পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

چ 4 وئ، চিত্র। এখানেও একটী বালক ও তার মাতা, কটএ বৃদ্ধ, ও গোটা দুই তিন মুরগী, এই মাত্রই গল্পটার সরঞ্জাম। আর ইহার সাজসজ্জারও কোনও অতিশয্য বা বাহুল্য নাই । কিন্তু ছবিটী যাহ ফুটিয়া উঠিয়াছে, তাহা একান্তই নিখুঁত। ইখনি কাটি নাড়িয়া বাজিকর যেমন কত কি না দেখায়, সুধীবাবুও সেইরূপ দুচারিট সামান্ত বস্তু, ব্যক্তি ও ঘটনাকে নাড়িয়। চাড়িয়া এই অদ্ভুত স্বষ্টি প্রকাশ করিয়াছেন। অথচ ইহাতে ঐন্দ্রজালিক কিছুই নাই। র্তার প্রত্যেক ঘটনাটা, প্রত্যেক মাকুযগুলো, নিরেট সত্য। সৰ্ব্বদাই এ সকল ঘটনা ঘটতেছে। সৰ্ব্বত্রই এ লোকগুলো চলা ফেরা করিতেছে। আর এই স্বাভাবিকতার দরুণই সুধীবাবুর এই গল্পগুলি এমন অসাধারণ উৎকর্ষ লাভ করিয়াছে। তার পর “ঠাকুর দেখা”। এই গল্পটতে সুধীবাবু আপনার কবিপ্রতিভার আর একটা দিকু ফুটাইয়া তুলিয়াছেন। “মিতে” ও “কাসিমের মুরগী” এই দুটি গল্পের রসেতে জটিলতা বড় নাই। দুইটার মধ্যেই সখ্যরস ফুটিয়াছে। কারণ বালক কাসিমের মুরগী ক’ট তার খেলারই সঙ্গী ছিল। কিন্তু “ঠাকুর দেখা” শীর্ষক গল্পে, সুধীবাবু গভীরতর ও জটিলতর স্ত্রী-চরিত্রাঙ্কনের চেষ্টা করিয়াছেন। এ গল্পের অবলম্বন ও আশ্রয় সখ্য নহে কিন্তু মাধুৰ্য্য। “ভগবতী” ধনগৰ্ব্বিত, মুখরা, অপ্রিয়ভাষিণী, সকলই সত্য। এইজন্য সরলচিত্ত, উদারহৃদয়, ধৰ্ম্মপ্রাণ “মহেন্দ্র” বড় দুঃখে তাহাকে ত্যাগ করিয়াছিলেন। কিন্তু "ভগবতীর” বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, মাঘ, ১৩১৯ শত দোষ সত্ত্বেও, সে নারী, পতিপ্রেমপিয়াসিনী । কি করিয়৷ সে প্রেম পাইতে হয়, বেচারী তাই জানিত না। অবোধ বালকে যেমন সুমিষ্ট কমলালেবু সযত্নে মৃদ্ধহস্তে ছাড়াইয়া খাইতে জানে না বলিয়৷ সবটাই মুখে পুরিয়া দাত দিয়া চিবাইয়া, খোসার তিক্তরসে বিরক্ত হইয়া, তাহ “খু খু’ করিয়া ছুড়িয়া ফেলে, অথচ সে নেবুর প্রতি যে তার লোভ ছিল না বা নাই, এমন নহে ; হতভাগিনী “ভগবতী”ও তাহাই করিয়াছিল। তার অপ্রিয়ভাষণ, কলহমুখরত, সকলই পতিপক্ষে ফলতঃ ও মূলতঃ মাধুর্য্যেরই বিকার ছিল। মহেন্দ্র তাহ বুঝিলেন না। তাই মানিনীর মানও ভাঙ্গাইতে পারিলেন না। কিন্তু সে দুৰ্জ্জয় মান, কেমন করিয়া, একদিন বালির বাধের মতন ভাঙ্গিয়া গেল, সুধীবাবু মুনিপুণ তুলিকায় সে করুণছবিটা অঙ্কিত করিয়া,—ভগবতীর পূর্বজীবনের কর্কশতা ও যে প্রকৃতপক্ষে কেবল তার প্রাণগত প্রেমেরই বিকৃতি মাত্র ছিল, ইহা চাঙ্গুষ করিয়া তুলিয়াছেন। “মিতে” বা “কাসিমের মুরগী” পড়িয়া গভীরতর ও জটিলতর রসাঙ্কনেও যে গ্রন্থকাবের এমন অসাধারণ নিপুণতা আছে, ইহা বোঝা যায় না। “ঠাকুর দেখা”তেই ইহার প্রমাণপরিচয় পাওয়া বায় । fu “করঙ্কের” প্রায় প্রত্যেক চিত্রই এইরূপ বিবিধ রস ফুটাইয় পাঠকের চিত্ত হরণ করিয়া থাকে। বাংলার সকল ছোট গল্পের বই যে আমি পড়িয়াছি, এমন কথা বলিতে পারি মা। কিন্তু যতটা পড়িয়াছি, তাহাতে স্বধীবাবু বাংলাসাহিত্যে ছোট গল্পের লেখকশ্রেণীর মধ্যে অতিশয় উচ্চস্থান অধিকার করিয়াছেন, ইহা অস্বীকার করা সম্ভব বলিয়া মনে করি না। ঐবিপিনচন্দ্র পাল ।