পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○や সাহার যথেষ্ট পয়সা ছিল, কিন্তু সে জামাইকে সাহায্য করিতে সন্মত হইল না, সে বলিল, “আমার ত আর ঐ একটি মাত্র মেয়ে নয়, আমাকে আরও চারিটি মেয়ে পার করিতে হইবে, জামাইকে লেখাপড়া শিখাইবার জন্য সাহায্য করি, আমার এমন সাধ্য নাই।" — অগত্য মুকুন্দ পিশিমাকে ধরিয়া বসিল। পিশিমা দশটাকার তিন কেতা নোট বাহির করিয়া বলিল, “এই টাকা দিয়ে মুরারীর কেতাব কিনে ক্লিও, শুনেছি এখন তার অনেক টাকার কেতাব লাগবে । আমি বিধবা মেয়ে মাতুষ, তোমার ভাইকে পড়ানোর খরচ কোথার পাব ? আমি আর কিছু দিতে পারবে না।” পিশিমা এতদিন মুরারীকে বাড়ী রাখিয়া লেখাপড়া শিখাইয়াছে, টাকা কয়টি না লইলে তাহার ত্বপমান কর। হয়,বিশেষতঃ মুকুন্দের ন্যায় পক্ষে ত্ৰিশ টাকা উপেক্ষার বস্তু নহে। সে টাকা কয়টি লইল, কিন্তু ভ্রাতার শিক্ষার গুরু ভার সে কিরূপে বহন করিবে তাহ স্থির করিতে পারিল না। রাজুর নিকটেও সে সাহায্য চাহিতে পারিল না, ইদানীং রাজুর কাজকৰ্ম্মও মন্দ যাইতেছিল, তথাপি রাজু স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়। মুরারীর কলেজের বেতন যাহ। লাগে তাহ প্রদান করিতে সন্মত হইল । মুকুন্দ সপরিবারে এক সন্ধ্য আহার করিয়া ভ্রাতার শিক্ষার ব্যয় চালাইতে লাগিল। সংসারে বৃদ্ধ মাতা ও দুই ভাইয়ের স্ত্রী। তখন পর্য্যন্ত মুকুন্দ পুত্রমুখ দর্শন করে নাই, তাহার স্ত্রীর সন্তানবতী হইবার বয়স উত্তীর্ণ হইয়াছিল, সুতরাং পল্লীবাসিনীগণের বঙ্গদর্শন ১২শ বর্ষ, বৈশাখ ১৩.৯ ধারণা হইয়াছিল, মুকুন্দের স্ত্রী পদ্মাবতী বন্ধ্য। নাতির মুখ দেখিবার মুখ অদৃষ্টে নাই বলিয়া পৌদামিনী সৰ্ব্বদাই আক্ষেপ করিত । • - কৃষ্ণনগর সহরে আসিয়া মুরারী হঠাৎ ভয়ঙ্কর স্বদেশপ্রেমিক হইয়া উঠিল । কোথাও সভাসমিতি হইবে—যুরারী তাহার উদ্যোগ আয়োজন করিত, কোন স্বদেশহিতকর কার্ঘ্যে চাণ তুলিতে হইবে-- মুরারী চাদার খাতা হাতে লইয়া সম্ৰান্ত নগরবাসিগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরিত ; অৰ্দ্ধোদয়-যোগের সময় নবদ্বীপে বহু যাত্রীর সমাগম হইলে, মুরারী ভলণ্টিয়ার দলের কাপ্তেন হইয়া, তীর্থযাত্ৰিগণের বিবিধ অসুবিধা দূর করিবার জন্য চারিদিকে ছুটাছুটি করিতে লাগিল । কাজ খুব ভাল ও প্রশংসার যোগ্য সন্দেহ নাই ; কিন্তু ইহাতে তাহার পড়াশুনার বড় বিঘ্ন ঘটতে লাগিল । দেশহিত ও জনহিতের উৎসাহে সে ভুলিয়া গেল—তাহার দরিদ্র দাদ। সপরিবারে এক সন্ধ্যা অ{হার করিয়৷ তাহার শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করিতেছে। দশে মুরারীর খুব প্রশংসা করিতে লাগিল বটে, কিন্তু কেবল দশের প্রশংসা সঞ্চয় করিয়া পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায় না ; একজামিন পাশ করিতে হইলে যথারীতি প্রশ্নের • উত্তর লিখিতে হয়, এবং নিভুল উত্তর লিখিতে হইলে পাঠ্য পুস্তক অধ্যয়ন করা আবশ্যক। মুরারী সময়াভাবে অধিকাংশ পাঠ্য পুস্তক খুলিবার ‘ফুরসৎ' পাদ্ভূত না। নির্দিষ্ট সময়ে গেজেটে এল এ পরীক্ষার ফল বাহির হইল, কোনও