পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৩৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○ッ নহে, অল্প প্রায়শ্চিত্তের পরেই পুনঃ পুৰ্ব্বধিকার প্রাপ্ত হইয়। সুখে জীবনাতিপাত করিয়াছেন । সুখে বলিপ কি ? যদি বলি, তবে কবির উচ্চ নীতির লাঘব করা হইবে । কুন্দনন্দিনীর মৃত্যুর কথা স্বরণ করিয়া কি নগেন্দ্রনাথকে চিরজীবন অনুতাপ করিতে হয় নাই ? কুন্দনন্দিনীর রূপমোহে একবার ভ্ৰমে পড়িয়াছিলেন, আবার যে কুন্দের প্রতি তিনি অবিচার করিয়াছিলেন, তাহার জন্ত র্তাহার অনুতাপ না হইয়া থাকিলে, তাগর চরিত্রের মহত্ব থাকে কোথায় ? নৈতিক বিচূতির ইহাই এক অবগুস্তাব ফল, তদ্বারা যে দুঃখ-যন্ত্রণ, যে সমস্তার অবস্থা আনিয়া ফেলা হয়, তাহার এককালীন নিরীকরণ আর সম্ভবে না। পূর্ণ শরীরে যে আত্মকৃত ক্ষত, তাছা একেবারে মিলায় না । তাই, শিক্ষা দ্বারা, অভ্যাস দ্বারা, চরিত্র-ভিত্তি এরূপ দৃঢ় করা কর্তব্য যে, কখনও এরূপ সমস্তায় পড়িতে না হয়। নগেন্দ্র-চরিত্রের প্রধান শিক্ষাই এই, এবং এ অতি উচ্চ শিক্ষা । নগেন্দ্রনাথকে কবি ভাৰ্য্যাবৎসল করিয়া আঁকিয়াছেন। স্বর্য্যমুখীর জন্ত তাহার আত্মামুশোচন, আক্ষেপ ও দুঃখভোগ, এবং তাছার ভাৰ্য্যবিনোদন-প্রণালীর আলোচনা করিলে, তাহার কুদে আসক্তি সত্ত্বেও, তাহীর চরিত্রের এষ্ট অংশ বুঝিতে বিলম্ব হয় না। এরূপ ভাৰ্য্যাপ্রেমস্থলেও যে রূপমোহ এরূপ অনর্থ ঘটাইতে পারে, ইছা কেবল মামুষের ভাগ্য । মানুষ যে শাপভ্রষ্ট জীব, মানুষের মুখের যে অসংখ্য বিঘ্ন, ইহা তাহাই প্রমাণ করে । অথবা মানুষের মুখস্থুঃখের মূলে এ সকল না থাকিলে, মানুষের যে কুহেলিকাপুর্ণ জীবন, বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, আশ্বিন, ১৩১৯ তাহা ওরূপ হইত নী। শিক্ষা নৈতিক শঙ্কি, গ্রবর্তন করিয়া মানুষের মুখ যে পরিমাণ আপনার চরিত্রের উপর নির্ভর করে, গে পরিমাণে সুথের স্থায়িত্ব সংস্থাপন করিতে পারে, এবং সে অবস্থার উচ্চতা বিবেচন। করিলে তাহা বস্থানীয়ও বটে ; কিন্তু ভঙ্গাগড়ার দুঃখ-দুৰ্ব্বলতার মধ্যেও একরূপ রমণীয়তা আছে, তাহার ক্ষতি স্বীকার করিয়া লইতে হয়। ভাঙ্গা-গড়া, দুঃখ-দুৰ্ব্বলতা কি শিক্ষার জন্তও প্রয়োজন নছে ? কবি বলিতেছেন, অন্তঃকরণের পক্ষে দুঃখভোগই প্রধান শিক্ষা। দুঃখ নিজের কৰ্ম্মফল এবং সে কৰ্ম্ম চরিত্রেণ দুৰ্ব্বলতা হেতু । নৈতিক দুৰ্ব্বলতা যে সুখ ভাঙ্গে, সে মুখ পুনর্গঠিত হইলে, দুঃখভোগ দ্বারা অন্ত:করণের শিক্ষা জন্ত নৈতিক বলের পুনরাধান হইয়া সেই নূতন মুখের বা পূৰ্ব্ব মুখের নবগঠিত অবস্থার স্থায়িত্ব জন্মায়। অভাবজনিত দুঃখও আছে, যাহা আত্মকার্যের ফল নহে। অভাবে লোভের কারণ উপস্থিত হইলে, লোভের বস্তু পরিহারের চেষ্টা এবং চেষ্টাজনিত মানসিক অভ্যাসে চিত্তসংযমের ক্ষমতা জন্মে। এরূপে যাহার চিত্তসংযমের ক্ষমতা জন্মে নাই, নৈতিক বিচূতি তীয় পক্ষে সম্ভবপর, আবার সে বিচুতি হেতু দুঃখ ভোগ, দুঃখভোগ হইতে শিক্ষা, শিক্ষা হইঠে নৈতিক শক্তির আধান । সৰ্ব্বতোভাবে কিছুরই পরিহার সম্ভবপর নহে, চক্রের আব ক্টনের দ্যায় নিম্নোচ্চাবস্থাপ্রাপ্তিমাত্র, তবে একেয় নিম্নগমন অল্পকে সতর্ক করিয়া তীর্থর সম্বন্ধে মুখের স্থায়িত্ব ঘটাইতে পারে। নগেন্ধের জীবনে এ সকলই খৃষ্টান্ততি হইয়াছে। তবে চিত্তসংযমের অভাব ?