পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপাধ্যায়ের সমাজ-নীতি উপাধ্যায় ব্রহ্মবান্ধব মহাশয় স্বদেশবস্তুকে কতটা যে ভাল বাসিতেন, তার ঐকান্তিক সমাজামুগত্যই ইহার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। হিন্দু সাধন পরিহার করিয়া, সাধনান্তর গ্রহণ করিয়াও তিনি এই সমাজান্নুগত্য বর্জন করেন নাই । বরং এই বিদেশীয় ধৰ্ম্মসাধনকেই, আপনার জীবনে, সম্পূর্ণরূপে, নিজের দেশের সমাজ বিধানের সঙ্গে মিলাইয়া লইবার জন্ত প্রাণপণ চেষ্ট৷ করিয়াছিলেন। কেহ কেহ উপাধ্যায় মহাশয়ের এই সমাজামুগত্যের অন্তরালে কেবল একটা অর্থহীন ও অযৌক্তিক রক্ষণশীলতাই দেখিতেন। প্রথম বয়সে উপাধ্যায় না কি ব্রাহ্মসমাজে যোগ দিয়া ধৰ্ম্ম ও সমাজসংস্কারের পক্ষপাতী হইয়াছিলেন। এই জন্য র্তার পরিণত বয়সের এই সমাজামুগত্যকে কেহ কেহ বিশেষতঃ তার পূর্বকার ধৰ্ম্মবন্ধুগণ, পুরাতন কুসংস্কারের দিকে পুনরাবৰ্ত্তন বা রি-অ্যাকৃষণ (rc-action ) বলিয়া মনে করিতেন। কিন্তু উপাধ্যায়কে এ জাতীয় রক্ষণশীল বা এই শ্রেণীর পুনরাবৰ্ত্তনকারী বা রি-অ্যাকৰ্ষণারী ( reactionary ) বলা যাইতে পারে কি न नं★मश् । উপাধ্যায়ের মধ্যে একটা প্রকৃত শ্রদ্ধার ভাব ছিল, এ কথাটা সকলে জানেন না ও বোঝেন না । “সন্ধ্যা”-পত্রিকার সম্পাদক বলিয়াই বাঙ্গালী সমাজে উপাধ্যায় বিশেষ ভাবে পরিচিত হইয়াছিলেন। আর “সন্ধ্যাতে” প্রায়ই সমাজের, বিশেষ নব্যশিক্ষাভিমানী সম্প্রদায়ের, কোনও কোনও শ্রেষ্ঠজন সম্বন্ধে এরূপ কঠোর, তীব্র, কখনও কখনও ব। গভীর ৱিদ্রপাত্মক প্রবন্ধ প্রকাশিত লুইত যে এগুলি পড়িয়া অপরিচিত লোকে কোনও প্রকারেই সম্পাদককে এক জন শ্রদ্ধাশীল লোক বলিয়া কল্পনা করিতে পারিত না। কিন্তু উপাধ্যায়কে র্যার ঘনিষ্ঠভাবে জানিতেন, তারা তাহার কথাবাৰ্ত্তায় কখনও প্রকৃত শ্রদ্ধাশীলতার অভাব দেখিয়াছেন কি না সন্দেহ। পল্লীর স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য, পল্লীবাসীর কাহাকেও না কাহাকেও তার আবর্জনরাশি পরিস্তুত করা অত্যাবাক হয়। এ অত্যাবশ্যকীয় কৰ্ম্ম যে করিতে যাইবে, তার হাতে ও গায়ে কিছু না কিছু ময়লাও লাগিবেই লাগিবে। কিন্তু দশের হিতের জন্য এ কাজ করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছে বলিয়া সে ব্যক্তি ষে স্বভাবতঃই আবর্জন ভাল বাসে, এমন কথা যেমন বলা সঙ্গত হয় না, সেইরূপ সময়বিশেষে সমাজের নৈতিক বা রাষ্ট্রীয় আবর্জনা পরিষ্কার করা প্রয়োজন হইলে, সমাজের শ্রেষ্ঠজনকেও সৰ্ব্বসমক্ষে অপদস্থ করা আবখ্যক হইতে পারে। আর সে অবস্থায়, সে অপ্রীতিকর কৰ্ম্ম যদি কেহ করে, তাহাতে তাহাকে স্বল্পবিস্তর হীনতাও স্বীকার করিতেই হয়। কিন্তু তাই বলিয়া সে নিৰ্ব্বিকার-চিত্ত দেশসেবককে হীনচরিত্রের লোক বলিয়া মনে করা কখনই সঙ্গত হয় না। উপাধ্যায় সম্বন্ধেও এই কথাই খাটে। “সন্ধ্যা"পত্রিকায়