পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬৬ বিশ্বাসের উপর ভর করিয়াই তিনি উক্ত প্রকার দাবী করিয়াছেন। কিন্তু আমরা পূৰ্ব্বেই দেখাইয়াছি, থিয়োসফির মতবাদগুলি আদিম বৌদ্ধধর্মের মতবাদ নহে। তা ছাড়া আমরা ইহাও দেখাইব যে, শাক্যমুনির দর্শন-পদ্ধতি থিয়োসফির দর্শন পদ্ধতি নহে। ল্যাসেন, বুগুফ, প্রভৃতি প্রধান প্রধান প্রাচ্যতত্ত্ববেত্তারা স প্রমাণ করিয়াছেন যে বৌদ্ধধৰ্ম্মের দর্শনপদ্ধতি কপিলের সাংখ্য সিদ্ধান্ত হইতে বিঞ্চাশলাভ করিয়াছে। এ কথা সকল প্রাচ্যতত্ত্ববেত্তারাই স্বীকার করিয়া থাকেন। এ সম্বন্ধে বুৎফ, এইরূপ বলেন—“শাক্যমুনি ধৰ্ম্মজীবনে প্রবেশ করিয়া, নাস্তিক সংখ্যদর্শনের সিদ্ধান্তগুলি হইতে যাত্র অfরস্তু করিয়াছিলেন। সেই সিদ্ধান্তগুলি এই ঃ—ঈশ্বরের অসদৃভাব, মানব-আত্মী-সমূহের বহুত্ব ও নিত্যত্ব, ত্রিগুণাত্মক প্রকৃতির নিত্যত্ব। সেই প্রকৃতিও রূপান্তরিত হইয়া থাকে ; এবং তাহার কতকগুলি উপাদান আছে ; সেই উপাদানগুলি দিয়া, প্রকৃতি, সংসারচক্রে ভ্রাম্যমাণ মানবআত্মাদিগকে আচ্ছাদিত করিয়৷ রাখেন । এই মতবাদ হইতে শাক্যমুনি,— ঈশ্বরের নাস্তিত্ব, মানব-আত্মার বহুত্ব, ধোনিত্ৰমণবাদ, নিৰ্ব্বাণ-মুক্তি– এই সমস্ত গ্রহণ করেন । এই নিৰ্ব্বাণ-মুক্তির কথা সাধারণতঃ সমস্ত ব্রাহ্মণ্যিক দর্শনেই প্রাপ্ত হওয়া যায়।” - সিনেটের গুহবৌদ্ধধর্মের মধ্যে এই সকল মতবাদই আমরা দেখিতে পাই । যে কৰ্ম্মবাদ থিয়োসোফির একটি পধান আলোচ্য বিষয়, উহ। কি বৌদ্ধধৰ্ম্ম, fক ব্রাহ্মণ্য ধৰ্ম্ম —উভয়েরই অনুভূত। বঙ্গদর্শন [ ১২শ বম, শ্রাবণ, ১৩১৯ থিয়োসফির মতানুসারে, যে সকল উপাদানে মানুষ গঠিত, তন্মধ্যে আমর। প্রথমেই দেখিতে পাই “রূপ”। এই রূপশব্দের অর্থ আকার ; সমস্ত হিন্দুদর্শনেই ইহার উল্লেখ আছে। খিয়োসফির তৃতীয় তত্ত্ব— “অ্যাঞ্জাল বডি’ অর্থাৎ “লিঙ্গশরীর” । কিন্তু এই সংজ্ঞাটি সাংখ্যদর্শনের সংজ্ঞা । কতকগুলি বিশুদ্ধ উপাধি লইয়৷ এই শরীর গঠিত,— ইহাই সাংখ্যদর্শনের “সূক্ষ্মশরীর” । পঞ্চম উপাদান—“মনঃ” । কিন্তু প্রকৃত পক্ষে মনঃ কি ? না, অন্তঃকরণ। বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ উভয়েরই মতে, ইহা চক্ষু কর্ণাদির ন্যায় আর একটি ইন্দ্ৰিয় । যষ্ঠ উপাদান “বুদ্ধি” । ক বৌদ্ধ, কি ব্রাহ্মণ উভয়ের ভাষাতেই ইহার অর্থ—যে মনোবৃত্তির দ্বারা মমুৰ্য্য জ্ঞান লাভ করে । সপ্তম উপাদান—আত্মা। বৌদ্ধদিগের এই আত্মা, এই আমি,—জ্ঞান, ইন্দ্রিয় ও পঞ্চভূতাদি সংযুক্ত ব্যক্তিগত দেহ নহে। উপরে যাহা বলা হইল তাহা হইতে প্রতিপন্ন হয়, কত প্রকার বিভিন্ন উপাদান লইয়া থিয়োসফি গঠিত। ইহার আরও অন্তান্ত প্রমাণ দেওয়া যাইতে পারে। থিয়োসফি বৌদ্ধধৰ্ম্মের উপর দাবী কিয়ৎপরিমাণে সপ্রমাণ করিতে পারিলেও বৌদ্ধধৰ্ম্মের প্রবর্তৃক শাক্যমুনির সহিত কোন প্রকার যোগ নিবদ্ধ করিতে পারিবে না। পরিশেষে, নিঃ সেনেটের গ্রন্থের কতক গুলি ভ্রম, প্রদর্শন করিব। এই ভ্রমগুলি উপেক্ষ করা যায় না ; কারণ, তিনি “মহ|ধীশক্তি সম্পন্ন সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রখ্যাত সংক্ট ঠ