পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V) e বঙ্গদর্শন • বয়স তখন নয় বংসর। বালিকার পক্ষে দশ বৎসর যাঙ্গা, বালকের পক্ষে বোধ হয় পনর বৎসরও তাহ নহে। এই ক্ষুদ্র বালিকাটি ভিক্টরকে দেখিত শুনিত,তাহাকে গল্প পড়িয়া শুনাইত—তাহার একপ্রকার অভিভাবিকা হইয়া উঠিয়ছিল। ভিক্টরের দুই অগ্রজ ব্লতা, আবেল ও ইউজিন, ইহাদের সঙ্গে বড় মিশিত না । তাহারা তাহাঁদের বয়োজ্যেষ্ঠত্বের সন্ত্রম বঙ্গীয় রাখিয়। চলিষ্ঠ। ঘ দিন বদক-ব্যবহারের শিক্ষা ও পরীক্ষ হইত, সে দিন আবেল ও ইউজিন তাহ। দেখিতে চলিয়া যাই ত ; কিন্তু ভিক্টর যাইত না । সে এই বালিকার কাছে বসিয়া থাকি ত । বন্দুকের খেলা দেখায় আনন্দ আছে বৈ কি, কিন্তু এই বালিকার মুখ দেখাতে ভিক্টরের বোধ হয় অধিক আনন্দ ছিল " ইহাকে অবশ্যই কেহ প্রেম বলিবে না। নয় বৎসরের বালক, দশ বৎসরের বালিক।-- ইহাদের মধ্যে প্রেম, আমাদের নাটকনভেলপড়া পাঠকবর্গ অবগুই স্বীকার করিবেন না । কেহ স্বীকার করুন বা ন৷ করুন, ঘটনাটা এই— 疊 তাহার অগ্রজ দুই ভ্রাত বাহির হইয়। গেলে, ভিক্টরকে বালিকা বলিত -“এস ৎিকৃটর, তোমাকে আমি কিছু পড়িয়া শুনাই ; তাহাতে সময়টা বেশ কাটিয়া যাইবে।” তখন বালিকা ভিক্টরকে ইয়া গিয়া সিড়ির একটা ধাপে বসিত এবং কোন একখানি গল্পের পুস্তক খুলিয়া কোম চিত্তরঞ্জক গল্প পড়িয়া যাইত। কিন্তু ইহার এক বর্ণও ভিক্টরের কর্ণগোচর ১২শ বৰ্ম, বৈশাখ, ১৩১৯ হইত না ; সে কেবল একদৃষ্টে বালিকার মুখপানে চাহিয়া থাকিত। বালিকার চক্ষু যতক্ষণ পুস্তকে নিবন্ধ থাকিত ততক্ষণ ভিক্টর একমনে-একপ্রাণে তাহার মুখপানে চাহিয়! থাকিত । মধ্যে মধ্যে বালিকা যখন মাথা তুলিয়া ভিক্টরের পানে চাহিত, তখন ভিকৃট? নিতান্ত অপ্রতিভ হইত ও লজ্জায় তাহার মুখ লাল হইথ। উঠিত । এক এক সময় বালিক বধন বুঝিত যে, ভিক্টর মন দিয়া শুনিংেছে না, তখন সে কিঞ্চিৎ রুষ্ট হইয়। বলিত—“দেখ ভিক্টর তুমি ভাল করিয়া শুনিতেছ না। তুমি যদি মন দিয়া না শুন, তবে আর আমি পড়িব না।” তখন ভিকৃটর ব্যস্তসমস্ত হষ্টয়া বলিত, “আমি খুব মনোযোগ করিয়া শুনিতেছি, তুমি পছু।” অর্থাৎ বালিকার চক্ষু পুনরায় পুস্তকে নিবদ্ধ হইলেই ভিক্টর আবার প্রাণ ভরিয়া তাহর মুখ দেখিবার বিধা পাইবে । কোন কেন সময়ে বালিক। জিজ্ঞাসা করিত, “কোন খানটা তোমার খুব লাগিয়াছে, ভিক্টর ?" ভিক র এ প্রশ্নের কোনই উত্তর দিতে পারিত না ; কেননা, কিছুই তাহার কর্ণগোচর হয় নাই । এই ব্যাপারের অনেক দিন পরে, পরিণত বয়সে, ভিক্টর হুগো নিজেই বলিয়াছিলেন—“এইরূপ বালোচিত প্রণয়ব্যাপার বোধ করি সকল মানুষেরই জীবনে ঘটে। ইহার সহিত পরিণত বয়সের প্রেমের সম্বন্ধ, যেমন উষার আলোকের সহিত মাধ্যদি। প্রশ্বর দীপ্তির সম্বন্ধ। ইহ জাগরণোম্মুখ হৃদয়ের প্রথম নয়নোন্মীলন।"