পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శ్రీ\96 সমাজের কোনও কোনও শ্রেষ্ঠজনকে যখন তখন তীব্রভাবে আক্রমণ করা হইত বলিয়া, সম্পাদকের প্রকৃতিতে যে একটা স্বাভাবিকী শ্রদ্ধাশীলতা ছিল না, একেবারে সরাসরিভাবে এমন সিদ্ধান্ত করা যায় না । t ফলতঃ উপাধ্যায় “সন্ধ্য।” পরিচালনা করিতে যাইয়া, আপনার অন্তরকে কতট। পরিমাণে যে নিপীড়িত করিতেন, বহুদিন কাছে থাকিয়া, এক সঙ্গে কাজকৰ্ম্ম করিয়া, তাহা প্রত্যক্ষ করিয়াছি। এ সকল আক্রমণ যে সৰ্ব্বদা তিনি নিজে লিপিবদ্ধ করিতেন, তাহাও নহে। তবে অপর লেখকদিগের প্রবন্ধাদির উপরে তিনি প্রায়ই হস্তক্ষেপ করিতেন না। আর সমাজের “মেকি” নেতৃত্ব ও স্বদেশ-সেবার প্রভাব নষ্ট না হইলে, সত্য ও সজীব স্বাদেশিকতা কখনওই ফুটিয়া উঠিবে না, ইহাও তিনি মনে করিতেন। এই জন্য আর কোনও কিছু বিচার না কৃরিয়া উপাধ্যায় এ সকল লেখা পত্রস্থ করিয়া দিতেন। নতুবা, সত্য সত্যই যে লোকনিন্দায় তার আনন্দ হইত, তাহ। নয়। আর এ সকলে তার প্রাণগত শ্রদ্ধাশীলতার অভাবও সুচিত হইত না । প্রকৃতিগত শ্রদ্ধাশীলতা হইতে, সৰ্ব্বত্রই এক প্রকারের রক্ষণশীলতাও জন্মিয়া থাকে। এই জাতীয় রক্ষণশীলতা উপাধ্যায়ের মধ্যে বেশই ছিল। তারই জন্য উপাধ্যায়ের হাত প্রাচীনের ও প্রতিষ্ঠিতের উপরে আঘাত করিতে সৰ্ব্বদাই সন্ধুচিত হইত। এই জন্তই উপাধ্যায় প্রথম বয়সে আপনার কৌলিক ধৰ্ম্মে আস্থাহীন হইয়াও, একেবারে উৎকট বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, মাঘ, ১৩১৯ ধৰ্ম্মসংস্কারক বা সমাজ-সংস্কারক হইয়া উঠেন নাই। ব্রাহ্মসমাজে আসিয়া, সাধারণ ব্রাহ্মসমাজে যোগ না দিয়া, কেশবচন্দ্রের শিষ্যত্ব গ্রহণ করিয়া, ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজে প্রবেশ করেন। কেশবচন্দ্রের নিজের চরিত্রে একটা রক্ষণশীলতা এবং তাহার শিষ্যবর্গের মধ্যে একটা শ্রদ্ধাশীলতা সৰ্ব্বদাই বিদ্যমান ছিল। এ বস্তু ব্ৰাহ্মসমাজের অপর শাখায় ততটা পাওয়া যায় নাই। উপাধ্যায়ের প্রকৃতিগত শ্রদ্ধাশীলতা শাস্ত্রগুরুবর্জিত ব্রাহ্ম ধৰ্ম্মেতেও বেশি দিন তৃপ্তিলাভ করিতে পারিল না । এই শ্রদ্ধাশীলতার প্রেরণাতেই, আমার মনে হয়, উপাধ্যায় ব্রাহ্মসমাজ ছাড়িয়া প্রথমে প্রোটেষ্টাণ্ট খৃষ্টীয় মণ্ডলীর ও শেষে রোমান ক্যাথলিক খৃষ্টীয় সজোর আশ্রয় লইয়াছিলেন। আর এই খানেই, তার প্রকৃতিগত শ্রদ্ধাশীলতা ও রক্ষণশীলতার প্রভাবে উপাধ্যায়ের শেষ বয়সের সমাজনীতির মূল ভিত্তিটা গড়িয়া, উঠিতে আরম্ভ করে। সৰ্ব্বত্রই ব্যক্তিত্বাভিমানী অনধীনতার আদর্শের সঙ্গে সমাজাম্বুগত্যের একটা নিত্য বিরোধ জাগিয়া রহে। যেখানেই এই অনধীনতার ভাবটা প্রবল হইয়৷ উঠে, সেই খানেই সমাজকুগত্যটা ধৰ্ম্মবিগর্হিত বলিয়া, পরিত্যক্ত হয়। প্রোটেষ্ট্যান্ট খৃষ্টীয়ান্‌ সম্প্রদায়ে এই ব্যক্তিত্বাভিমানী অনধীনতার ভাব খুবই প্রবল। এই জন্য ইহাদের মধ্যে সমাজামুগত্যও ক্রমশই কমিয়া গিয়াছে, এখন নাই বলিলেও চলে। অন্যদিকে রোমান ক্যাথলিক খৃষ্টীয় সঙ্ঘে, শাস্ত্র ও গুরু উভয়ের প্রাধন্ত-মৰ্য্যাদা সমভাবে রক্ষিত