পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৫৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( ጓo থাকে না ; চক্ষে তাহাকে দেখা যায় না । দ্বিতীয় অবস্থায় পদার্থ চক্ষুগ্রহ হইলেও তরল পদার্থের যে সাধারণ আকার তাহ ছাড়া সে নিজস্ব কোনও বিশেষ আকার ধারণ করিতে পারে না। তরলাবস্থায় পদার্থের আকার চঞ্চল থাকে, স্থৈৰ্য্য লাভ করে না । পদার্থবিশেয সৰ্ব্বাপেক্ষ গাঢ়তম কঠিনাবস্থা লাভ করিলেই তার মধ্যে কোনও স্থির ও স্থায়ী রূপ ফুটিয়া উঠিবার অবসর প্রাপ্ত হয়। আমাদের আন্তরিক রসেরও এইরূপ তিনটী অবস্থা আছে। জড়পদার্থের বায়বীয় বা গ্যাসাস ( gaseous ) অবস্থার মত, আমাদের বাৎসল্যমধুৰ্য্যাদিরও একট। অতিশয় হাল্কা, বায়বীয় অবস্থা আছে। এ অবস্থায় রসের সাড়া মাত্র অন্তরে অনুভব করা যায়, কিন্তু তাহাকে ভাল করিয়৷ ধরিতে ছুইতে পারা যায় না। এ অবস্থার রস নিতান্ত ছায়ার মত, অশরীরী হইয়া থাকে। বিদ্যুৎচমকের ন্যায় অন্তরে ফুটিয়া উঠিয়া, আবার তখনই নিভিয়া যায়। এ অবস্থায় তার রূপের প্রকাশ হয় না। জড়পদার্থের তরলাবস্থার ন্যায় আমাদের অন্তরের এই সকল রসেরও একটা তয়ল অবস্থা হয়। এই অবস্থায় রসকে আস্বাদন করা যায় বটে, কিন্তু ভাল করিয়া প্রত্যক্ষ করা যায় না। এই অবস্থাতেই রস ব্যভিচারী ব্যবহার করিয়া থাকে। এক রস অপর বিরুদ্ধ রসের মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে আপনাকে হারাইয়া ফেলে। অপস্মার বা উন্মাদ রোগগ্রস্ত লোকের মধ্যে এইরূপ ব্যভিচারী রসের খেলা সৰ্ব্বদাই দেখিতে পাওয়া যায়। হাদিতে হাসিতে ইহার কাদিতে আরম্ভ বঙ্গদর্শন [ ১২শ শৰ্ম, পৌষ, ১৩১৯ করে। কাদিতে কঁদিতে আবার হঠাৎ হো হো করিয়া হাসিয়া উঠে। ক্ষণে ভয় ক্ষণে অভয় ; ক্ষণে উচ্ছসিত অম্বুরাগ, ক্ষণে তীব্র বিরাগ ; এইরূপে প্রবল ঘূর্ণিবায়ুতাড়িত জলরাশির ন্যায় ইহাদের চিত্ত যুগপৎ বিবিধ বিরোধী ভাবের তাড়নায় বিক্ষোভিত হইয় উঠে । এই তরল অবস্থাতেও রস আপনার রূপকে ফুটাইয়া তুলিতে পারে না। জড়পদার্থ যেমন কাঠিন্তলাভ করিলেই বিশেষ আকার বা রূপ ধারণ করিয়া থাকে, অন্তরের রসও সেইরূপ স্থির ও গভীর হইলেই আপনার নিজস্ব রূপটকে ফুটাইয়া তুলিতে পারে। সুতরাং এ সকল রসের রূপ দেখিতে হইলে, যে ক্ষেত্রে ইহারা অনন্যসাধারণ স্থৈৰ্য্য ও প্রগাঢ়তা লাভ করে, সেখানেই তাহদের নিজ নিজ রূপের অন্বেষণ করিতে হয় ; যেখানে সেখানে, যখন তখন, এ রূপের সাক্ষাৎকার লাভ সন্তবে না । এই সকল রস আমাদের অন্তরেক্ট জন্মে, অন্তরেই বাড়িয়া উঠে, অন্তরেই বাস করে সত্য। কিন্তু তাহাদের নিজ নিজ রূপ আমাদের দেহেতে ফুটিয় উঠে। বাহিরের আলোকের সঙ্গে আমাদের চক্ষের গোলকের এমন একটা সম্বন্ধ আছে যে, আলোক । ফুটিলেই, গোলকে তার প্রমাণ-পরিচয় পাওয়া যায়। সেইরূপ আমাদের অন্তরের রসের সঙ্গে একদিকে আমাদের স্বায়ুমণ্ডলীর ও অন্যদিকে এই স্বায়ুমণ্ডলীর ভিতর দিয়াই, আমাদের শরীরের পেশিসমূহের একটা অতি ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ রহিরাছে। অভরে কোনও রসের সঞ্চার হইবা মাঞ্জই,