পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬ যাক না কেন,কাছে গিয়া প্রতিদিনের কার্য্যকলাপ পরখ করিয়া দেখিলে সে প্রতীতি জন্মে না। এবং ভারতে জাতিভেদ সত্ত্বেও যে মনুষ্যত্বের প্রতি একটা গভীর শ্রদ্ধা, মানুষকে কেবল মানুষ বলিয়া নহে কিন্তু নারায়ণরূপে যে ভক্তি করিবার একটা ভাব, অন্তঃসলিলার মত, প্রাণের ভিতরে ভিতরে এখনও প্রতিষ্ঠিত রহিয়াছে, এরূপ ভাব কচিৎ কোন খৃষ্টীয়ান ভক্তের মধ্যে থাকিলেও, সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার ধ্বজধারী ইউরোপীয় সমাজে একান্তই বিরল। এ ভাব থাকিলে ইউরোপে ধনী-সম্প্রদায় চিরদিন দরিদ্রকে যে চক্ষে দেখিয়া আসিয়াছে, আর সমগ্ৰ শ্বেতাঙ্গসমাজ অপর বর্ণের লোকের প্রতি যে অস্থিমজ্জাগত ঘূণার ভাব পোষণ কুরে, তাহা কখনই সস্তব হইত না । ইউরোপে জাতিভেদ নাই, শ্রেণীভেদ আছে ; এ কথা সঞ্চলেই জানেন ও মানেন । আমাকে যদি জিজ্ঞাসা কর যে এ দুইয়ের কোনটাকে বেশী পছন্দ করি, আমার প্রথম উত্তর এই যে, ইহার কোনোটাকেই আমি সত্য ও স্বাভাবিক বলিয়া মনে করি ন! । ভারতে আজ ষে আকারে জাতিভেদ আছে ও ইউরোপে যে শ্রেণীভেদ প্রবল, এ দু’ই মনুষ্যত্ব-বিকাশের অন্তরায় । মানুষের মধ্যে যে দেবতা আছেন, এ দুইয়ের কোন বাষস্থাতেই তাহাকে তাল করিয়া ফুটাইয়। তুলিতে দেয় না। কিন্তু যদি বল যে, এই দুইয়ের একটকে আমায় লইতেই হইবে, তৃতীয় পন্থা আর নাই; তবে আমি ঐকান্তিক অকুণ্ঠার সহিত বলিব—“আমার নিজের বঙ্গদর্শন { ১২শ বৰ্ষ, বৈশাখ, ১৩১৯ জুতিভেদকেই আমায় রাখিতে দাও, বিলাতের শ্রেণীভেদের দ্বারা আমার এই পুরুষপরম্পরাগত জাতিভেদকে আমি তাড়াইয়া দিতে রাজি নহি ।” আধুনিক শিক্ষাপ্রাপ্ত অনেক বন্ধুই এ কথার তীব্র প্রতিবাদ করিবেন, জানি। আর যে সকল রক্ষণশীল বন্ধু আমাকে এই জন্য সাধুবাদ করিবেন, তারাও যে আমার এ কথার মৰ্ম্ম বুঝবেন না ইহাও দেখিতেছি । তবুও বলি, আমাদের জাতিভেদ যতই মন্দ হউক না, বিলাভের শ্রেণীভেদ হইতে অশেষ গুণে শ্রেষ্ঠ । আপনার বস্তুর প্রতি মানুষের স্বাভাবিক যে মমতা আছে তারই প্রেরণায় এ কথা' বলিতেছি, এমনও কেহ মনে করিবেন না। আমি ইংরেজ বা আমেরিকান্ হইলেও এই কথাই বলিতাম। এমন ইংরেজ ও আমেরিকানও দেখিয়াছি, যাদের স্বদেশ · ভক্তি কম নহে, আর যারা নিজেদের সমাজের শ্রেণীভেদের সমুদায় দোষগুণের সম্পূর্ণ ওয়াকেব হইয়াও স্বচ্ছন্দচিত্তে আমার এ কথার সায় দিয়া থাকেন । আমাদের জাতিভেদের প্রধান দোষ এই যে, ইহাতে কিছুতেই মানুষকে আপনার জন্মের বাধন কাটাইয়া উঠিতে দেয় না । যে নীচ জাতে জন্মিল কিছুতেই তার উচু জাতের সঙ্গে এক পংক্তিতে বসিবাধ অধিকার বা অবসর হয় না। শ্রেণীভেদের বিশেষ গুণ এই যে, গুণী হইলে যে কেহই এই জন্মের বুধন কাটাইয়া উঠিতে পারে । অতি নীচ ঘরে যে জন্মাইল সে-ও আপনার গুণের প্রমাণ দিতে পারিলে অনায়াসে বা