পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৪১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Y • ঞ্জিহোভা বা এল এলোহিম (The Lord Almighty)ও ঠিক নিরাকার চৈতন্যস্বরূপ নহেন। আদি মানব আদম গাছের আড়ালে লুকাইয়া ছিল বলিয়। তিনি তাহাকে না দেখিতে পাইয়া, ডাকাডাকি হাকাই কি করিয়াছিলেন। তিনি এব্রাহেমের সম্মুখে আসিয়া তাহর সঙ্গে সর্ববদ্ধ হইয়াছিলেন। জেকবের সঙ্গে আঁধার ঘরে তিনি সারারাত কুস্তি করিয়াছিলেন। জগতের সকল ধৰ্ম্মের আদিম বিবরণ হইতে মানুষ যে কোথাও প্রথমে নিরাকার চৈতন্যস্বরূপ ঈশ্বরতত্ত্ব ধরিতে পারে নাই—সৰ্ব্বত্রই যে আদিম ঈশ্বরতত্ত্ব সাকার ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ ছিল, ইহার বিস্তর প্রমাণ পাওয়া যায়। আর প্রত্যেক মানব-শিশুতে সমগ্র মানবজাংির বিবৰ্ত্তনক্রমটা পুনরাবৰ্ত্তিত হয় বলিয়। আমাদের শৈশবের ঈশ্বরতত্ত্বও কখনওই “নিরাকার চৈতন্যস্বরূপ" হয় না। নিতান্ত শিশুদিগকে এ দুরূহ তত্ত্ব শিখাইবার চেষ্ট। করিলে, তাহাতে কখনওই কোন সুফল ফলে বলিয়াও বোধ হয় ন । ঈশ্বর নিরাকার চৈতন্যস্বরূপ এ কথা তো জন্মাবধিই আমার সস্তানসন্ততিরা শুনিয়া আসিয়াছে ; কিন্তু বস্তুটা যে কি, ইহ। একজনেও কখনও ধরিতে পারিয়াছে বলিয়৷ মনে হয় না। বরং ইহার বিপরীত প্রমাণই মাঝে মাঝে পাইয়াছি । একদিন আমার একটী অপগও বালিকা সন্ধ্যাকালে একান্তে বসিয়া আপনার মনে বলিতেছিল “হে জগদীশ্বর, তুমি আমায় ভাল কর! আমাকে হাতে পায়ে ধরিয়া তোমার কাছে লইয়া যাও।” শিশুরা সকল বিষয়ই বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, কাত্তিক, ১৩১৯ অনুকরণ করিয়। শিক্ষা করে, এ অদ্ভুত উপাসনাও এই বালিকা অনুকরণ করিয়া শিখিয়াছিল। কিছুক্ষণ পরে, তার “উপাসনা" শেষ হইলে, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করিলাম—“তুই যে এই জগদীশ্বর বলে, প্রার্থনা কল্লি, জগদীশ্বর কে জানিল ?” সে জোর করিয়। বলিল—“জানি বৈ কি ?” “তিনি কে, কোথায় থাকেন ? তা বল তো ?” বালিক উত্তর করিল, “ৰ্তাকে আমি চিনি, তিনি ভবানীপুরে থাকেন।" বালিকার উত্তর গুনিয়া আমরা হাসিয়৷ উঠিলাম, কিন্তু সে কাহাকে যে নির্দেশ করিয়া এ অদ্ভূত ঈশ্বরতত্ত্ব প্রচার করিল, বুঝিলাম না। বুঝিলাম কেবল যে আমাদের হাজার চেষ্টা সত্বেও এই শিশুর বুদ্ধি ঈশ্বরকে কিছুতেই "শুদ্ধ নিরাকার চৈতন্যস্বরূপ” বলিয়া ধরিতে পারে নাই। ইহার কিছুদিন পরে, তাহাকে লইয়া ঢাক। হইতে কলিকাতা আসিলাম। পথে সে জাহাজে উঠিয়া, হঠাৎ দৌড়য়া আসিয়া বলিল—“বাবা, জগদীশ্বর এই জাহাজে আছেন। সত্যি বলুছি, আমি তাকে দেখেছি।" কথাটার মৰ্ম্ম কিছুই তখন বুঝিতে পারলাম না, কিন্তু দুপ্রহরের সময় আহার করিতে যাইয়৷ দেখি, সেখানে বিজ্ঞানচাৰ্য্য শ্ৰীযুক্ত জগদীশচন্দ্র বসু মহাশয় বসিয়া আছেন। তখন জানিলাম"আমার কোমলমতি বালিকা কাহাকে আমাদের সকলের উপাদ্য জগদীশ্বর বলিয়া ধরিয়া লইয়াছিল। সে দিন হইতেই বুঝিলাম ছোট ছোট শিশুদিগকে নিরাকার চৈতন্য-স্বরূপ ঈশ্বরতত্ত্ব বুঝাইবার চেষ্টাটা কত উদ্ভট ও অযৌক্তিক ।