পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԳՀ. আছে । ভিন্ন ভিন্ন বৃত্তির এই নিজস্ব লক্ষ্যটাকে উপেক্ষা করিলে চলিবে না। প্রতোক বৃত্তি আপনার নিজস্ব লক্ষ্যেরই অনুসরণ করিবে, অথচ তারই ভিতর দিয়া সকলে মিলিয়া সমগ্র প্রকৃতির যে লক্ষ্য, তাহাকেই বাড়াইয়া দিবে। ইহাই গাধুনিক শিক্ষার ব্যক্তিগত অঙ্গের উৎকৃষ্ট আদর্শ। আর এই আদর্শের প্রতিষ্ঠা করিয়াই এ কালের মনোবিজ্ঞান বৰ্ত্তমান যুগে লোকশিক্ষার সমস্তকে এমন বিষম জটিল করিয়া তুলিয়াছে। প্রাচীন সাধনা সকলে অনেকস্থলেই মানবপ্রকৃতির এই জটিলতার জ্ঞান ভাল করিয়া ফুটিয়া উঠে নাই। সে সকল সাধনা মানুষের ভিতরে একটা অত্যন্তিক দ্বন্দ্ব কল্পনা করিয়া, কতকগুলি বৃত্তিকে ভাল আর কতকগুলিকে মন্দ ভাবিয়া, ভাল বৃত্তিগুলিকে সতেজ ও মন্দগুলিকে নিস্তেজ করিবার জন্য, লোকশিক্ষার নামে মানুষের উপরে অশেষবিধ অস্বাভাবিক শাসনসংযমের বোঝা চাপাইয়৷ দিয়া তাহীদের অন্তঃপ্রকৃতিকে নিষ্পেষিত করিত। সুতরাং সে কালের লোকশিক্ষাতে মানবপ্রকৃতিকে সাহায্য করার চেষ্ট! অপেক্ষ শাসন করার চেষ্টাই বেশী ছিল। ভিতর হইতে, যথাযোগ্য অনুশীলনের দ্বারা, মানবের প্রকৃতিকে ফুটাইঃ তুলিয়, সেই প্রকৃতির সম্পূর্ণ চরিতার্থতা সম্পাদনের চেষ্টা অপেক্ষ, সে কালের লোকশিক্ষাতে মানুষের উপরে কতকগুলি বাহিরের বিধিনিষেধ চাপাইয়া দিয়৷ সেই প্রকৃতিকে সৰ্ব্বদা সঙ্কুচিত করিয়া রাখিবার চেষ্টাই অধিক ছিল । আধুনিক মনোবিজ্ঞান লোকশিক্ষার যে নূতন আদর্শ ফুটাইয়া তুলিতেছে, তাহা এই প্রাচীন বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, শ্রাবণ, ১২১৯ আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত। এ আদর্শে &ণচীন শাসনের স্থলে নূতন স্বাধীনত প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। এ আদর্শের প্রেরক ও পরিচালক অপরের আদেশ নহে, কিন্তু নিজের রুচি ও প্রবৃত্তি। এই আদর্শ শিক্ষাকে কঠিন ও ক্লেশকর না করিয়া সৰ্ব্বতোভাবে সহজ ও সুখকরই করিতে চাহে। এই আদর্শের অনুসরণের জন্য জনগণকে প্রবৃত্ত করিবার মূল মন্ত্র ভয় নহে কিন্তু লোভ। অতএব আধুনিক আদর্শের লোকশিক্ষা কোথাও প্রবর্তিত করিতে হইলে, সকলের আগে সে শিক্ষা সম্বন্ধে জনগণের রুচি জন্মান আবশ্বক। আর তাহা করিতে গেলেই বর্ণজ্ঞানপ্রচারের জন্য ব্যস্ত না হইয়া, আগে জনমণ্ডলীর প্রাণে বস্তুজ্ঞানলাভের জন্য যাতে একটা বলবতী আকাজার উদয় হয়, ভারই ব্যবস্থা করা প্রয়োজন । আমাদের দেশের জনসাধারণের স্বাভাবিকী বুদ্ধিবৃত্তি অপরাপর দেশের জনসাধারণের বুদ্ধিবৃত্তির তুলনায় কোন অংশেই হীন নহে । সুতরাং জ্ঞানউপার্জনের মূল যন্ত্রটা আমাদিগের জনসাধারণের মধ্যে সম্পূর্ণরূপেই সক্ষম হইয়৷ আছে। যে ক্ষেত্রে এই যন্ত্র প্রয়োগ করিতে হয়, আমাদিগের যা কিছু অভাষ, কেবল তারই । সুতরাং বৰ্ত্তমান সময়ে আমাদের দেশে এই ক্ষেত্র-প্রতিষ্ঠাই লোকশিক্ষার প্রথম কৰ্ম্ম। কতকগুলি পাঠশালা খুলিয়। দেশের সর্বসাধারণ শিশুদিগকে সেখানে পাঠাইগেই এই উদ্দেশ্য সাধিত হইবে না । বরং সাক্ষাৎভাবে শিক্ষার্থীদিগের অভি ভাবকদিগের প্রাণে এবং পরোক্ষভাবে শিক্ষার্থীদিগেরও মধ্যে এই জবরদস্তির