পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৭৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭৩৬ তাহার প্রণয় ভিক্ষা • করিল। হরিদাস শাস্তস্বরে কছিলেন “এখনও আমার তিন লক্ষ নাম জপ সম্পূর্ণ হয় নাই ; নাম সংখ্যা পূর্ণ হইলেই তোমার সহিত আলাপ করিব। ততক্ষণ তুমি অপেক্ষা কর।” রমণী বলিয়া রহিল, কিন্তু হরিদাসের নামসংখ্যা পূর্ণ হইতে রজনী প্রভাত, হইয়া গেল রমণী প্রস্থান করিল। কিন্তু পুনরায় পর রজনীতে আসিয়া উপস্থিত হইল । তাহকে দেখিয়া হরিদাস কহিলেন “গত রজনীতে তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করিয়া বড় দুঃখ পাইয়াছ। তজ্জন্ত আমার অপরাধ গ্রহণ করিও না, আজি আমার কীৰ্ত্তন শেষ পর্য্যন্ত অপেক্ষা কর। আজি তোমার অভিলাষ নিশ্চয়ই পুর্ণ হইবে।” তখন সেই পতিতা রমণী গত রজনীর মত দ্বারদেশে উপবেশন করিয়া হরিনাম কীৰ্ত্তন গুনিতে লাগিল। কীৰ্ত্তন শুনিতে শুনিতে দুই একবার তাহার মুখেও হরিনাম ফুরিত হইয়া উঠিল । হরিদাসের নাম কীৰ্ত্তনে নিশা অতিবাহিত হইয় গেল। রমণী বিফলমনোরথ হইয়া সেদিন ও প্রস্থান করিল। তৃতীয় রাত্রিতেও বথাসময়ে রমণী আসিয়া হরিদাসের কুটারদ্বারে সমাগত হইল এবং দ্বারে বসিয়া ভক্তকণ্ঠোচ্চারিত হরিনাম শুনিতে লাগিল। নাম শুনিতে শুনিতে পতিতার মন পরিবর্তিত হইয়া গেল, তাহার কণ্ঠে হরিনাম বারংবার ধ্বনিত হইয় উঠিল। অমৃতপ্ত হৃদয়ে কাদিতে কঁাদিভে সে সাধুর চরণতলে পতিত হইয়া রামচন্দ্র খাঁর ছত্তিতার কাহিনী বিবৃত করিল, এবং স্বকীয়, পাপের জন্য ক্ষম ভিক্ষা করিয়া পরিত্রাণের উপায় বঙ্গদর্শন গৃহে অবস্থিতি করিতে লাগিলেন। [ ১২শ বর্ষ, চৈত্র, ১৩১৯ জিহ্বাস করিল। হরিদাস কহিলেন “আমি সমস্তই অবগত আছি ; কিন্তু রামচন্দ্র র্থী নিজের অজ্ঞানতাবশতঃ "যে পাপ করিয়াছে তজ্জন্ত তাহার উপর আমার ক্রোধ হয় না । আমি তোমারই জন্ত এ তিন দিন এখানে অপেক্ষা করিতেছি। তুমি যথাসৰ্ব্বস্ব ব্ৰাহ্মণদিগকে দান করতঃ আমারই এই কুটীরে বসিয়া একমনে হরিনাম জপ এবং তুলসীর সেবা কর, অচিরাৎ শ্ৰীকৃষ্ণ তোমাকে দয়া করিবেন।” রমণী তাঁহাই করিল। সমস্ত সম্পত্তি ব্রাহ্মণদিগকে দান করিয়া মুণ্ডিত মস্তকে একবস্ত্রা হইয়া সেই কুটীরে বাস করতঃ সে প্রত্যহ তিন লক্ষ হরিনাম জপ করিতে লাগিল । তাহার ইন্দ্রিয় দমিত হইল, প্রেম প্রকাশিত হইল। দেশবিদেশে পরম বৈষ্ণবী বলিয় তাহার খ্যাতি প্রচারিত श्हेण । . সেই অরণ্য হইতে হরিদাস চাদপুরে চলিয়া গেলেন এবং তথায় বলুরাম আচার্যোর বলরাম সপ্তগ্রামের ধৰ্ম্মশীল জমিদার হিরণ্য ও গোবৰ্দ্ধনদাসের পুরোহিত ছিলেন। হিরণ্য ও গোবৰ্দ্ধন হরিদাসের পরিচয় প্রাপ্ত হুইয়। তাহাকে সেই গ্রামে যত্ন করিয়া রাখিয় দিলেন । হিরণ্যের পুত্র বালক রঘুনাথ এই স্থানে, হরিদাসের দর্শন লাভ করিয়া পরম ভক্তিমান হইয়া উঠেন। একদিন বলরামের সহিত জমিদারের "সভায় গমন করিয়া হরিদাস নামমাহাত্ম্য বর্ণন করিতে করিতে কহিলেন “নামের ফল-কৃষ্ণপাদপদ্মে প্রেমোৎপত্তি, পাপক্ষয় ও মোক্ষ নহে। মুক্তি নামাভাসেই হইয়া থাকে।” সভায় গোপাল চক্রবর্তী