পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৫৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৬২ ফলতঃ ধৰ্ম্মের লক্ষণ নির্দেশ করিতে যাইয়া, মনু যে বেদের উল্লেখ করিয়াছেন, তাহা যে, আমরা আজ যাহাকে বেদ বলিয়৷ জানি, ঠিক সেই বস্তু নয়, ইহা অস্বীকার করা একরূপ অসন্তব বলিয়াই বোধ হয়। প্রথমতঃ লোকে যাহাকে সচরাচর বেদ বলিয়া জানে, সেইবেদই আপনাকে ধর্মের পরম বস্তু , ব্রহ্মবিদ্যা-লাভের একসূত্র সোপান বলিয়া প্রতিষ্ঠিত করিতে সংকুচিত হইয়াছে। উপনিষদ সকল বেদান্তর্গত বলিয়া, বেদের মতনই প্রামাণ্য । আর এই উপনিষদই ঋগ্বেদ দিকে অপর অর্থাৎ নিকৃষ্ট বিদ্যা বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। মুণ্ডকোপনিযদে আছে— শৌনকে হ বৈ মহাশলোহঙ্গিরসং বিধিবদুপপন্ন; পপ্রচ্ছ। কম্মিন্ন ভগবে বিজ্ঞাতে সৰ্ব্বমিদং বিজ্ঞাতং ভবতি । তস্মৈ স হোবাচ। দ্বে বিদ্যে বেদিতব্য ইতি হু স্ম যদ ব্রহ্মবিদে বদস্তি পরী চৈবাপর চ ॥ তত্ৰাপর ঋগ্বেদে যজুৰ্ব্বেদঃ সামবেদোহথর্ববেদ শিক্ষ কল্পে ব্যাকরণং নিরীক্তং ছন্দো জ্যোতিষমিতি । অথ পরা যয়৷ তদক্ষরমূধিগম্যতে ॥ মহাগৃহস্থ শৌনক অঙ্গিরসের সমীপে যথাবিধি উপস্থিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন;– হে ভগবন, কি জানিলে এই সমস্ত জানা যায় ? তিনি তঁহাকে বলিলেন। ব্রহ্মবিদের ইহ বলেন যে দুই বিদ্যা জ্ঞাতব্য ; এক পরীবিদ্যা অন্ত অপরা ផ្ស ইহাদের মধ্যে ঋগ্বেদ, যজুৰ্ব্বেদ, সামবেদ, অথৰ্ব্ববেদ, শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ, নিরক্ত, ছন্দ, জ্যোতিষ (অর্থাৎ যড়ঙ্গ সমুদায় বেদ) অপর বা নিকৃষ্ট বিদ্যা; গক্ষান্তরে যাহা দ্বারা সেই অক্ষয় পুরুষকে জানা যায়, তাহাই পর व॥ ८वठे विपji ! সুতরাং মোক্ষসাধনই যদি ধর্মের লক্ষণ হয়, এবং সেই অক্ষয় পুরুষকে না জানিলে যদি বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ষ, পৌষ, ১৩১৯ মোক্ষলাভ অসাধ্য হয়, আর শ্রুতি স্মৃতি সকলেরই এই শেষ সিদ্ধান্ত—তাহা হইলে ঋগ্বেদাদিকে ধর্মের প্রতিষ্ঠা বলিয়া গ্রহণ করা কিছুতেই সম্ভব হয় না। এ কথা যে আমরাই অঞ্জ বলিতেছি তাহা নহে। যেমন শ্রুতি, সেইরূপ স্মৃতিও এই কথাই বলিয়াছেন। শরশয্যাশায়ী মহাশূর ও মহাপ্রাজ্ঞ ভীষ্মদেব যুধিষ্ঠিরের নিকট মন্ত্রর ন্যায় “যুষ্ম বেদবোধিত-ধৰ্ম্মে”র লক্ষণই বর্ণনা করিয়াছিলেন। আর ময়ুর নির্দিষ্ট ধৰ্ম্মের লক্ষণে বেদকে যেমন প্রচলিত ঋগ্বেদাদির অর্থেই লোকে সচরাচর গ্রহণ করিয়া থাকেন, যুধিষ্ঠিরও তাহাই করিয়াছিলেন। কিন্তু এইরূপ অর্থ করিলে ধয়ের নিত্যত্ব রক্ষা করা যে অসাধ্য হইয় উঠে, যুধিষ্ঠির ইহা স্পষ্টই লক্ষ্য করেন। তাই তিনি ভীষ্মকে পুনরায় এই প্রশ্ন করেন— (মহাভারত শান্তিপৰ্ব্ব-মোক্ষধৰ্ম্ম ৬০ অধ্যায়) ণে ধৰ্ম্ম প্রভাবে প্রাণিগণের উৎপত্তি, স্থিতি ও বিনাশ হুইতেছে, কেবল শাস্ত্রপাঠ দ্বারা কখনওই তাহা জ্ঞাত হওয়া যায় না ; অবিপন্ন ব্যক্তির ধৰ্ম্ম যেরূপ, বিপন্ন ব্যক্তির ধৰ্ম্ম সেই রূপ নহে। আপদ, অসংখ্য, সুতরাং আপিন্ধৰ্ম্মও বিবিধ প্রকার । , অতএব শাস্ত্রপাঠ দ্বার সমুদা আপদ্ধৰ্ম্ম কিরূপে বোধগম্য হইতে পারে। শাস্ত্রে সাধুদিগের আচারকে ধৰ্ম্ম ও ধৰ্ম্মানুষ্ঠান-পরতন্ত্র ব্যক্তিকে সাধু বলিয়া নির্দেশ করা হইয়াছে। এই লক্ষণ দ্বার ইহ স্পষ্ট প্রতীতি হইতেছে যে, ধৰ্ম্ম ও সাধু ইহারা পরস্বরসাপেক্ষ ; স্বতরাং উহা দ্বারা কে সাধু ও ধৰ্ম্ম কি, তাহা নিরূপণ করা যায় না। দেখুন শূদ্ৰগণ মুমুঙ্গু হইয়া ধৰ্ম্ম-বৃদ্ধির নিমিও বোস্তাদি শ্রবণ করাতে উদ্ধাদের অধৰ্ম্ম হইতেছে এবং অগস্ত্যাদি মহর্ষিগণ যজ্ঞার্থ বিবিধ হিংসাকর কার্য্যের অনুষ্ঠান করান্তেও তাছাদের ধৰ্ম্ম সঞ্চয় হইতেছে।