পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] হইলেও, কদাপি •আপনার মনেও লৌকিকা- • চারকে উল্লঙ্ঘন করিবেন না”—ইহাই গুরুদাস বাবুর-কৰ্ম্মজীবনের মূল স্বত্র হইয়৷ আছে। গুরুদাস বাবু, মোটের উপরে, বর্তমান হিন্দুসমাজের অনেক বিধিব্যবস্থা ও রীতিনীতিরই পরিবর্তন যে আবশ্বক হইয়া উঠিয়াছে, ইহা জানেন ও মানেন। আর এ সকল মত প্রচার করিতেও তিনি কুষ্ঠিত হন না। কিন্তু যতদিন না সমাজ সমষ্টিভাবে এগুলিকে গ্রহণ করিয়াছে, অর্থাৎ যতদিন না এগুলি লৌকিকাচারে প্রতিষ্ঠালাভ করিয়াছে, ততদিন তিনি এ সকল সংস্কার কাৰ্য্যে পরিণত করিতে প্রস্তুত নহেন। কিছুকাল পূৰ্ব্বে পৰ্য্যন্ত এদেশের হিন্দুসমাজে যে অতি অল্পবয়সে বালক-বালিকাদের বিবাহ হইত, গুরুদাস বাবু তার প্রতিবাদী। চতুর্দশ কি পঞ্চদশ বর্ষেই সচরাচর “স্ত্রী-পুরুষের পরস্পরসংসৰ্গলিঙ্গার” উদ্রেক হয় ; আর যে বয়সে এই প্রবৃত্তির উদ্রেক হয়, তখনই তাহাকে "নির্দিষ্ট পাত্রে ন্যস্ত করিয়া নিবৃত্তিমুখী করিবার জষ্ঠ" নরনারীকে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ করা কৰ্ত্তব্য—বিবাহের বয়সসম্বন্ধে গুরুদাস বাবু এই সিদ্ধান্তই করিয়াছেন । * কিন্তু কাৰ্য্যতঃ বিবাহের বয়স নিৰ্দ্ধারণ করিতে যাইয়া তিনি দ্বাদশ হইতে চতুর্দশ বর্ষ পর্যন্তই তাছাদের বিবাহ দেওয়া কৰ্ত্তব্য, এই অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন। তার নিজের বুদ্ধি ও বিচার মতে চতুর্দশ হইতে পঞ্চদশ বর্ষই বালিকাদের বিবাহের নিয়তম ; কাল নিৰ্দ্ধারিত হওয়াই বিধেয়। "অসামান্ত পবিত্র ও যতচিত্ত" নরনারীর পক্ষে আরো অধিক বয়সে বিবাহ চরিত-চিত্র Ꮌ☾ করিলেও, ধৰ্ম্মহানি হয় না, এ কথাও তিনি অস্বীকার করেন না। কিন্তু তথাপি কেবল লৌকিকাচারের মুখাপেক্ষী হইয়াই, গুরুদাস বাবু, দ্বাদশ হইতে চতুর্দশ বর্ষই বালিকার বিবাহের উপযুক্ত বয়স বলিয়া নিৰ্দ্ধারণ করিয়াছেন। ত্রিশ বৎসর পরে, বাংলার হিন্দুসমাজের লৌকিকাচারে যদি অষ্টাদশ বা উনবিংশ বর্ষের যুবতীগণের বিবাহ প্রচলিত ওঁ প্রতিষ্ঠিত হইয়া যায়, গুরুদাস বাবু যে তখনে এই দ্বাদশ হইতে চতুর্দশ বর্ষের নিয়মকেই ধরিয়া থাকিবেন, এমন বোধ হয় না। যেমন বাল্যবিবাহের সংস্কারসম্বন্ধে, সেইরূপ হিন্দুসমাজের প্রচলিত জাতি-বিচারসম্বন্ধেও, লোকাচারে যে পরিমাণে শিথিলতা বা ঔদার্য্যের প্রতিষ্ঠা হইয়াছে, গুরুদাস বাবু কেবল তাঁহাই গ্রহণ করিতে রাজি আছেন। পরমার্থষ্টিতে যে জাতি-বিচারের স্থান নাই, গুরুদাস বাবু ইহা স্বীকার করেন। “বিদ্যাবিনয় সম্পন্নে ব্রাহ্মণে গবি ইন্তিনি শুনিচৈব শ্বপাকে চ পণ্ডিতা: সমদৰ্শিনঃ ॥ গাষ্ঠী হস্তী কুকুরকে ব্রাহ্মণে চণ্ডালে। পণ্ডিতের সমভাবে দেখেন সকলে। এবং রামচন্দ্র স্বয়ং গুহক চণ্ডালের সহিত ত্ৰিত করিয়াছিলেন। অতএব নজাতি বলিয়া কাহাকেও অবজ্ঞা করা হিন্দুর কৰ্ত্তব্য নহে ।” * গীতাঁর এই উক্তি অনুসারে, আর গুণকৰ্ম্মবিভাগের দ্বারাই প্রথমে চতুৰ্ব্বর্ণের উৎপত্তি হয়, এই কৃষ্ণেক্তি স্মরণ করিয়া, হিন্দুসমাজে এখন যে আকারে জাতিবিচার প্রতিষ্ঠিত আছে, সঙ্গত, বলিয়া তাহার সমর্থন করা সম্ভব নহে ; গুরুদাস বাবু ইহা জানেন।

  • জ্ঞান ও কর্ণ—২৮৪ পৃষ্ঠা e
  • জদও কৰ্ম্ম-৩৭৪ পৃষ্ঠা।