পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৫৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯ম সংখ্যা ধূলামাট চিরদিন গায়ে লাগিয়া থাকিবে না। একদিন না।একদিন এগুলি আপন৷ হইতেই ধুইয়। মুছিয়া পরিষ্কার হইয়া যাইবে । এ বিশ্বাস তাদের আছে বলিয়া কাহারও প্রতি র্তাহীদের পেমের বা আস্থার বী শ্রদ্ধার কোনও অল্পত হয় না । উপাধ্যায়ও সেইরূপ এই ভারতবর্ষ আজি কি ভাবে পড়িয়া আছে,তাহার প্রতি দুকূপাত করিতেন না। ভারতবর্ষ সত্য বস্তুটা কি, ইহাই জানিয়াছিলেন ও ধরিয়াছিলেন বলিয়া তার বর্তমান দুৰ্গতিতে বা হীনতায় বিন্দু পরিমাণেও তার চিন্ত চঞ্চল হইয়া উঠিত না। এ মোহ যে দুদিনের, এ মায়া যে ক্ষণস্থায়ী, এ দুর্দশ যে শারদ প্রভাতের মেঘাড়ম্বরের স্তায় আপন হইতে কালক্রমে কাটিয়া যাইবেই যাইবে;–এ বিশ্বাস উপাধ্যায়ের মধ্যে যেমন দেখিয়াছি, এমন আর কাহারও মধ্যে দেখি নাই। আর উপাধ্যায়ের মধ্যে যে রক্ষণশীলতা দেখা যাইত, তাহা এই অটল বিশ্বাসেরই ফল। স্বদেশের সভ্যতার ও সাধনার, স্বদেশের সমাজ-প্রকৃতির ও লোকপ্রকৃতির উপরে উপাধ্যায়ের যেরূপ আস্থা ছিল, এমন আস্থা আমাদের মধ্যে আর কাহারও ছিল বলিয়া বিশ্বাস হয় না। আর এই খানেই আমাদের বর্তমান স্বাদেশিকতার আদর্শ পূৰ্ব্বযুগের স্বদেশিকতার আর্গ ইতে পৃথক হইয়া পড়ে। চল্লিশ বৎসর পূৰ্ব্বে আমাদের ইংরেজিশিক্ষিত সমাজে যে প্যাট্রিটিজম জাগিয়া উঠিয়াছিল, তার মধ্যে স্বদেশের সভ্যতা ও সাধনার প্রতি এই গভীর শ্রদ্ধা ও স্বদেশের শক্তিসাথ্যের উপরে এই অবিচলিত আস্থা উপাধ্যায়ের স্বদেশিকতা db〉 কখনও দেখিতে পাওয়া যায় নাই। এ বস্তু আমাদের সে'কালের সমাজ-সংস্কারক দিগের মধ্যেও ছিল না, রাষ্ট্রসংস্কারক দলেও পাওয়া যাইত না। আর এই জন্যই প্রথম যুগের সমাজসংস্কার-প্রয়াস ও রাষ্ট্রীয়-কৰ্ম্মচেষ্টা, উভয়ই একান্ত বহিন্মুখীন ও বিদেশভিমুখীন ছিল। সুতরাং সে সময়ে আমরা আমাদের , সমাজ-জীবন, ধৰ্ম্মসাধন, কৰ্ম্মচেষ্টা, রাষ্ট্রীয়-আকাঙ্ক! ও আদর্শ-স্বাদেশিকতার সকল উপকরণগুলিকেই বিদেশীয় সভ্যতা ও সাধনীর দাড়িপাল্লায় তুলিয় তৌল করিতে যাইতাম । আর পরের মাপে যে ব্যক্তি সৰ্ব্বদা এরূপভাবে আপনাকে ওজন করিতে যাইবে, তার আত্মজ্ঞানের ক্ষৰ্বি কদাপি সন্তবে ন। এই কারণে আমাদের প্রথম যুগের সমাজসংস্কার ও রাষ্ট্রসংস্কার সকলপ্রকারের স্বাদেশিক কৰ্ম্মচেষ্টাই আমাদিগের মধ্যে একটা গুরুতর আত্মবিস্মৃতি জন্মাইয়া দেয়। এবং এই সাংঘাতিক আত্মবিস্মৃতি হইতে একটা পরমুখাপেক্ষিতার অভ্যাস জন্মিয়৷ গিয়া, আমাদের সর্ববিধ শক্তিলাভের আকাঙ্ক্ষা ও আস্ফালনকেই আমাদের আভ্যন্তরীণ দুৰ্ব্বলতা-বৃদ্ধির একটা প্রবল ও নূতন কারণ করিয়া তুলে প্রচলিত সমাজসংস্কার চেষ্টা এবং রাষ্ট্ৰীয় আন্দোলনের এই বিষময় ফল প্রত্যক্ষ করিয়া, উপাধ্যায় এই উভয়বিধ কৰ্ম্ম-চেষ্টারই তীব্র প্রতিবাদ করিতে আরম্ভ করেন। প্রচলিত রাষ্ট্রীয় আন্দোলন সৰ্ব্ববিষয়ে গবর্ণমেণ্টের মুখাপেক্ষী হইয়া, দেশের রাষ্ট্রশক্তিকে আত্মস্থ ও পরিপুষ্ট