পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা । ] ব্রাহ্মণ । S8-3) দেখানে নিজের বিশিষ্টত রক্ষা করিতে হইলে একটা আটচাল বাধিলেই যথেষ্ট – সেখানে সাতমহল প্রাসাদ নিৰ্ম্মাণ করিয়া তুলিবার ব্যয় ও চেষ্টা স্বীকার করিতে সহজেই অপ্রবৃত্তি জন্মে । প্রাচীনকালে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশু দ্বিজ ছিল, অর্থাৎ সমস্ত আর্থ্য সমাজই দ্বিজ ছিল —পূদ্র বলিতে যে সকল লোককে বুঝাইত, তাহারাসাওতাল, ভিল, কোল, ধtঙড়ের দলে ছিল । আর্য্যসমাজের সহিত তাঁহাদের শিক্ষা, রীতিনীতি ও ধৰ্ম্মের সম্পূর্ণ ঐক্যস্থাপন একেবারেই অসম্ভব ছিল । কিন্তু তাহাতে কোন ক্ষতি ছিল না, কারণ সমস্ত আর্য্যসমাজই দ্বিজ ছিল—অর্থাৎ সমস্ত আর্য্যসমাজের শিক্ষা একইরূপ ছিল । প্রভেদ ছিল কেবল কৰ্ম্মে । শিক্ষা একই থাকার পরম্পর পরম্পরকে আদর্শের বিশুদ্ধিরক্ষায় সম্পূর্ণ আমুকুল্য করিতে পারিত। ক্ষত্রিয় এবং বৈশু, ব্রাহ্মণকে ব্রাহ্মণ হইতে সাহায্য করিত, এবং ব্রাহ্মণও ক্ষত্রিয়বৈশ্বকে ক্ষত্রিয়-বৈশ্য হইতে সাহায্য করিত। সমস্ত সমাজের শিক্ষার আদর্শ সমান উন্নত না হইলে, এরূপ কখনই ঘটতে পারে না। বর্তমান সমাজেরও যদি একটা মাথার দরকার থাকে, সেই মাথাকে যদি উন্নত করিতে হয় এবং সেই মাথাকে যদি ব্রাহ্মণ বলিয়া গণ্য করা যায়, তবে তাহার স্কন্ধকে ও গ্রীবাকে একেবায়ে মাটির সমান করির রাখিলে চলিবে না। সমাজ উন্নত ন হইলে তাহার মাথা উন্নত হয় না, এবং সমাজকে সৰ্ব্বপ্রযত্নে উন্নত করিয়া রাখাই সেই মাথার কাজ । 總 আমাদের বর্তমান সমাজের ভদ্রসম্প্রদায় --অর্থাৎ বৈদ্য, কায়স্থ ও বণিক সম্প্রদায়— সমাজ যদি ইহাদিগকে দ্বিজ বলিয়া গণ্য নী করে, তবে ব্রাহ্মণের আর উত্থানের আশা নাই । একপায়ে দাড়াইয়া সমাজ বকবৃত্তি করিতে পারে না । বৈদ্যেরা ত উপবীত গ্রহণ করিয়াছেন। মাঝে মাঝে কায়স্থেরা বলিতেছেন তাহার। ক্ষত্রিয়, বণিকেরা বলিতেছেন তাহারা বৈশু —এ কথা অবিশ্বাস করিবার কোন কারণ দেখি না। আকার-প্রকার, বুদ্ধি ও ক্ষমতা, অর্থাৎ আর্য্যত্বের লক্ষণে বর্তমান ব্রাহ্মণের সহিত ইহাদের প্রভেদ নাই । বঙ্গদেশের যে কোন সভায় পৈতা না দেখিলে, ব্রাহ্মণের সহিত কায়স্থ, সুবর্ণকণিক্‌ প্রভৃতিদের তফাৎ করা অসম্ভব। কিন্তু যথার্থ অনার্য্য, অর্থাৎ ভারতবর্ষীয় বন্তজাতির সহিত র্তাহাদের তফাৎ করা সহজ । বিশুদ্ধ আৰ্য্যরক্তের সহিত অনাৰ্য্যরক্তের মিশ্রণ হইয়াছে, তাহ আমাদের বর্ণে, আকৃতিতে, ধৰ্ম্মে, আচারে ও মানসিক দুৰ্ব্বলতায় স্পষ্ট বুঝা যায়—কিন্তু সে মিশ্রণ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশু, সকল সম্প্রদায়ের মধ্যেই হইয়াছে । তথাপি,এই মিশ্রণ এবং বৌদ্ধযুগের সামাজিক অরাজকতার পরেও সমাজ ব্রাহ্মণকে একটা বিশেষ গওঁী দিয়া রাখিয়াছে। কারণ, আমাদের সমাজের বেরূপ গঠন, তাহাতে ব্রাহ্মণকে নহিলে তাহার সকল দিকেই বাধে, আত্মরক্ষার জন্ত যেমন-তেমন করিয়া ব্রাহ্মণকে সংগ্ৰহ করিয়া রাখা চাই আধু নিক ইতিহাসে এমনও দেখা যায়, কোন কোন স্থানে বিশেষ প্রয়োজনবশত রাজা