পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

》○ ネ চেষ্টা জাগিয়াছে। বিদেশীর সহিত আমাদের সংঘাত ক্রমশ যতই কঠিন হইয়। উঠিতেছে, স্বদেশকে ততই বিশেষভাবে জানিবার ও পাইবার জন্ত আমাদের একটা ব্যাকুলত বাড়িয়া উঠিতেছে। দেখিতেছি, ইহা কেবল আমাদের মধ্যে নহে। যুরোপের সংঘাত সমস্ত সভ্য এসিয়াকেই সজাগ করিতেছে । এসিয়া আজ আপনাকে সচেতনভাবে, সুতরাং সবলভাবে উপলব্ধি করিতে বসিয়াছে। বুঝিয়াছে, আত্মানং বিদ্ধি’—আপনাকে জান-ইহাই মুক্তির উপায় । ‘পরধৰ্ম্মে ভয়াবহঃ”—পরের অনুকরণেই বিনাশ । বস্তু প্রধান শক্তিপ্রধান সভ্যতার সম্পদ আমাদের ইন্দ্রিয়মনক্লে অভিভূত করিয়৷ দেয়। তাহার কল দ্রুত চলে, তাহার প্রাসাদ আকাশ স্পর্শ করে, তাহার কামান শতন্ত্রী, তাহার বাণিজ্যজাল জগদ্ব্যাপী—ইহা আমাদের দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন ও বুদ্ধিকে স্তম্ভিত না করিয়া থাকিতে পারে না। কিছু না হেীকৃ, বিপুলতার একটা গায়ের জোর আছে, সেই জোরকে ঠেলিয়া-উঠিয়া মনকে মোহমুক্ত করা আমাদের মত দুৰ্ব্বলের পক্ষে বড় কঠিন । যদি বিপুলতাগ্রস্ত এই সভ্যতার দিকেই একমাত্র আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করি, তবে তাহাতে আমাদের মানসিক দুৰ্ব্বলতা কেবল বাড়িতেই থাকে,–এই সভ্যতাকেই একমাত্র আদর্শ বলিয়া বোধ হয়, এবং নিজের সামর্থ্যকে ও সম্পদকে একেবারে নগণ্য বলিয়া জ্ঞান হয় । ইহাতে স্বচেষ্টা পরাস্ত হয়, আত্মগৌরব দূর হয়, ভবিষ্যতের জন্য কোন আশা থাকে না, এবং জড়ত্বের বঙ্গদর্শন । [ ২য় বর্ষ, আধাঢ় । মধ্যে অনায়াসেই আত্মসমর্পণ করিয়া নিরাপত্তির আরামে নিদ্রার অচেতনতায় সমস্ত ভুলিয়া থাকিতে ইচ্ছা হয় । বিশেষত আমাদের বর্তমান অবস্থা ধৰ্ম্মেকৰ্ম্মে বিস্তাবুদ্ধিতে অত্যন্ত দীন । যুরোপীয় সভ্যতাকে কেবলি নিজের সেই দীনতার সহিত তুলনা করিয়া নিজেদের সম্বন্ধে হতাশ্বাস হইয়া পড়ি । এ অবস্থায় প্রথমে আমাদের বুঝিতে হইবে, বস্তু প্রধান শক্তিপ্রধান সভ্যতাহ এক মাত্র সভ্যতা নছে, ধৰ্ম্ম প্রধান মঙ্গলপ্রধান সভ্যতা তাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ । তাহার পরে, এই শেষোক্ত সভ্যতাই আমাদের ছিল, সুতরাং শেষোক্ত সভ্যতার শক্তি আমাদের প্রকৃতির মধ্যে নিহিত হইয়৷ আছে, ইহাই জানিয়া আমাদিগকে মাথা তুলিতে হইবে, আমাদিগকে আশী ও আনন্দ লাভ করিতে হইবে । আমরা বর্তমান দুৰ্গতির মধ্যে নিজেদের বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র করিয়া রাখিলে, যুরোপীয় ব্যাপারের বৃহত্ত্ব আমাদের বুদ্ধিকে দলন-পেষণ করিয়া তাহাকে আপনার চিরদাস করিয়া রাখিবে । সেই বুদ্ধির দাসত্ব, রুচির দাসত্ব আমরা প্রত্যহ অনুভব করিতেছি। প্রাচীন ভারতের সহিত নিজেকে সংযুক্ত করিয়া নিজেকে বড় করিয়া তুলিতে হইবে । জড়পদার্থের অপেক্ষা মানুষ জটিল জিনিষ, জড়শক্তি.অপেক্ষ মানুষের ইচ্ছ:শক্তি দুদ্ধৰ্ষতর, এবং বাহসম্পদের অপেক্ষা মুখ অনেক বেশি স্থলভ। সেই মানুষকে আকর্ষণ করিয়া, তাহার প্রবৃত্তিকে সংযত করিয়া; তাছার ইচ্ছাশক্তিকে নিয়ন্ত্রিত