পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& “.8 শাসনদণ্ডের ভয় দেখাইয়া, দেশের জনসাধারণকে বর্ণজ্ঞ করিয়া যে লোকশিক্ষা বিস্তারের জন্য অনেকে ব্যস্ত হইয়া পড়িয়াছেন, তাহা যে দেশের লোকপ্রকৃতির এবং জনমণ্ডলীর পুরাগত সভ্যতা ও সাধনার উপরে প্রতিষ্ঠিত হইবে, তাহার কোনোই সস্তাবনা নাই । সরকারী আইনের সাহায্যে যে শিক্ষার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হইবে, তাহ যে ইংরেজরাজের আপনার স্বজাতির শিক্ষা ও সাধনা, অভিজ্ঞতা ও অভ্যাস এবং তঁহাদেরই রুচি ও প্রকৃতির স্বল্পবিস্তর অসুসরণ করিবে, ইগ অবগুস্তাবী ও অনিবাৰ্য্য । আর লোকশিক্ষার সঙ্গে সৰ্ব্বত্রই দেশের রাষ্ট্রশক্তির অতি ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ থাকে। এই জন্য অতি প্রাচীন কাল হইতেই দেশের রাষ্ট্রশক্তি র্যাহীদের হাতে থাকে, তারা সৰ্ব্বদাই জনমণ্ডলীর শিক্ষার ব্যবস্থাকে সৰ্ব্বতো ভাবে আপনাদিগের করতলগত করিয়া রাখিতে চাহেন। সুতরাং ইংরেজরাজ আপনার রাজবিধানের তাড়নায় দেশের সর্বসাধারণ শিশুম গুলীকে পাঠশালায় পাঠাইয়া, তাহদের শিক্ষার ভার আমাদের মহাভারতের মহাভারতীয় ইতিবৃত্তের বিভাগ মহাভারতের সমাজ কাল্পনিক না হইলেও তাহাতে যখন মহাভারত ইতিহাস না হইয়। ইতিহাসবাদ-পদবাচ্য হয়, তখন মহাভারতের ইতিবৃত্ত সত্য কি না অসুসন্ধেয় । পাণ্ডবগণের কার্য্যকলাপ-বর্ণনা মহাভারতের বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, শ্রাবণ, ১৩১৯ হাতে ছাড়িয়া দিয়া নিশ্চিন্ত হইবেন, এমন কল্পনাও করা যায় না। ইংরেজ আইন করিয়া যদি এ দেশে কখনো সাৰ্ব্বজনীন লোকশিক্ষার ব্যবস্থা প্রবৰ্ত্তিত করেন, তাহ হইলে শিক্ষিতব্য বিষয় নিৰ্দ্ধারণ এবং শিক্ষার প্রণালী নিৰ্ব্বাচন,–এই নূতন ব্যবস্থা সম্বন্ধে সকল ক ই—একান্ত ভাবে আপনার হাতেই রাখিবেন । ইহাই তাহার পক্ষে স্বাভাবিক ও নীতিসঙ্গত। আর তাহাই যদি হয়, তবে আমাদের বর্তমান উচ্চ ইংরেজী শিক্ষার যেমন আমাদের জাতীয় শাস্ত্রের ও সাহিত্যের, সভ্যতার ও সাধনার, অভ্যাসের ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে কোনোই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নাই ; সে রূপ এই সাৰ্ব্বজনীন লোকশিক্ষার সঙ্গেও দেশের সত্যিকার প্রাণবস্তুর কোনোই সম্পর্ক থাকিবে না। উচ্চশিক্ষা পাইয়৷ আমরা যেমন বহুল পরিমাণে স্বদেশের প্রাণ হইতে সরিয়া পড়িয়াছি, দেশের সর্বসাধারণের ভাগ্যেও এই জবরদস্তির লেখাপড়ার ফলে ক্রমে তাহাই ঘটবে। এই বিপদ নিবারণের জন্য এই উৎকট সংস্কারচেষ্টার প্রতিরোধ করা আবশ্যক। ঐবিপিনচন্দ্র পাল । ঐতিহাসিকত প্রধান উদ্দেশু হইলেও ব্যাসদেব চন্দ্রবংশের আমূল পরিচয় দিয়াছেন। অজযোনি হইতে জনমেজয় পৰ্য্যন্ত বর্ণিত হইয়াছে। এই ইতিবৃত্তকে প্রধানতঃ দুইভাগে বিভক্ত করা যায়। প্রথম দার্শনিক, দ্বিতীয় লৌকিক। পদ্মযোনি হইতে বুধ পৰ্য্যন্ত দার্শনিক।