পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] কোষপঞ্চকের জটিল ও অপরিহার্য্য সম্বন্ধের মধ্যে বাস করিতেই হয় । বহুতপস্তাবলে, সিদ্ধ অবস্থায়, যোগিজনেরা এ সম্বন্ধসকলকে অতিক্রম করিতে পারেন বটে, কিন্তু তখন তাহার, আমরা যfহাকে ধৰ্ম্ম বলি ও মহাকে অধৰ্ম্ম বলি, তদুভয়েরই অতীত ছইয়া যান। দেহে মাবদ্ধ থাক্রিয়াও তখন র্তাহারা বিদেহী। ত্রিগুণাত্মিক প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত থাকিয়াও তখন র্তাহারা নিস্ত্রৈগুণ্য হইয়৷ বাস করেন। এই সকল সিদ্ধ মহাজনকে লক্ষ্য করিয়াই, গীতায় ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ অৰ্জুনকে উপদেশ করিয়াছেন— “ত্ৰৈগুণ্য বিষয়াঃ বেদ। ভবাৰ্জুন!” নিস্ত্রৈগুণ্যে “গুণত্রয়কে আশ্ৰয় করিয়াই বেদ সকলের প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠা হইয়াছে ; হে অৰ্জুন ! তুমি এই ত্রিগুণের অতীত হইতে চেষ্টা কর।” হিন্দুর ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম-বিচার এই ত্রি গুণাতীত রাজ্যের কথা নহে ; তাছার অনেক নিচের কথা। হিন্দু বলেন ষে সে অবস্থায় ধৰ্ম্মও থাকে না, অধৰ্ম্মও থাকে না ; কৰ্ম্মও থাকে মু, অকৰ্ম্মও থাকে না; পুণ্যও থাকে না, পাপও থাকে না । যে মানব-প্রকৃতির উপরে হিন্দু ধৰ্ম্মবস্তকে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন, তাহ। এই সাধারণ, এই প্রাকৃত, এই অসিদ্ধ, এই জড়-অজড়ধৰ্ম্মসমম্বিত, এই কোষপঞ্চকে আবদ্ধ মানবপ্রকৃতি । এই প্রকৃতির মধ্যে পশু ও আছে, মানুষও আছে, দেবতাও আছেন। সুতরাং হিন্দুর ধৰ্ম্ম মানুষের অন্তনিহিত জড়ত্ব ও পশুত্ব, গমষ্যত্ব ও দেবত্ব, সকল অঙ্গকে আশ্রয় করিয়া, সকল চেষ্টাকে সফল করিয়া, সকল প্রবৃত্তির

হিন্দুধৰ্ম্মের বহুমুখীনতা NᏬᎽᎼᎽ তৃপ্তিদান করিয়া, আপনার সার্থকতালাভের প্রয়াস পাইরাছে। ইহাই হিন্দুর ধৰ্ম্মের অদ্ভূত বিচিত্রতার ও অপূৰ্ব্ব বহুমুখীনতার মূল কারণ। জগতের আর যত ধৰ্ম্ম আছে, সকলেই মানব প্রকৃতির মধ্যে ভাল ও মনের একটা অত্যন্তিক ভেদের প্রতিষ্ঠা করিয়াছে। কেবল হিন্দুর ধৰ্ম্মেই তাহ করে নাই। অপর সকল ধৰ্ম্মে মামুষের কতকগুলি বৃত্তি ও প্রবৃত্তিকে মণ ও কতকগুলিকে ভাল বলিয়া গ্রহণ করিয়াছে। আর মন বৃত্তি ও প্রবৃত্তিগুলিকে নিৰ্ম্মমভাবে নিপীড়িত করিয়া, তদ্বিপরীত ভাল প্রবৃত্তি ও বৃত্তিগুলিকেই ফুটাইয়া তুলিতে চেষ্টা করিয়াছে। হিন্দুর ধৰ্ম্মে মানুষের প্রকৃতির মধ্যে এরূপ একটা আত্যস্তিক ভাগবাটোয়ার করিবার নিষ্ফল প্রশ্বাস হয় নাই। ছায়া তপের মধ্যে ধেমন কোনও ঐকাস্তিক বিংছদ ঘটান অসাধ্য, সেইরূপ মানবপ্রকৃতির ভিতরে ষা’কে আমরা মন্দ বলি ও ষা’কে ভাল বলি, তা’র মধ্যেও কোনও প্রকারের আত্যন্তিক ব্যবধানের প্রতিষ্ঠা করা যায় না ;– হিন্দু চিরদিনই এই কথা বলিয়াছেন। মানবের মধ্যে একটা মানবীয় দিক্ ও একটা ঐশ্বরিক দিক্‌ আছে। একদিকে মানুষ জীব—সৰ্ব্ববিধ জীবধৰ্ম্মের অধীন ; অন্যদিকে সে শিব—নিত্যশুদ্ধবুদ্ধমুক্তস্বভাবসম্পন্ন ;--হিন্দু অতি প্রাচীন কালেই ইহা বুঝিয়াছিলেন। তাই হিন্দুর শ্রুতি মানব প্রকৃতির মধ্যে এই জীব-শিবের মিলনকে ছায়াতপের ন্তায় বর্ণনা করিয়াছেন। “ছায়াতপে ব্রহ্মবিদে বদস্তি ।” স্বতরাং হিন্দু মানব-প্রকৃতির সকল দিক্‌কে ধরিয়াই, ধৰ্ম্মৰস্তুকে গড়িয়া তুলিতে চেষ্ট।