পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় সংখ্যা । ] .যুগলু-প্রদীপ i,উপহাস। শ্ৰীননিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রণীত। মূল্য ১২ এক টাকা । 驗 এই উপন্থাসখানির মূল কল্পনা অতি উপাদেয়, অতি সুন্দর। বৈদেশিক দুইচারিখানি উপন্যাসে ও নাটকে এইরূপ এবং ইহার অপেক্ষা ও উচ্চতর কল্পনা দেখিয়াছি বটে ; কিন্তু আমাদের ভাষায় এই প্রণালীর কল্পনা, বোধ হয় প্রথম দেখিয়াছিলাম, বঙ্কিমবাবুর যুগলাঙ্গুরীয়ে ; আর দেখিলাম, সমালোচ্য উপন্যাসে । সুদক্ষ হস্তে এই সুন্দর মূল কল্পনা অতি উপাদেয়, অতি আদরণীয়, পরম সুন্দর উপদ্যাসে পরিণত হইতে পারিত । ননিলালবাবুর হাত বড় কাচা ; তাই এমন সুন্দর কল্পনাও র্তাহার হাতে মাটি হইয়া গিয়াছে। প্রথমেই, রামধন সরকারের পাঠশালার চিত্র নিতা স্তু অস্বাভাবিক। যতই দুরন্ত হউক না কেন, গুরুমছড়ায়ের ‘সজ্ঞানে গঙ্গাযাত্র।’ করিতে পারে, এমন ছাত্র ভূ-ভারতে কখল জন্মে নাই । বিশেষত রামধন সরকারের মতন গুরুমহাশয় ; যাহার সম্বন্ধে গ্রন্থকার নিজেই লিখিয়াছেন—“সাক্ষাৎ শমন-সদৃশ বেত্ৰধারী রামধন সরকারের ছাত্রগণের আর্তনাদধবনিত পাঠশালা ।” তার পর, অন্নপূর্ণার হাতেখড়ি --—এটা কি ব্যাপার ? বেটাছেলের হাতেখড়ি হইত এবং হয় বটে —আমাদেরও একদিন হইয়াছিল —কিন্তু মেয়েছেলের হাতেখড়ির কথা এই প্রথম শুনিলাম ; তাহাও আবার পাঠশালায় গিয়া ! . চরিত্রচিত্রণে গ্রন্থকার নিতাপ্ত অপটু। গ্রন্থ-সমালোচনা। e সৰ্ব্বশাস্ত্রবিশারদ চন্দ্রচূড় তর্করত্ন সন্ন্যাসগ্রহণ-কালে ভ্রাতাকে আদেশ করিয়া গেলেন যে, অন্নপূর্ণার বিবাহের দুইদিন পূৰ্ব্বে যুগল-প্রদীপের অভ্যন্তরস্থ লিপিখানি, একছত্র ও নিজে না পড়িয়া, একটি অক্ষরও অপরকে না দেখাইয়া, তাহার মাতার হস্তে— অবস্থাবিশেষে, অন্নপুর্ণারই হস্তে—দিতে হইবে। এ আদেশে এইরূপ বুঝায়, যেন বিবাহের সমস্ত উদ্যোগ-আয়োজন পণ্ড করাই চন্দ্রচূড়ের উদ্দেশু ছিল। ইহাতে চন্দ্রচূড়ের সৰ্ব্বশাস্ত্রবিশারদত্ব’ ত প্রকাশ হওয়া দুরের কথা, বরং বুদ্ধির হীনতা—বুঝ মস্তিষ্কের বিকৃতিও প্রকাশ পায়। মদনমোহন চুড়ামণি একটি আস্ত আহাম্মক এবং নিৰ্ব্বোধের শিরোমণি । তাহার প্রত্যেক কথায়, প্রত্যেক কাধ্যে, এই আহাম্মকি দেদীপ্যমান। ফরমারেশ বোকা ব্যতীত আর কাহাকেও এমন লোকে ঠকাইতে পারে না । অথচ বিজ্ঞ, সংসারাভিজ্ঞ হরমোহন দত্তকে এবং ডাকাইত লরেন্দ্রনাথকে এই আহাম্মক অবলীলাক্রমে ঠকাইল । অন্নপূর্ণ চিরদিন অমরনাথকে স্বামি-রূপেই ভা>িয়। আসিয়াছেন, তাহাকে স্বামি-রূপে পাইবার জন্ত না করিয়াছেন, এমন কাজ নাই। সেই অন্নপূর্ণ নিজের বংশ-পরিচয় পাইয়াই যে অমরনাথের সঙ্গে মাতা-পুত্র-সম্বন্ধ স্থাপন করিলেন—ইহা হাস্ত্যজনক । এমন আরও অনেক আছে, কিন্তু সকল নির্দেশ করিবার স্থান আমাদের নাই । উপন্যাসখানির গঠন ও ভাল হয় নাই। দক্ষ্য নরেন্দ্রনাথকে ইহার মধ্যে আনিয়া ঢুকাইবার কি যে প্রয়োজন ছিল, তাহ