ষা সমাপ্ত করেন। তার পরে, বিলাতে যাইয়া এই অদ্ভূত ব্রহ্মচৰ্য্য উদ্‌যাপন করিয়া সিবিলিয়ানী-পদ লইয়া, দেশে ফিরিয়া আসেন। আজিকালি বিলাত ও ভারত যেন এ’ঘর ও’ঘর হইয়া পড়িয়াছে, সত্য। কিন্তু সুরেন্দ্রনাথ যখন শিক্ষার্থী হইয়া বিলাত গমন করেন, তখন এইরূপ ছিল না। সেকালে বিলাত যাওয়া এত সহজ ছিল না বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, শ্রাবণ, ১৩১৯ বলিয়া, বিলাতপ্রত্যাগত হিন্দুদিগের নিজেদের প্রাণে একটা প্রবল অহঙ্কার এবং কোনো কোনো দিক্ দিয়া সমাজেও তাহঁাদের একটা অনন্যসাধারণ মর্য্যাদা ছিল। সে কালের বিলাত-প্রত্যাগত বাঙ্গালী হিন্দুদের সঙ্গে, র্তাহীদের প্রাচীন পৈতৃক সমাজের কোনো প্রকারের যোগাযোগ প্রায়ই থাকিত না । সমাজও তাহাদিগকে পতিত বলিয়া বাহিরে ফেলিয়া রাখিত। আর র্তাহারা নিজেরাও সাহেব সাজিয়া, সহধৰ্ম্মিণীকে গাউন পরাইয়৷ মেম সাজাইয়া, "নেটিভদের" সঙ্গে প্রমুক্তভাবে মেশামেশি করিলে কি জানি এই সদ্যলব্ধ সভ্যতার মর্য্যাদাভ্রষ্ট হইয়া পড়েন, সেই ভয়ে আপনাদের সমাজ হইতে যথাসম্ভব দূরে থাকিতে চেষ্টা করিতেন। সুরেন্দ্রনাথও প্রথম বয়সে তাঁহাই করিয়াছিলেন। তার বিধাতার চক্রাস্তে ও র্তার স্বদেশের স্বকৃতি বলে, সুরেন্দ্রনাথের সিভিলিয়ানী-পদ যদি খসিয়া ন পড়িত, তাহা হইলে আজি পৰ্য্যন্তও তিনি এই ভয়াবহ পরধৰ্ম্মের বোঝাই বহন করিয়া চলিতেন। অতএব এই সকল ঘটনাবশে সুরেন্দ্রনাথের ভাগ্যে যে স্বদেশের ও স্বজাতির সভ্যতা ও সাধনার নিগূঢ় প্রকৃতির সাক্ষাৎকার লাভ ঘটে নাই, ইহা কিছু বিচিত্র নহে। সুরেন্দ্রনাথের প্রাণের টানটা পুরাদমেই স্বদেশাভিমুখী হইতেও তার মত, প্রকৃতি এবং ভিতরকার ভাব ও আদর্শ যে সত্যই স্বদেশী, এমন বলা যায় না। শুদ্ধ সাত্ত্বিকী প্রকৃতিই আমাদের স্বদেশী চরিত্রের চিরন্তন আদর্শ। যেমন ভিন্ন ভিন্ন লোকে সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ এই তিন গুণের কোনও না কোনও একটা গুণ অপর দুই গুণকে অভিভূত করিয়া, তাহদের