পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৫৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯ম সংখ্য } সুতরাং ধৰ্ম্ম কিরূপ নির্ণয় করা যাইতে পারে ? আর fেধুন, বেদ সমুদ্ৰায়ের প্রতি যুগের হ্রাস হইয়৷ থাকে, তন্নিবন্ধন সতী, ত্রেত, দ্বাপর ও কলি এই চারিযুগে পৃথক পৃথক ধৰ্ম্ম অনুষ্ঠত হয়। এইরূপে যখন কালভেদে বৈদিক কৰ্ম্মের ভিন্নভােব হইল তখন বেদবাক্য যে যথার্থ বলিয়া পরিগণিত হয়, ইহা কেবল লোকরঞ্জন মাত্র। বেদ হইতে সমুদায় স্মৃতি সমুদ্ভুত হইয়াছে, অতএব যদি বেদশাস্ত্র অপ্রমাণ হইল ; তবে তৎসস্থত স্মৃতিশাস্ত্রকে অপ্রমাণ করতে হইবে। আবার অনেক সময় এইরূপ ঘটিয়া থাকে যে, ধাৰ্ম্মিকের কোন ধর্মের অনুষ্ঠানে প্রক্তি হইলে বললন, দুরায়ারা উইlর যে অশে ব্যাঘাত উৎপাদন করে সেই অশ সেই অবধি একেবারে উন্মুলিত হইয়। বায়। সুতরাং ধৰ্ম্ম-তত্ত্ব নির্ণয় করা নিতান্ত সহজ নহে । ফলতঃ আমরা অবগত থাকি ব| না থাকি এবং অন্য কর্তৃক উপষ্টি হইয়াও বুঝিতে পারি বা না পারি ধৰ্ম্মতত্ত্ব যে ক্ষুরধার অপেক্ষাও সুক্ষ্ম এবং পৰ্ব্বত অপেক্ষাও গুরুতর তাহার আর সন্দেহ নাই। যম,দি ধৰ্ম্ম প্রথমত গন্ধৰ্ব্বনগরের ন্যায় অদ্ভূতরূপে লক্ষিতৃ হয়, কিন্তু যখন পণ্ডিতেরা উহাকে অনিত্য বলিয়া পধ্যালোচনা করেন, তখন তাহদের উৎ নিতাপ্ত তুচ্ছ বলিয়া বোধ হইঃ থাকে। সমুথ্যের, গোসমূহের জল পনার্থ ক্ষুদ্র খাত ও ক্ষেত্রে জল সেচন করিবার নিমিত্ত কৃত্রিম নদী প্রস্তুত ধরিলে যেমন ঐ সমুদয় ক্রম ক্ৰমে শুষ্ক হয়, তদ্রুপ বদসেবিত ধৰ্ম্ম যুগে যুগে ক্ষয় প্রাপ্ত হইয় কলিযুগে একেবারে নিঃশেষিত হইয়া যায় । অসাধু ব্যক্তির লোকের অগ্নিহোত্ৰাদি কুধ্যে সমাধান, বেতন গ্রহণ সহকারে অধ্যাপণ। কাণ্য সম্পাদন ও অন্ত,স্ত কাৰ্য্য সাধনের নিমিও মিথ্য আচার অবলম্বন করিয়া থাকে'। সাধুব্যক্তিরা যাহা ধৰ্ম্ম বলিয়৷ কীৰ্ত্তন করেন, মূঢ় ব্যক্তির তাহ প্ৰলাপ বোধ করিয়া সাধুদিগকে উন্মত্ত বলি? অবঞ্জ করে। দেখুন, দ্রোণণি মহাত্মারাও স্বধৰ্ম্ম পরিত্যাগ পূর্বক ক্ষত্ৰধৰ্ম্ম আশ্রয় করিয়াছিলেন ; অতএব সৰ্ব্বজনহিতকারী আচার কুত্ৰাপি ব্যবহৃত হয় না। কোন কোন ক্ষত্ৰিয় ব্রাহ্মণ-আচার অবলম্বন পুর্বক ক্ষত্রধর্মচারী ব্রাহ্মণকে নিলা করেন এবং কোনও কোনও ব্রাহ্মণে ব্ৰহ্মধৰ্ম্ম ও ক্ষত্রিয়ধৰ্ম্ম উভয়ই বেদের কথা ფ&ტ বৰ্ত্তমান থাকে। অতএব সৰ্ব্ব প্রকারের আচারেরই बाडिकान्न पूछे श्रडtछ्।" আর এই সকল বিষয়ের আলোচনা করিয়া, মহামতি যুধিষ্ঠর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন ধে— “শ্রীতি বা স্মৃতি প্ৰম্মে ত্র নির্ণয়ক নহে।” অতএব আমরাই যে আঙ্গি কালি বেদাদির প্রামাণ্য সম্বন্ধে সন্দিহান হইয়া পড়িতেfছ, তাহা নহে। এরূপ সন্দেহ সৰ্ব্বদাই চিন্তাশীল সুধীগণের চিত্তকে চঞ্চল করিয়াছে। গামরাই যে কেবল বিদেশীয় বিদ্য। শিখিয়া, বিজাতীয় সাধনার প্রভাবে, এই সকলের প্রাচীন প্রামাণ্য অস্বীকার করিতেছি তাহা নহে। পুরাকালেও এ প্রামাণ্য অস্বীকৃত হঠয়ছিল এবং তাহার। যেমন এরূপ সন্দেহে আন্দোলিত হইয়াও, বেদাদির প্রাধাণ্যের একটা সমী চন মীমাংসা করিয়াছিলেন, আমাদিগকেও সেইরূপই করিতে হইবে, নতুবা ধৰ্ম্মকে বঁচোইয়া রাখা অসাধ্য হইয়া উঠিবে। এই জন্যই বেদাদির সত্য অর্থ কি, তার মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন ; আর এ ক্ষেত্রে আমাদের পরম সৌভাগ্যের কথা এই যে, ভারতের প্রচানমীমাংসকগণ আপনাদের অসাধারণ প্রতিভা ও আলোকসামান্ত সাধন-অভিজ্ঞতার সাহায্যে এই মীমাংসার পথ অনেকটা পরিষ্কার করিয়া রাপিয়া গিয়াছেন। র্তাহাদের পবিত্র পদাঙ্কের অমুসরণ করিয়া চলিলে, আমরাও ক্রমে এই সকল বিষম যুগসমস্তার একটা সমীচিন মীমাংসা যে করিতে পারিব না, এমনও মনে হয় না।