পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৫৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০ম সংখ্যা ] নন্দনাচার্য্যের ५ श् নিত্যানন্দের আগমনের কয়েক দিন পূৰ্ব্বে নিমাই ভক্তগণের সহিত একত্র উপবিষ্ট আছেন, এমন সময় হঠাৎ বলিয়া উঠিলেন “বন্ধুগণ দুই তিন দিনের মধ্যেই আমরা এক মহাপুরুষের দর্শন লাভ করিব।” নিত্যানন্দের আগমনের দিন কহিলেন “গ তরাত্রিতে আমি এক স্বপ্ন দর্শন করিয়াছি । দেখিলাম আমার দ্বারদেশে এক তালধ্বজ রথ ; তৎপশ্চাতে এক বিশালকায় পুরুষ, তাহার স্কন্ধে এক বিপুল স্তম্ভ, বাম হস্তে বেতবাধ। এক কাণ কুম্ভ, তাহার পরিধান নীলবসন, মস্তকে নীলবস্ত্রের আবরণ, বামকর্ণে বিচিত্র কুণ্ডল, তাহীর গতি চঞ্চল ; দ্বারদেশে উপস্থিত হইয়। তিনি বারংবার জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন ‘এই বাড়ী কি নিমাই পণ্ডিতের ? আমি সেই ভীষণ মূর্ষিদর্শনে ভীত হইয় তাহার পরিচয় জিজ্ঞাসা করিলে তিনি কহিলেন ‘আমি তোমার ভাই, কাল আমাদের পরিচয় হইবে।” এই কথা বলিতে বলিতে নিমাইর ভাবান্তর লক্ষিত হইল । তিনি হলধর ভাবে আবিষ্ট হইয়া “মদ আন, মদ আন" বলিয়া গর্জন করিয়া উঠিলেন। তখন আৰ্য্যা তর্জা পড়ে প্রভু অরুণ নয়ন। হাঁসিয়া দোলায় অঙ্গ যেন সংকর্ষণ ॥ প্রকৃতিস্থ হইয়া নিমাই সকলকে কহিলেন “নিশ্চয়ই কোনও মহাপুরুষ নবদ্বীপে স্নাগমন করিয়াছেন । হরিদাস ও শ্রীবাস তোমরা গিয়া দেখিয়া আইস । হরিদাস ও শ্ৰীবাস সমস্ত নবদ্বীপ ভ্রমণ করিয়া কাহারও নিমাই-চরিত্র ¢brግ উদেশ না পাইয়া ফিরিয়া আসিলেন । তখন নিমাই ভক্তগণ সহ বহির্গত হইলেন এবং একেবারে নন্দনাচার্য্যের গৃহে গমন করিয়৷ তথায় নিত্যানদের তেজঃপুঞ্জ মূৰ্ত্তি দর্শন করিলেন। নিমাই ও নিত্যানন্দ পরস্পরের দিকে অনিমেষ নয়নে চাহিয়া রহিলেন। তখন শ্ৰীবাস ভাগবত হইতে আবৃত্তি করিলেন “বর্হপীড়ং নটবরবপুঃ কর্ণয়েঃ কণিকারং। বিভ্রদ বাসঃ কণক কপিশং বৈজয়ন্তীঞ্চ মালাং ॥ রন্ধন বেণোরধরমুদয়৷ পূৰ্বয়ন গোপৰ্বন্দৈবৃদারণ্যং স্বপদরমণং প্রাবিশদ গীতকীৰ্ত্তিঃ ॥” ময়ূরপুচ্ছরচিত চুড়, কর্ণদ্বয়ে কণিকার কুসুম, কৰ্ণক পিণবন্ত্র ও বৈজয়ন্তীমাল ধারণ করিয়া, নটবরবপু শ্ৰীকৃষ্ণ অধরমুধা দ্বারা বেণুৰ্বন্ধ সমূহ পরিপূর্ণ করিতে করিতে গোপগণ কর্তৃক স্ত্যুমান হইয় স্বকীয় চরণচিহ্নশোভিত বৃন্দারণ্যে প্রবিষ্ট হইলেন। শ্লোক শুনিয়া নিত্যানন্দের মূৰ্ছা হইল। নিমাই "গড়, পড়” বলিয়৷ শ্ৰীবাসকে উৎসাহিত করিতে লাগিলেন । মূৰ্ছাস্তে নিমাই সিংহনাদ করিয়া উঠিলেন এবং তাহা গুনিয়া বৈষ্ণবগণ ভয়সস্ত্রস্তভাবে “রক্ষ কৃষ্ণ, রক্ষ কৃষ্ণ” বলিয়৷ শ্ৰীকৃষ্ণের শরণ গ্রহণ করিলেন। নিত্যানন্দের ভাবোন্মাদ লক্ষ্য করিয়া গৌরের গণ্ডস্থল প্লাবিত করিয়া অশ্রুধার ছুটিল। কিন্তু নিত্যানন্দের ভাবাবেশ সহজে অপগত হইবার নয়। গড় গড়ি যায় প্রভু পৃথিবীর তলে, কলেবর পূর্ণ হইল নয়নের জলে। বিশ্বস্তুর মুখ চাহি ছাড়ে ঘনশ্বাস। অন্তরে আনন্দ ক্ষণে ক্ষণে মহা হাস ॥