পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] আদিরসের ছড়াছড়ি আছে বলিয়াই বৈষ্ণব-কবির প্রভাব বঙ্গসাহিত্যে বড় প্রবল ভাবে এখনও বিদ্যমান রহিয়াছে। এই মতের সমর্থনাৰ্থ বৈষ্ণব-কবির শ্রীকৃষ্ণকে র্তাহারা কামাতুর যুবক, রাধিকাকে কামাতুরা নায়িকা ও সখীগণকে দূতীতে পরিণত করিয়াছেন । এই মত কি সত্য ? বৈষ্ণব-কবির প্রভাবের কি ইহাই একমাত্র হেতু ? আমরা জ্ঞানদাসের পদাবলীর যৎকিঞ্চিৎ আলোচনা দ্বারা প্রমাণ করিতে চেষ্ট৷ করিব যে এই অভিমতের ভিতর সারাংশ নিতান্ত অল্প। অবশ্য আমরা এ কথা বলিল না যে যাহা সাধারণ লোকচক্ষে অশ্লীল ব। আদিরসঘটিত বলিয়া বোধ হয়, এমন ংশ বৈষ্ণব-কবির পদাবলীতে অথবা আমাদের আলোচ্য বৈষ্ণব-কবির পদাবলীতে নাই, আছে সত্য ; কিন্তু বৈষ্ণবকবির গানের প্রতিষ্ঠা ভাবে, ইন্দ্রিয়পরতায় নহে। এই মীমাংসায় উপনীত হইতে হইলে বিশেষ কোনও পরিশ্রমের প্রয়োজন নাই, প্রয়োজন কেবল রসসংগ্রহণেচ্ছু হৃদয়ের সহিত বৈষ্ণব-কবির চর্চা । যিনি কেবল র্তাহীদের বিযয় লিখিবার জন্য বা বলিবার জন্য র্তাহীদের কবিতা পাঠ করেন, তাহার দ্বারা বৈষ্ণব-কবির-বৈষ্ণবকবির বলি কেন, কোনও কবির যথার্থতাব গ্রহণ করা অসন্তব। কবির হৃদয় কবির হৃদয় দ্বারা ধরা পড়ে, আর কিছুতেই নহে। বৈষ্ণব-কবির পদাবলী মুখ্যতঃ ভক্তির গান, প্রেমের গান ; গৌণভাবে তাহারা ভালবাসার গান। অতএব বৈষ্ণব-পদাবলী জ্ঞানদাস 、○○ ভালবাসার সকল লক্ষণ ক্রান্ত হইয়াছে তাহাতে বৈচিত্র্যও নাই। এই যে ইন্দ্রিয় দ্বারা প্রিয়সন্তোগব্যাপার তাহাকে ভালবাসার রাজ্য হইতে একেবারে তাড়াইয়া দেওয়া যায় কি ? তাহা যদি না যায়, তাহা হইলে সত্যতত্ত্বজ্ঞ বৈষ্ণব-কবি যদি তাহার বর্ণনা করিয়া থাকেন তো তাহাতে এমন অন্যায় কিছু হয় নাই যে জন্য বৈষ্ণব-কবির মাথা, তুলিতে লজ্জা হুইবে । জ্ঞানদাস ভালবাসার শাস্ত্রে সুপণ্ডিত তাই তিনি সূত্ররূপে কহিয়াছেন— রূপ লাগি আঁখি ঝুরে, গুণে মন ভোর । প্রতি অঙ্গ লাগি কঁাদে প্রতি অঙ্গ মোর। হিয়ার পরশ লাগি হিয়। মোর কান্দে, পরাণ পিরীতি লাগি থির নাহি বন্ধে ॥ এবং ইহারই রূপান্তর রবি বাবুর প্রতি অঙ্গ কাদে তব প্রতি অঙ্গ তরে। প্রাণের মিলন মাগে দেহের মিলন ॥ তবে প্রভেদ এই যে রবি বাবু শুধু স্বত্র লিখিয়াই ক্ষান্ত হইয়াছেন, দৈহিক মিলনের বর্ণনা করিতে পারেন নাই, বৈষ্ণব-কবি তাহা করিয়াছেন । রবি বাবুর সময়ের শিক্ষা ও দীক্ষা অন্তরকমের, বৈষ্ণব-কবির শিক্ষা ও দীক্ষা অন্তরকমের । রবিবাবুর সময় ও বৈষ্ণব-কবির সময়—এই দুই সময়ের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য হইয়াছে। সেক্ষপীয়র, কালিদাস, বায়রণ, গেটে যাহা লিখিতে পারিয়াছেন, এখনকার কোনও য়ুরোপীয় বা ভারতবর্ষীয় কবি তাহা লিখিতে সাহস করিবেন না, লিখিলেও তাহাকে আজকাল বৈষ্ণব-কবির মত সমালোচকের হস্তে লাঞ্ছিত হইতে হইত। সময়ের গুণে