পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ե- বঙ্গদর্শন । [ বৈশাখ । উৎপাদন-কার্য্যে আবশ্যক হইত না, কাজেই এই সকল বাষ্প সেই প্রাচীনকাল হইতে আকাশে ভাসমান থাকিয়া নিজেদের মধ্যেই ' রাসায়নিক সংযোগ-বিয়োগ সাধন করিত । বিজ্ঞানবিদগণ বলেন,—আমাদের বায়ু ও অঙ্গারকবাষ্প সেই অতি প্রাচীন কালের রাসায়নিক পরিবর্তনের ফল ব্যতীত তার কিছুই নয় । ইহারই পরবর্তী যুগ ভূপৃষ্ঠস্থ সমুদ্রাদির উৎপত্তিকাল। এই সময়ে পুথিবী আরো শীতল হইয়া পড়ায়,অপরাপর পদার্থের সহিত যে জলীয়ভাগ বৃষ্টিরূপে ভূপৃষ্ঠে পতিত হইত, তাহার সমস্তটা বাষ্পীভূত হইতে পারিত না, কাজেই ধরাতলের নিম্নস্থানে প্রভূত জলরাশি সঞ্চিত হইতে আরম্ভ করিয়াছিল । কিন্তু তখনও আকাশস্থ বায়ু প্রচুর অঙ্গারক বাপমিশ্রণে দূষিত থাকায় জীবের শ্বাসপ্রশ্বাসোপযোগী হইয়া উঠিতে পারে নাই । ইহার অনেক পরে বৃষ্টির সছিত অঙ্গারকবাষ্প ভূপতিত হইয়া চুণ,সামুদ্রিক লবণ ও কয়েকজাতীয় কর্দমবৎ মৃত্তিক উৎপাদন করিতে আরম্ভ করিলে, আকাশ অনেকট পরিচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছিল। বিজ্ঞানবিদগণ বলেন, ইহার পরযুগেই পৃথিবীর প্রাথমিক জীব উদ্ভিদের উৎপত্তি আরম্ভ হয়। এ সময়েও ভূপৃষ্ঠ কিঞ্চিৎ উত্তপ্ত ছিল বটে, কিন্তু তাহাতে তাৎকালিক উদ্ভিদের উৎপত্তি ও বৃদ্ধির কোনই হানি হইত না । তার পর ক্রমে ভূপৃষ্ঠ শীতল হইয়া পড়িলে এবং সেই প্রাচীনকালের সহস্ৰযোজনব্যাপী বনভূমিসকল দ্বায়। আকাশস্থ বায়ু অঙ্গরকবাষ্পবিরল হইলে, ক্রমোন্নতি বাদের নিয়মানুসারে ভূপৃষ্ঠ নানাজাতীয় জীবে পূর্ণ হইয়া পড়িয়াছে। ! কিপ্রকারে নির্জীব পৃথিবীতে প্রাথমিক জীব উদ্ভিদের উৎপত্তি হুইয়াছিল, তাহ সিদ্ধান্ত করিবার জন্ত বহুকাল হইতে বিজ্ঞানবিদগণ অনেক চেষ্টা করিতেছেন, কিন্তু অদ্যাপি সকলে এক সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে পারেন নাই, এবং সৃষ্টিতত্ত্বের এই বৃহৎ সমস্তাটির যে একটা শেষ মীমাংসা শীঘ্রই প্রচারিত হইবে, তাহার ও আশ দেখা যাইতেছে না । কতকগুলি পণ্ডিত বলেন, প্রাথমিক জীব রাসায়নিক ক্রিয়াবিশেষের ফলে স্বতই উৎপন্ন হইয়া পরে ক্রমোন্নতির নিয়মানুসারে বংশপরম্পরায় ভূপৃষ্ঠে বিস্তারলাভ করিয়াছে । আমরা যে এখন স্বতেজনন তার দেখিতে পাই না, তাহার কারণ এই যে, পূৰ্ব্বে ভূপৃষ্ঠের যে অবস্থায় ও যে ঘটনাপরম্পরায় প্রাথমিক জীবের জন্ম হইয়াছিল, পুথিবীর বর্তমান অবস্থায় সেই সুযোগের পুনঃসংঘটন সম্পূর্ণ অসম্ভব। উল্লিখিত স্বতোজননসিদ্ধান্ত অমূলক মনে করিয়া আর একদল পণ্ডিত বলেন, অতিপ্রাচীনকালে যখন ভূপৃষ্ঠে প্রচুর উল্কাবর্ষণ হইত, সম্ভবত তখনই কোন প্রকারে উল্কাপিণ্ডের সহিত ভূপৃষ্ঠে প্রাথমিক জীবের আবির্ভাব হইয়াছিল এবং তার পর পুরুষানুক্রমিত ও ক্রমোন্নতি দ্বারা এখন তাহাই ভূপৃষ্ঠকে উদ্ভিদপূর্ণ ও প্রাণিময় করিয়া তুলিয়াছে , w স্বষ্টিতত্ত্বের ন্যায় একটা গুঢ় রহস্যময় ব্যাপারের একটি অসম্পূর্ণ ইতিহাস প্রাচীন ও আধুনিক পণ্ডিতগণ পূৰ্ব্বোক্তপ্রকারে