পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৫৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯ম সংখ্যা ; যায় কি না, তাহীও বল সংজ নহে। আর এই জন্ত জননীর সন্তানবাংলল্যের মধ্যে অন্ততঃ সন্তান ভূমিষ্ঠ হইবার পরেও কিছুকাল পর্য্যন্ত যে একট। শারীরিক দিক ও জাগিয়৷ থাকে, ইহা অস্বীকার করা অসাধ্য। সুতরাং জননীর অন্তরের বাৎসল্যরস যখনই বিশেষ গাঢ়তা লাভ করে, তখনই যে তাহা তার মনকে ছাড়াইয়া, দেহকে পর্য্যন্ত যাইয়৷ সহজেই অধিকার করিয়৷ বসে, এবং ঠার বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মধ্যে আপনার নিজস্ব মূৰ্ত্তিটকে ফুটাইয়া তোলে, ইহা কিছুই বিচিত্র নহে। জননী ঘুমন্ত শিশুকে কোলে লইয়া, তার সুকুমার মুখখানিতে আপনার চক্ষু দুট নিবদ্ধ করিয়া যপন আপনার মাভাবে একেবারে বিভোর হইয় উঠেন, এবং র্তার সঙ্গে সঙ্গে যখন তার মুখে, চক্ষে, প্রত্যেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গে, এমন কি প্রতি লোমকূপের মধ্য দিয়া এই অপূৰ্ব্ব বাৎসল্যরস প্রবাহিত হইতে আরম্ভ করে, ও সেই রসের আবেগে যখন তার পীনপয়েধিরযুগল হইতে আপন হইতে ক্ষীরধারা ছুটিয়া সন্তানের চক্ষে মুখে যাইয়া পড়িতে আরম্ভ করে,-- সন্তানবতী জননীকে এ অবস্থায় যে দেখিয়াছে, সে-ই বাৎসল্যরসের নিজস্ব রূপের সাক্ষাৎকার লাভ করিয়াছে। বাৎসল্যরসের পীড়নে জননীর স্বায়ুমণ্ডলে যে সকল বিপ্লব উপস্থিত হয়, তার চক্ষের মুখের, উরসের স্বায়ুকল রসের রূপ ¢ሳ © ও পেশিসমূহ যে বিশেষ ক্রিয়া প্রকাশ করিয়া থাকে, এ গুলিকে লক্ষ্য করিয়া, এই ক্রিয়ার ছবিকে অন্তরে ধারণ করিয়া, যে চিত্রকর বা ভাস্কর তাহাকে চিত্রপটে বা মর্থরখণ্ডে ফুটাইয়া তুলিতে পারেন, তিনিই সত্য মাতৃমূৰ্ত্তি রচনায় সিদ্ধি লাভ করেন। সন্তানের মুখ ধ্যান করিতে করিতে যে জননীর চক্ষে অসীম ত্যাগের অটল সংকল্প, মুপে ভাগবতী করুণার কোমল আভা ফুটিয়া ন উঠে, এই কারুণ্যে যাহার সর্বাঙ্গ পুলকে পরিপূর্ণ না হয় এবং তারই সঙ্গে সঙ্গে ক্ষীরভারে স্তনযুগল ষেন ফাটিয়া পড়িতেছে, এমনি অবস্থা না ঘটে,—ঠার মধ্যে বাংসল্যের রূপ প্রকাশিত হয় না, হইতেই পারে না। এই জন্য র্যারা আজি কালিকার দিনে,একটা বিমানচারিণী ভাবুকতার মোহে পড়িয়া, বাৎসল্যের এই সত্য, শারীর ধৰ্ম্মগুলিকে অগ্রাহ করিয়া, কেবল একটু চাহনি বা একটা হাবভাব কি পোজের ( P.se ) সাহায্যে-ক্ষীণপয়োধর ও লবুনিতম্ব পবাহারী কৃশাঙ্গিণীগণকে শাড়ী পরাইয়া, ছেলে কোলে দিয়া, মাতৃমূৰ্ত্তি অঙ্কিত করিবার চেষ্টা করিতেছেন, তাদের এ চেষ্ট৷ যে একান্ত শস্যকে আশ্রয় করিয়া নিতান্ত নিষ্ফল হইয়। যাইতেছে, ইহা আর বিচিত্র কি ! শ্রীবিপিনচন্দ্র পাল ।