পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৫১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮ম সংখ্যা } বাংলা দেশের যেখানেই রথ হউক না কেন, অধিকাংশ স্থলেই তাহা জগন্নাগের রথ। কখনও কখনও যে শ্ৰীকৃষ্ণবিগ্রহকে রথারূঢ় করাইয়া রথ যাত্রা করা হয় না, তাহা নয়। কিন্তু এখানে জগন্নাথবিগ্রহের অভাবেই এরূপ হয় । ফলতঃ মনে হয় যে শ্ৰীজগন্নাথদেবকে রথে না বসাইলে রথযাত্রার প্রকৃত মৰ্ম্মট শাস্ত্রের উক্তি,—রথারূঢ় বামনকেই দেখিবে। “রথেচ বামনং দৃষ্ট পুনর্জন্ম ন বিদ্যাত" কিন্তু তথাপি রথারূঢ় বিগ্রহ ঐ জগন্নাথ শ্ৰীকৃষ্ণ বা বামন নহেন । কারণ এই রথ, হিন্দুর চক্ষে বিশাল বিশ্বের বিবৰ্ত্তন-বিধানের প্রতিমূৰ্ত্তি। শ্ৰীজগন্নাথের রথচ ক্র নিখিল জগতের বিবৰ্ত্তনচক্রেরই প্রতিকৃতি। শ্ৰীজগন্নাথের রথচক্র এই নিখিল কৰ্ম্মচক্রকেই মনে করাইয়া দেয় । এই কৰ্ম্মবাদ, হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয়েই স্বীকার করেন, সত্য । কিন্তু নাস্তিক্য বৌদ্ধসিদ্ধান্তের কৰ্ম্মবাদ আর আস্তিক্য হিন্দুসিদ্ধান্তের কৰ্ম্মবাদ এক নহে । নাস্তিক্য বীজ হইতে যেমন বৃক্ষের, বৃক্ষ হইতে সেইরূপ আবার বীজের উৎপত্তি হয় ; সেইরূপ অনাদি অবিদ্যাকৃত কৰ্ম্মই কৰ্ম্মের স্বঃ করে। এই কৰ্ম্মশৃঙ্খল স্ব প্রতিষ্ঠ ও স্বতন্ত্র স্বয়ং; এই নিখিল কৰ্ম্মপ্রবাহের অতীতে থাকিয়৷ কোনও কৰ্ম্মাধীপ 'এই কৰ্ম্ম প্রবাহকে নিয়ন্ত্রিত করেন না। আস্তিক্ল্য হিন্দুসিদ্ধাৰে অনাদি-অবিদ্যাকৃত কৰ্ম্মপ্রবাহ স্বীকৃত হইয়াও, তাহাতে, এই কৰ্ম্মাধীপুেরও প্রতিষ্ঠা হইয়াছে। আর নিখিল/ষ্টির শ্ৰীজগন্নাথের রথযাত্র ব্যক্ত হয় না । 6 ed: এই অনাদি-অবিদ্যাকৃত কৰ্ম্ম-প্রবাহের নিয়ন্ত যিনি, জীবের সকল কৰ্ম্মের পরিণতি র্যাহার ভক্তিতে ও নিবৃত্তি যাহার চরণে, হিন্দু তাহাকেই ঐ জগন্নাথ বলিয়া জানেন। এই জগন্নাথই, বস্তুতঃ, বিশ্বরূপ। কুরুক্ষেত্রে মঞ্জুন থে অপরূপ রূপ দেখিয়া গতমোহ ও বীতশোক হইয়াছিলেন, সেই রূপই এই জগন্নাথের স্বরূপ। সে রূপ সদগুরুদত্ত দিব্যচক্ষু লাভ করিলে দেখা যায়, কিন্তু ভাষায় তার বর্ণন হয় না। ভাস্কর্য্যে বা চিত্রে তাহকে প্রকাশিত করে, সাধ্য কার? যাহাকে বায়ুর্ঘমোইগ্নিৰ্বরুপঃ শশাঙ্কঃ প্রজাপতিত্ত্বং প্রপিতামহশ্চ । নমো নমস্তেহস্তু সহস্ৰকৃত্বঃ পুনশ্চ ভূয়োহপি নমো নমস্তে। —বলিয়া প্রণাম করিতে হয় ; নম পুরস্তাদথ পৃষ্ঠতস্তে নমোহস্তু তে সৰ্ব্বত এব সৰ্ব্ব । অনন্ত বীৰ্য্যামিতবিক্ৰমত্ত্বং সৰ্ব্বং সমীপ্লোষি ততোহসি সৰ্ব্বঃ ॥ —বলিয়া র্যাহার স্তুতি করিয়াও কিছুই বলা হইল না, এমনই মনে হয় ; সেই বিশ্বরূপের প্রতিরূপকে কোন হাতেগড় মূৰ্ত্তিতে ব্যক্ত করিতে পারে ? এই জন্যই শ্ৰীজগন্নাথের মূৰ্ত্তিরচনায় প্রবৃত্ত হইয়৷ বিশ্বকৰ্ম্ম। আপনি হার মানিরাছেন বলিয়। হিন্দুর প্রবাদে বলে। শ্ৰীক্ষেত্রের স্তাড়া নূলে দারুমূৰ্ত্তিটা সেই নিফল প্রয়াসের প্রত্যক্ষ পূতচিন্তু স্বরূপ যুগযুগান্ত বাহিয়া আমাদের নিকটে আসিয়া পৌছাইয়াছে। এই যে রথখানি প্রতিবৎসর আষাঢ়ের