পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা | আধুনিক শিক্ষার আদর্শ ও জবরদস্তির লোকশিক্ষ মৌলিক ও অনতিক্রমনীয় একত্বের জ্ঞানকে ভাল করিয়া ফুটিয়া উঠিবার অবসর দেয় নাই। সুতরাং সে কালের লোকশিক্ষার আদর্শ অতিপ্রাকৃত শাস্ত্রবিশেষের আদেশের কিম্বা ব্যক্তিবিশেষের অঙ্কুশাসনের উপরেই প্রতিষ্ঠিত হইত। সে অাদর্শ সৰ্ব্বতোভাবে মানুষের নিজের প্রকৃতির উপরে এবং সেই প্রকৃতিকেই আশ্রয় করিয়৷ গড়িয়া উঠিলার অবসর পায় নাই। সে কালের লোকশিক্ষা বাহির হইতে কি ভাল এবং কি মন্দ তাহার প্রামান্তলক্ষণ সংগ্ৰহ করিয়া, উপর হইতে সেই বাহিরের আদর্শকে জনগণের উপরে চাপাইবার চেষ্টা করিত এবং মানুষের আপাত ভালকে বাড়াইয়া তাহার আপাত মন্দকে নিরস্ত করিবার প্রয়াসেই আপনার সফলতা অন্বেষণ করিত। এ শিক্ষার প্রকৃত মূল্য ও সত্য যার্থকতা যাহাই হউক না কেন, উহা যে অনেকটা সহজ ছিল, এ কথা মানিতেই হইবে। কিন্তু এ কালের মনোবিজ্ঞান মানবপ্রকৃতির অশেষ বৈচিত্র্য ও আপাত-বিরোধের মধ্যে যে অনতিক্রমণীয় একত্ব আছে, তাহাকে যতই আয়ত্ব করিবার চেষ্টা করিতেছে, ততই পুরাতন দ্বৈতবোধ নষ্ট হইয়া, আধুনিক শিক্ষার সমস্তাকে ক্রমশঃই অত্যন্ত জটিল করিয়া তুলিতেছে। মানবপ্রকৃতি স্বরূপতঃ এক, যদিও অশেষ প্রকারের রূপের ভিতর দিয়া সেই প্রকৃতি আপনাকে প্রকাশিত ও প্রতিষ্ঠিত করিয়া থাকে। ছায়াতপের ন্যায় ভাল ও মন্দ মানুষের মধ্যে মিশিয়া আছে। মানুষের ভালোর মধ্যেই তার মন্দ এবং মন্দের মধ্যে তার ভাল লুকাইয়া আছে। ՀՂ ծ আত্যন্তিক ভাল বা আত্যন্তিক মন্দ, দুয়ের কিছুই তাহার মধ্যে নাই। সুতরাং মানবপ্রকৃতির কিছুই একান্ত ভাবে উপেক্ষণীয় বা পরিত্যজ্য নহে । প্রাচীন কালের শিক্ষা মানুষের প্রকৃতির ভাল ও মন্দের প্রত্যক্ষ বিরোধকে জাগাইয়। রাখিয়া ও ফুটাইয়৷ তুলিয়াই আপনার আদর্শলাভে চেষ্ট৷ করিত। আধুনিক শিক্ষা এই বিরোধকে বিবর্তনের একটা প্রক্রিয় মাত্র মনে করে, এবং এই বিরোধের ভিতর দিয়াই মানবপ্রকৃতি যে সামঞ্জস্তের দিকে যাইতেছে, তাহাকেই লক্ষ্য করিয়া চলে। সুতরাং আধুনিক শিক্ষা মন্দের ভিতর দিয়াই ভালকে বাড়াইয়া তুলিয়া এবং ভালোর ভিতর দিয়া মন্দকে শোধিত করিয়া মানুষের প্রকৃতিকে পূর্ণভাবে ফুটাইয়। তুলিবার চেষ্টা করিতেছে। অনেকগুলি ভিন্ন ভিন্ন যন্ত্রের সুর মিলাইয়া কলাবিশারদ বাদ্যকরেরা যেমন একটা অপূৰ্ব্ব সঙ্গত করিয়া তোলেন, সেইরূপ মানুষের ভিন্ন ভিন্ন, এমন কি আপাতবিরোধী বৃত্তি ও প্রবৃত্তি সকলের যথাযোগ্য অনুশীলন করিয়া, তাহাদের মিলনে একট। অপূৰ্ণ সঙ্গত করাই আধুনিক শিক্ষার শ্রেষ্ঠতম আদর্শ। মানবপ্রকৃতির মধ্যে যাহা কিছু ভাল মন্দ সেই প্রকৃতিরই অঙ্গীভূত হইয়া আছে, তাহার সকল গুলিকে মিলাইয়াই এ সঙ্গত করিতে হইবে। এ সকলের মধ্যে কোনো বৃত্তিকে ছাড়াইয়৷ এ সঙ্গত পূর্ণাঙ্গ হইতে পারবে না। একটকে খাটো করিয়া অপর কোনোটকে বাড়াইয়া দিলে এ সঙ্গত নষ্ট হইয়া যাইবে। প্রত্যেক বৃত্তির এক একটী নিজস্ব লক্ষ্য