পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] হঠাৎ তাহার প্রতি প্রসন্ন হইয়া স্বহস্তে হাল ধরিলেন ; মুকুন্দের স্ত্রী পঁচিশ বৎসর বয়সে এক পুত্ৰ সন্তান প্রসব করিল। তাহার পর বৎসর ঘুরিতে না মুরিতেই ম৷ ষষ্ঠ হয় একটি পুত্র না হয় একটি কন্যারত্ব তাহাঙ্কক উপহার দিতে লাগিলেন। মুরারীর জ্যেষ্ঠ পুত্র সতীশচন্দ্র তখন বেশ বড় সড় হইয়া জনাৰ্দ্দনপুরের স্কুলে লেখা-পড়া আরস্ত করিয়াছিল। - সাংসারিক অবস্থা ক্রমে মন্দ হইতে লাগিল, মুকুন্দ বাধ্য হইয়া দোকান উঠাইয়। দিল, নিজে একবেল না খাইলেও চলে, কিন্তু দুধ ভিন্ন ছেলে মেয়েদের একবেলা চলিবার উপায় নাই। গয়গার নিকট দুধ কিনিতে অনেক পয়সা লাগে, সুতরাং মুকুন্দ অনেক ভাবিয়া চিন্তিয়া দুইটি হুঙ্কবতী গাভী কিনিল। অর্থকষ্টে বাধ্য হইয়া মুকুন্দ দাসদাসীদের বিদায় দিয়াছিল, অগত্য। সে স্বহস্তে গরুর বিচালী কাটিয়া জাব মাখিয়া দিত, এবং তৈজসপত্রগুলি. বিক্রয় করিয়া কষ্টে সংসার চালাইত। নান দুশ্চিন্তায় অকালে তাহার চুল পাকিয় গেল, এবং প্রৌঢ় হইবার পূৰ্ব্বেই জর আসিয়া তাহাকে আক্রমণ করিল। এদিকে মুরার কয়েক বৎসরের মধ্যেই বেশ গুছাইরা লইল । সে বিশ টাকা বেতনে ডাকঘরের চাকরীতে প্রবেশ করিয়াছিল, কয়েক বৎসরের মধ্যেই তাহার বেতন পঞ্চাশ টাকা হইল ; একটি সব পোষ্ট আফিসে সে পোষ্ট মাষ্টার নিযুক্ত হইল। মুরারি কৃপণ ছিল, কৃপণের প্রায়ই সঞ্চয়ী হয়। ডাকঘরের চাকরী করায় মেহের প্রতিদান ©Ꮬ তাহকে দাস দাসী রাখিতে হয় নাই, ডাক - ঘরের হরকরী ও পিয়নেরই তাহার গৃহস্থালীর সকল কাজ করিয়া দিত, বাস। ভাড়া লাগি ’ না; দকিট বিক্রয় করিয়া সে যে কমিশন পাইত, তাহাতেই কষ্টে স্বষ্টে ংসার চলিত, বেতনের টাকাগুলি দে খাটিত। এই ভাবে কিছুদিনের মধ্যেই মুরারি অনেক টাকা জমাইয়। ফেলিল। " ডাকঘরের চাকরীতে প্রায়ই ছুটি পাওয়৷ যায় না। সুতরাং মুরারি সপরিবারেই কৰ্ম্মস্থলে থাকিত । তথাপি সে মধ্যে মধ্যে দাদার তত্ত্বতল্লাস লই ত, এবং পূজার সময় বৎসরান্তে স' রিবারে একবার বাড়ী যাইত। যতদিন তাহার দাদার সন্তানাদি হয় নাই, ততদিন সে দাদার অতুগত হইয়া চলিয়াছিল, দাদাকে মৌখিক সন্মানও করিত। সে বুঝিয়াছিল দাদার যাহ্ন কিছু আছে, সে সমস্তই তাহার বা তাহার পুত্রের। সুতরাং দাদার অবধি হই, তাহার মনে কষ্ট দেওয়া সে সঙ্গত মনে করিত না। কিন্তু মা ষষ্ঠ যেদিন হইতে মুকুন্দের স্বন্ধে ভর করিলেন, সেই দিন হইতেই মুরারির মেজাজ বিগড়াইয়া গেল। সে বুঝিল, এতদিনে সরিকের সংসার হইল। তাই মুকুন্দ যখন অর্থকষ্টে পড়িয়া তাহার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করিল, তখন মুরারি দাদাকে অর্থের পরিবর্তে অযাচিত হিতে|পদেশ প্রদানে কুষ্ঠিত হইল না, সে মুকুন্দকে লিখিল, “আপনি কোনও দিন বুঝিয়া চলিতে শেখেন নাই, আপনার হাতে যথেষ্ট পয়স ছিল, কিন্তু আপনি তাহা দুই হাতে উড়াইয়া দিয়াছেন, অবস্থার অতিরিক্ত ব্যয়