পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৫৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপাধ্যায়ের স্বাদেশিকত আমাদের বর্তমান স্বদেশিকতার আদর্শ কতটা পরিমাণে যে আমরা ব্ৰহ্মবান্ধব উপাধ্যায় মহাশয়ের নিকট হইতে পাইয়াছি, দেশের লোকে যেন সে কথা ক্রমে ভুলিয়া যাইতেছে। নতুবা এত লোকের স্মৃতিকে জাগাইয়া রাখিবার জন্য কত চেষ্ট হইতেছে, কিন্তু উপাধ্যায় মহাশয়ের নামে একটা বাৎসরিক স্মৃতি সভার আয়োজন পৰ্য্যন্ত হয় না কেন ? উপাধ্যার সন্ন্যাসী ছিলেন। কিন্তু আমাদের বড় বড় সন্ন্যাণীদের যেমন শিস্যসেবক থাকে, উপাধ্যায়ের সেরূপ শিস্য-সেবক কেহ ছিল না। সে আকাঙ্ক্ষাও উপাধ্যায়ের ছিল বলিয়া মনে হয় না। তার সন্ন্যাস অন্য ধরণের ছিল। গীতা যাহাকে সৰ্ব্বকৰ্ম্মম্যাস বলিয়াছেন, উপাধ্যায়ের সন্ন্যাস সে জাতীয় ছিল। আপনার বলিতে সংসারে তিনি কিছুই রাখেন নাই। আজন্ম ব্ৰহ্মচৰ্য্য সাধন করিয়া, তিনি এমন একটা অবস্থা লাভ করিয়াছিলেন, যাহাতে র্তার অহং-জ্ঞানটা ব্যক্তিগত জীবনের সংকীর্ণতর সম্বন্ধ সকলকে একান্তভাবে অতিক্রম করিয়া সমগ্র বিশ্বে ছাইয়া পড়িয়াছিল। আমাদের আধুনিক কৰ্ম্মনায়কগণের মধ্যে উপাধ্যায়ের মতন আর কেহ এতটা পরিমাণে সৰ্ব্বভূতে আত্মদৃষ্টি লাভ করিয়াছিলেন বলিয়া জানি ন৷t সন্ন্যাসের অন্তরালে অনেক সময় একটা বুহুরী লুকাইয় থাকে। উপাধ্যায়ের অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি ছিল। কিন্তু তার প্ৰাণটা অতি বড় হইলেও, কোনও মতেই তাহাকে প্রচলিত অর্থে “বুজুর্গ" বলা যাইত না। অতিলৌকিক কোনও কিছুর দাবী তিনি কখনও করেন নাই। এমন কি আপনি সংসার করেন নাই বলিয়া, সংসারী লোকের প্রতি র্তাহাকে কখনও কটাক্ষপাত করিতেও দেখি बोडे । সন্ন্যাসের সঙ্গে সচরাচর সমাজ-জীবনের একটা বিরোধ জাগিয়া উঠে। সন্ন্যাস লইয়া লোকে প্রায়ই সংসার ছাড়িয়া চলিয়া যায়। উপাধ্যায় সন্ন্যাসী হইয়াও সংসারত্যাগী হন নাই। ফলতঃ তার মধ্যে চিরদিনই এমন একটা প্রবল ও সজীব সমাজানুগত্যের ভাব দেখিয়াছি, যার সঙ্গে আমাদের মধ্যযুগের হিন্দুয়ানার সন্ন্যাসের আদর্শের কোনও প্রকারের আন্তরিক সঙ্গতিসাধন কখনও সম্ভবপর বলিয়া মনে হয় নাই। আমাদের সন্ন্যাসীরাও কোনও কোনও বিষয়ে একান্তভাবেই লৌকিকাচারের বগুত৷ স্বীকার করিয়া চলেন, সত্য। কিন্তু উপাধ্যায়ের সমাজানুগত্যের সঙ্গে ইহঁদের সমাজামুগত্যের একটা জাতিগত প্রভেদ ছিল বলিয়াই মনে হয়। আমাদের প্রাচীন মতের সন্ন্যাসিগণ লোকসংগ্ৰহার্থে, কৰ্ম্মাসক্ত জনগণের বুদ্ধিভেদ যাহাতে না জন্মায়, তারই জন্য, লৌকিকাচারের অল্পবৰ্ত্তিত করিয়া চালন। উপাধ্যায়ের সমাজামুগত্যের অন্তরালে কোনও লোকসংগ্রহেচ্ছ। কখনওই দেখিতে পাই নাই। তার অকৈতব স্বদেশ