পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৩৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

vსტo করেন। ব্রিটিশ-ইণ্ডিয়ান সভা জমীদারদিগের সভা হইলেও প্রয়োজনমত আপনাদের বিচার-বুদ্ধি অনুযায়ী দেশের সাধারণ প্রজাবর্গের রাষ্ট্রীয় স্বত্ব-স্বার্থসংরক্ষণে একেবারে উদাসীন ছিলেন না। কিন্তু তাহাদের বিচারআলোচনায় জনসাধারণের তো কথাই নাই, শিক্ষিত ভদ্র সম্প্রদায়ের পক্ষে ও সাক্ষাৎ ভাবে যোগ দান করিবার অধিকার ও অবসর ছিল না। ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান সভার নেতৃবর্গ জমীদারী স্বত্ব-স্বার্থের সঙ্গে মিলাইয়া যতটা সম্ভব দেশের সাধারণ লোকের স্বত্ব-স্বার্থ রক্ষা করিবার চেষ্টা করিতেন। কিন্তু জনসাধারণের সঙ্গে এক যোগে কোনো রাষ্ট্রীয় কৰ্ম্ম সাধনের প্রবৃত্তি ও প্রয়াস তাহীদের ছিল না। স্বতরাং দেশের রাষ্ট্রশক্তিকে জাগাইয়া, ংহত লোকমতের দুর্জয় শক্তি প্রয়োগে, রাজপুরুষদিগের স্বেচ্ছাচারকেনিয়ন্ত্রিত করিবার জন্য এ পর্য্যন্ত কোনো চেষ্টাই হয় নাই। অথচ দেশের শিক্ষিত ও শিক্ষার্থী সম্প্রদায়ের প্রাণে একটা বলবতী আত্মপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা জাগিয়া উঠিতেছিল। আধুনিক স্বদেশাভিমান ও স্বাদেশিকত৷ ফলতঃ যে ইংরেজি শিক্ষার প্রভাবে আমাদিগের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের ভিতরে একটা অসংযত ও অসঙ্গত ব্যক্তিত্বাভিমান জাগিয়া প্রাচীন সমাজের শাসন ও পুরাগত ধৰ্ম্মের বিশ্বাসকে ভাঙ্গিয়া তাহাদিগকে ধৰ্ম্মদ্রোহী ও সমাজদ্রোহী করিয়া তুলে, তাহাতেই আবার তাহাদিগের প্রাণে এক নূতন স্বদেশাভিমানেরও সঞ্চার হয়। আমাদের সে’কালের ধৰ্ম্ম ও সমাজ-সংস্কারচেষ্ট বহুলপরিমাণে যুরোপীয় আদর্শের বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, ভাদ্র, ১৩১৯ অনুসরণ করিয়াই চলিয়াছিল সত্য। ইহা সত্ত্বেও যে এই সকল সংস্কার চেষ্টাৰ অস্তরালে একটা প্রবল স্বদেশাভিমানও জাগিয়া উঠিতেছিল ইহাও অস্বীকার করা যায় না। যুরোপীয় সমাজের তুলনা আমাদের নিজেদের সমাজজীবন অতিশয় হীন, এবং যুরোপের যুক্তিবাদের তৌলদণ্ডে আম! দিগের ধৰ্ম্মবিশ্বাস ও ধৰ্ম্মসাধনা অত্যন্ত ভ্রান্ত ও কুসংস্কারপূর্ণ বলিয়াই বোধ হইত। আর এই হীনতাবোধ সৰ্ব্বদাই আমাদিগের স্বদেশাভিমানে অত্যন্ত আঘাত করিত। এই বেদনার উত্তেজনাতেই, আমরা তখন এতটা দিক্‌বিদিক জ্ঞানশূন্ত হইয়া আমাদের ধৰ্ম্মের ও সমাজের সংস্কারসাধনে নিযুক্ত হইয়াছিলাম। আমাদের এই সংস্কার-চেষ্ট যদি সৰ্ব্বতোভাবে খৃষ্টীয়ানী পন্থ অন্তসর করিয়া চলিতে পাকিস্তূহ হইলে সেই চেষ্টার ফলে আমাদিগের ,ধ্যে কোনো প্রকারের সত্য স্বদেশিকতা ফুটিয়া উঠিতে পারিত না । কিন্তু যে ব্যক্তিত্বাভিমান zij Individualism to যুক্তিবাদ ব Rationalism, আমাদিগকে নিজেদের সমাজের ও ধৰ্ম্মের অনুশাসনকে অগ্রাহ করিত্বে প্রণোদিত করে, তাহারই প্রভাবে আমাদিগের পক্ষে খৃষ্ট-ধৰ্ম্মে বিশ্বাস স্থাপন এবং যুরোপীয় সমাজবিধানের বস্তৃতাগ্রহণও একান্তই অসাধ্য করিয়া তুলে । স্বদেশের বেদপুরাণাদিকে মমুয্যপ্রতিভা-রচিত এক সাধারণ মানব-বুদ্ধি-সহজ লম-কল্পনা-প্রস্থত বলিয়, গ্রামাণ্য-মৰ্য্যাদা নষ্ট করিয়া, খৃষ্টীয়ানের বাইবেলকে ঈশ্বরপ্রণীত ও অভ্রান্ত বলিয়া গ্রহণ করিবার আর কোনো পথ রহিল নী