পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] তখন র্তাহার কুযশে বাংলার শিক্ষিত সমাজ মুখরিত হইয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু স্বরেন্দ্রনাথ নীরবে সেই নিন্দাবাদকে উপেক্ষা করিয়৷ অল্পদিন মধ্যেই জনসাধারণের চিত্তে আপনার পূৰ্ব্বতন প্রভাব পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করেন। ইহার কিছু দিন পরে তাহার রিপণ কলেজের আইন বিভাগের অবৈধ আচার আচরণ লইয়া, একটা বিষম গোল বাধিয়া উঠে এবং এই কালেজ একেবারে উঠিয়া যাইবার আশঙ্কা পৰ্য্যন্ত উপস্থিত হয়। আর যে ভাবে তখন সুরেন্দ্রনাথ এই আসন্ন বিপদ হইতে আপনার কালেজট রক্ষা করেন, তাহ লইয়াও শিক্ষিত বঙ্গসমাজের সর্বত্র তাহার যে কুযশ রটনা হয়, সেরূপ কুযশকে ঠেলিয়া অন্য কোন লোকনায়ক স্বাদেশিক কৰ্ম্মক্ষেত্রে অটল ভাবে দাড়াইয়া থাকিতে পারিতেন কি না সন্দেহ। আর শোকে সংযম, বিপদে ধৈর্য্য, নিন্দ-অপবাদে উপেক্ষ, প্রত্যক্ষ নিষ্ফলতার মধ্যেও অসাধারণ কৰ্ম্মোদ্যম, এ সকলই সুরেন্দ্রনাথের পূৰ্ব্বজন্মসিদ্ধ যোগশক্তির প্রমাণ প্রদান করে। সুরেন্দ্রনাথের জীবনের কৃতিত্বের পশ্চাতে এই যোগশক্তিকে প্রত্যক্ষ না করিলে তাহার প্রকৃত মৰ্ম্ম ও মূল্য বোঝা অসম্ভব হইবে। স্বরেন্দ্রনাথের এই সংযম, এই উপেক্ষ ও এই কৰ্ম্মোদ্যম, এ সকল উচ্চতম রাজসিকতারই লক্ষণ। এ সকলে সুরেন্দ্রনাথের অসাধারণ পুরুযকারেরই প্রমাণ পরিচয় প্রদান করে। সুরেন্দ্রনাথের কৰ্ম্মজীবনে পুরুষকার ওঁ দৈব কিন্তু এ সংসারে পুরুষকার যতই কেন প্রবল হউক না, দৈবের সঙ্গে যুক্ত না হইলে, তাহা কখনই সিদ্ধিলাভে সমর্থ হয় না । সৰ্ব্ব চরিত-চিত্র ૨૨6 বিষয়েরই সিদ্ধি দৈব ও পুরুষকারের শুভ যোগাযোগের উপরে একান্তভাবে নির্ভর করে। সুরেন্দ্রনাথ আপনার কৰ্ম্মজীবনে যে অসাধারণ প্রতিষ্ঠালাভ করিয়াছেন, তাহ কেবলই তাহার অনন্যসাধারণ পুরুষকারের ফল নহে। পুরুষকার আমাদিগের ভিতরকারই কথা। আমাদের অন্তঃপ্রকৃতিকে অবলম্বন করিয়াই তাহা প্রকাশিত হয়। কিন্তু এই পুরুষকারের দ্বারা আমাদের জীবনের,বাহিরের অবস্থা-ও ব্যবস্থার স্বষ্টি বা যোগাযোগ সাধিত হয় না। এ সকল যোগাযোগ দৈবই সংঘটন করিয়া থাকেন। নেপোলিয়ানের অসাধারণ পুরুষকার লোক প্রসিদ্ধ। কিন্তু ফরাসীবিপ্লবের তরঙ্গমুখে না পড়িলে, আর যে সকল আদর্শের প্রেরণায় এবং যে সকল রাষ্ট্ৰীয় ও সামাজিক শক্তি-সংঘর্ষে সেই মহাবিপ্লবের সূচনা হয়, তাহার অনুকূলতা না পাইলে, সে অলোকসামান্য পুরুষকার কখনই ফুরিত হইত না এবং স্ফুরিত হইলেও কখনই আপনার সম্যক চরিতার্থতা লাভে সমর্থ হইত না। আর যে সকল ঘটন সম্পাতে ও যে সকল ব্যবস্থা ও অবস্থার যোগাযোগে নেপোলিয়ানের পুরুষকার ক্ষরিত ও কৃতার্থ হইয়াছে, তাহ তাহার স্বরুত নহে, কিন্তু সম্পূর্ণরূপেই দৈবকৃত। স্বরেন্দ্রনাথের পুরুষকারের আত্মপ্রতিষ্ঠাতেও এই দৈবের কাৰ্য্যই প্রত্যক্ষ রহিয়াছে । যে সকল বিশেয অবস্থা ও ব্যবস্থাদির যোগাযোগে সুরেন্দ্রনাথের প্রতিভা ও পুরুষকার আত্মপ্রকাশের অন্তকুল এবং সময়েচিত অবসর প্রাপ্ত হয়, তাহ দৈবেরই কাৰ্য্য। এরূপক্ষেত্র ও অবসর না পাইলে সুরেন্দ্রনাথের কৰ্ম্মজীবন যে অসাধারণ সফলতালাভ