পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা। ] , লাগিল। "রাজলক্ষ্মী কছিলেন, “থাক বোম, থাক্‌ ! সুধোকে ডাকিয়া দাও ! তুমি যাও, আর দেরি করিয়ো না !” * আশা এবায় আর দ্বিধামাত্র করিল না। শাগুড়ির ঘর হইতে বাহির হইয়া একেবারে মহেন্দ্রের ঘরে গিয় উপস্থিত হইল । মহেঞ্জের সম্মুখে টেবিলের উপর খোলা বই পড়িয়া আছে—সে টেবিলের উপর দুই পা তুলিয়া দিয়া চৌকির উপর মাথা রাখিয়া একমনে কি ভাবিতেছিল। পশ্চাতে পদশব্দ শুনিয়া একেবারে চমকিয়া উঠিয়া ফিরিয়া তাকাইল । যেন কাহার ধানে নিমগ্ন ছিল, হঠাৎ ভ্রম হইয়াছিল, সে-ই বুঝি আসিয়াছে। আশাকে দেখিয়া মহেন্দ্র ংযত হইয় পা নামাইয়া খোলা বইট কোলে টানিয়া লইল । মহেন্দ্র আজ মনে মনে আশ্চৰ্য্য হইল । আজিকাল ত আশা এমন অসঙ্কোচে তাহার সম্মুখে আসে না—দৈবাৎ তাঁহাদের উভয়ের সাক্ষাৎ হইলে সে তখনি চলিয়া যায়। আজ এত রাত্রে এমন সহজে সে যে র্তাহায় ঘরে আসিয়া প্রবেশ করিল, এ বড় বিস্ময়কর। মহেন্দ্র তাহার বই হইতে মুখ ন তুলিয়াই বুঝিল, আশার আজ চলিয়া যাইবার লক্ষণ নহে। আশা মহেন্দ্রের সম্মুখে স্থিরভাবে আসিয়া দাড়াইল । তখন মহেন্দ্র আর পড়িবার ভাণ করিতে পারিল ন—মুখ তুলিয়া চাহিল। আশা সুস্পষ্ট স্বরে কহিল—“মার স্থাপানি বড় ঝুড়িয়াছে, তুমি একবার তাহাকে দেখিলে ভাল झग्न ।” মহেন্দ্র। তিনি কোথায় আছেন ? চোখের বালি। ১২৭

আশী। তাহার শোবার ঘরেই আছেন, ঘুমাইতে পারিতেছেন না। মহেন্দ্র । তবে চল র্তাহাকে দেখিয়া অসি গে । - অনেকদিনের পরে আশার সঙ্গে এইটুকু কথা কহিয়া মহেন্দ্ৰ যেন অনেকটা হাল্কা বোধ করিল। নীরবতা যেন দুর্ভেদ্য দুর্গপ্রাচীরের মত স্ত্রীপুরুষের মাঝখানে কালে ছায়া ফেলিয়া দাড়াইয়া ছিল, মহেন্দ্রের তরফ হইতে তাহা ভাঙিবার কোন অস্ত্র ছিল না—এমন-সময় অtশ। স্বহস্তে কেল্লার একটি ছোট দ্বার খুলিয়া দিল । রাজলক্ষ্মীর দ্বারের বাহিরে অtশ। দাড়াইয়া রহিল, মহেন্দ্র ঘরে প্রবেশ করিল। মহেন্দ্রকে অসময়ে ঘরে আসিতে দেখিয়া রাজলক্ষ্মী ভীত হইলেন, ভাবিলেন, বুঝি বা আশার সঙ্গে রাগারগি করিয়া আবার সে বিদায় লইতে আসিয়াছে। কহিলেন,“মহীন, এখনো ঘুমাস নাই ?” মহেন্দ্র কহিল—“মা, ছাপানি কি বাড়িয়াছে ?” এতদিন পরে এই প্রশ্ন শুনিয়া মার মনে বড় অভিমান জন্মিল। বুঝিলেন, বেী গিয়া বলাতেই আজ মহীন মার খবর লইতে আসিয়াছে। এই অভিমানের আবেগে র্তাহার বক্ষ আরো আন্দোলিত হইয়া তোমার সেই উঠিল,-কষ্টে বাক্য উচ্চারণ করিয়া বলি লেন, “যা, তুই গুতে যা ! আমার ও কিছুই না ।” মহেন্দ্র । না - মা, একবার পরীক্ষা করিয়া দেথা ভাল, এ ব্যামো উপেক্ষা করিবার জিনিষ নহে।