পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা । ] জরা গ্রপ্তগণ একটা বিভীষিকার মত তোমাদের ঘাড়ে চাপিয়া আছে। মানুষের সহিত" সমস্ত ব্যক্তিগত বন্ধন তোমরা ছেদন করিয়া বসিয়া আছ, এখন ষ্টেট, অর্থাৎ সরকারের অব্যক্তিক উদ্যমের দ্বারা তোমরা ব্যক্তির সমস্ত কাজ সারিয়া লইবার বৃথা চেষ্টা করিতেছ। তোমাদের সভ্যতার প্রধান লক্ষণ দায়িত্ববিহীনতা । তোমাদের কার বারের সৰ্ব্ব এই তোমরা ব্যক্তির জায়গায় কোম্পানি এবং মজুরের জায়গায় কল বসাইতেছ। মুনফার চেষ্টাতেই সকলে ব্যস্ত–শ্রমজীবীর মঙ্গলের ভার কাহারই নহে, সেটা সরকারের । সরকার সেটাকে সাম্‌লাইয়া উঠিতে পারেন না। সহস্ৰক্রোশ দুরে যদি দুভিক্ষ হয়, যদি কোথাও মাগুলের কোন পরিবর্তন হয়, তবে তোমাদের লক্ষ লোকের কারবার বিশ্লিষ্ট হইবার জো হয়— যাহার উপরে তোমাদের হাত নাই, তাহার উপরে তোমাদিগকে নির্ভর করিতে হয় । তোমাদের মূলধন একটা সজীব পদার্থ, সেটা খোরাকের জন্য সৰ্ব্বদাই চীৎকার করিতেছে ; তাহাকে আহার না জোগাইলে সে তোমাদের গলা চাপিয়া ধরে । তোমরা যে উৎপন্ন কর, সেটা ইচ্ছামত নহে, সেটা অগত্যা,এবং তোমরা যে কিনিয়া থাক, সেটা যে চাও বলিয়া, তাহা নহে, সেটা তোমাদের ঘাড়ের উপর আসিয়া পড়ে বলিয়া । এই যে বাণিজ্যটাকে তোমরা মুক্ত বল, ইহার মত বদ্ধ বাণিজ্য আর নাই। কিন্তু ইহ কোন বিবেচনাসঙ্গত ইচ্ছার দ্বারা বদ্ধ নহে, ইহা আকস্মিক খেয়ালের শু,পাকার মুঢ়তার দ্বারা বন্দীকৃত। 参 속 চীনেম্যামের চিঠি। >q চীনেম্যানের চক্ষে তোমাদের দেশের ভিতরকার আর্থিক অবস্থা এইরকমই ঠেকে। পররাষ্ট্রের সহিত তোমাদের বাণিজ্যসম্বন্ধ, সে-ও অত্যন্ত উল্লাসজনক নয় । পঞ্চাশবৎসর পুৰ্ব্বে ধারণা হইয়াছিল যে, বিভিন্ন জাতির মধ্যে যখন বাণিজ্যসম্বন্ধ স্থাপিত হইবে, তখন শাস্তির সত্যযুগ আসিবে। কাজে দেখা গেল, সমস্তই উণ্ট । প্রাচীনকালের রাজাদের অত্যাকাঙ্ক্ষণ ও ধৰ্ম্মযাজকদের গোড়ামীর চেয়ে এই বাণিজ্যস্থান লইয়া পরস্পর টানাটানিতে যুদ্ধবিগ্রহের সম্ভাবন আরো বেশি প্রবল হইয়া উঠিতেছে। পৃথিবীর যেখানেই একটুখানি অপরিচিত স্থান ছিল, সেইখানেই য়ুরোপের লোক একেবারে ক্ষুধিত হিংস্ৰজন্তুর মত হুঙ্কার দিয়া পড়িতেছে। এখন যুরোপের এলাকার সীমানার বাহিরে এই লুণ্ঠনব্যাপার চলিতেছে। কিন্তু যতক্ষণ ভাগাভাগি চলিতেছে, ততক্ষণ পরস্পরের প্রতি পরস্পর কটুমট্‌ করিয়া তাকাইতেছে । আজ হোকু বা কাল হেীকৃ, যখন আর বাটোয়ারা করিবার জন্য কিছুই বাকি থাকিবে না, তখন তাহারা পরস্পরের ঘাড়ের উপরে গিয়া পড়িৰে । তোমাদের শস্ত্রসজ্জার এই আসল তাৎপৰ্য্য— হয় তোমরা অন্যকে গ্রাস করিবে, নয় অন্তে তোমাদিগকে গ্রাস করিবে। যে বাণিজ্যসম্পর্ককে তোমরা শাস্তির বন্ধন মনে করিয়াছিলে, তাহাই তোমাদিগকে পরস্পরের গলাকাটাকাটির প্রতিযোগী করিয়া তুলিয়াছে এবং তোমাদের সকলকে একটা বিরাটু বিনাশব্যাপারের অনতিদূরে আনিয়া স্থাপন করিয়াছে।