পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০ম সংখ্যt } গোল হইবার আশঙ্ক। আর থাকে না। আর তখন রসের রূপ যে নিতান্ত নিরাকার হইতেই পারে না, এ সিদ্ধান্তটাকেও ঠেলিয়া ফেলা সস্তব হয় কি না সন্দেহ । আমার পূর্ব প্রবন্ধের মুখবন্ধে ভালবাসার আকার বা রূপ সম্বন্ধে যে কথাটা তুলিয়াছিলাম, তাহাকে আর একটু বিশদ করিবার জন্ত, এখানে এতগুলি কথা বলা হইল। এমন সোজা কথাটা যে কেহ গোলমেলে ভাবে বুঝিবেন, বা বুঝিতে পারেন, ইহা তখন ভাবি নাই, নতুবা সেইখানেই ভালবাসা প্রভৃতি রসের সম্বন্ধে রূপ-কথাটা ব্যবহার করা যে অসঙ্গত নয়, ইহার আলোচনা করিতাম। আমি যদিও রসের রূপ কথাটা ব্যবহার করিয়াছি, আমাদের দেশের রসশাস্ত্রে এতদপেক্ষ একটা বেশি গুরুতর শব্দ প্রযুক্ত হইয়াছে। তার খোলাখুলি ভাবে রসের মূৰ্ত্তির কথাই বলিয়াছেন। সঙ্গীত সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন রাগ-রাগিণীর মূৰ্ত্তির কথার উল্লেখ আছে। রস-শাস্ত্রে রস-মূৰ্ত্তির কথা শুনিতে পাওয়া যায়। আর সর্বশ্রেষ্ঠ রস-শাস্ত্র যে ভক্তিশাস্ত্র, তাহাতে ভক্তির উপজীব্য ভগবানকে “নিখিলরসামৃতমূৰ্ত্তি” বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। এ মুৰ্ত্তি সাকার, অর্থাৎ ইন্দ্রিয়গ্রাহ নহে। নিরাকার অর্থাৎ সৰ্ব্ববিশেষণশূন্তও কিন্তু ইহা চিন্মুক্ত। মহাপ্রভু কাশিধামে প্রকাশায়দ স্বামীর সঙ্গে বিচারে বলিয়াছেন— ব্ৰহ্ম শব্দ মুখ্য অর্থে কহে ভগবান চিদৈর্ঘ্য পরিপূর্ণ অনুৰ্দ্ধ সমান। & নহে । রসের রূপ ఆర్చెరి তাহার বিভূতি দেহ সব চিদাকার চিদ্বিভূতি আচ্ছাদিয়া কহে নিরাকার। ভগবানের "নিখিলরসামৃতমূৰ্ত্তিটা" চিদ্বমুৰ্ত্তি, জড়মূৰ্ত্তি নহে। সুতরাং রসের রূপের কথা তুলিলেই যে সে রূপকে সৰ্ব্বথা জড়ধৰ্ম্মাপন্ন বলিয়া নির্দেশ করা হয়, এমন কথা ভাবিয়া লইবার কোনও হেতু নাই। অন্য পক্ষে, এই রূপ যে, অন্ততঃ আমাদের চক্ষে ও জ্ঞানে, সৰ্ব্বপ্রকার জড়সম্পর্কশূন্ত, এমন কথাও বলিতে পারি না। আমাদের জ্ঞান বিষয়তন্ত্র ; চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয়কে অবলম্বন করিয়া প্রকাশিত হইয়া থাকে। সুতরাং কোনও রস যতক্ষণ না আমাদের ইন্দ্রিয়গোচর, বিশেষতঃ আমাদের চক্ষুগোচর হয়, ততক্ষণ তাহার যে রূপ আছে, ইহা আমরা জানিতে বা বুঝিতে পারি না। সুতরাং রসের রূপ বলিতে . আমরা রসবিশেষের আবির্ভাবে জীবদেহে যে সকল বিশেষ লক্ষণ প্রকাশিত হয়, কেবল সেই বস্তুকেই জানি ও সেই বস্তুকেই বুঝিয়া থাকি। বাৎসল্যভাব যখন জননীকে অভিভূত করিয়া, তাহার স্বায়ুমণ্ডলকে অধিকার করে ও সেই স্বায়ুমণ্ডলের সাহায্যে র্তাহার শরীরের শোণিত-প্রবাহ ও পেশিসমূহকে উত্তেজিত করিয়া তাহার দেহযষ্টিতে একটা বিশেষ ছবি ফুটাইয় তুলে, সেই ছবিটাকেই বাংসল্যের সত্যকার রূপ বলি। এ রূপ নিত্য অর্থাৎ যেখানে বাৎসল্য একটা বিশেষ মূৰ্ত্তিপ্রাপ্ত হয়, সেখানেই এই ছবিট ফুটিয়া উঠে। এই রূপ সাৰ্ব্বজনীন অর্থাৎ সভ্য-অসভ্য, শ্বেতকৃষ্ণ, বিজ্ঞ-অজ্ঞ সকল জননীতেই ফুটিয়া উঠে। এই রূপ সাৰ্ব্বভৌমিক-সকল দেশেই ইহার প্রকাশ হইয়া থাকে।