পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

} e বঙ্গদর্শন । বাধ কোথায় ভাঙিয়া গেছে ! যাহাঁদের কথা ভাবিবে না পণ করিয়াছিল, সমস্ত হৃদয় তাহাদের দিকে ছুটিয়াছে, আজ আর পথরোধ করিবার লেশমাত্র বল নাই । মনে মনে বিহারী ভাবিতে লাগিল, “সংসারে আমি ত অধিক কিছু চাহি নাই—অন্ত লোকে যে আনন্দ আকণ্ঠ পান করিতেছিল,আমি তাহারই একটুখানি ফেনোচ্ছ,সিমাত্র পাইতেছিলাম ;–প্রতিদিন বিশ্বস্তভাবে যে গৃহে যাইতাম, হাস্তমুখে যে আলাপ করিতাম, পাশ্বে দাড়াইয়া উদ্বৰ্ত্তিত সুখদুঃথের যে অংশ পাইতাম, তাহা এতই কি দুর্লভ, এতই কি দুরাশার সামগ্ৰী, তাহ দিলেই বা কাহার কি ক্ষতি এবং পাইলেই বা আমার কি এত লাভ ! তবু কেন সেইটুকুর অভাবে এই বিপুল ভূমণ্ডলে, ঐ অসীম নক্ষত্ৰলোকের তলে আমার মানবজন্ম আজি একেবারে ব্যর্থ-বিম্বাদ বোধ হইতেছে ! কতলোক আমার চেয়ে কত বেশি পাইয়াও অবজ্ঞাভরে পায়ে ঠেলিয়া ভাঙিয়া ফেলিয়া দেয়—আনন্দের সেই আকারণ অপব্যয় ত বিধাতার গায়ে লাগে না ! পৃথিবীর ঘরে ঘরে কত উপেক্ষিত আনন্দের বহুমূল্য ভগ্নাবশেষ আবর্জনাকুণ্ডে গড়াগড়ি যাইতেছে, এত অনাদর-অনবধানেও ত সংসারের আনন্দব্যবসায় দেউলিয়া হইয়া গেল না ! যাহা এমন ফেলাছড়ার জিনিষ, তাহার সামান্ত একটুক্‌রা কি আমি সমস্ত প্রাণমন দিয়া ভিক্ষা করিয়া পাইব না ?” মহেন্দ্রের সহিত বাল্যকালের প্রণয় হইতে সেই প্রণয়ের অবসান পর্য্যস্ত সমস্ত কথা—যে সুদীর্ঘ কাহিনী নানাবর্ণে চিত্রিত, [ বৈশাখ । জলে স্থলে পৰ্ব্বতে নদীতে বিভক্ত মানচিত্রের মত তাহার মনের মধ্যে ওটান ছিল '—বিহারী প্রসারিত করিয়া ধরিল । যে ক্ষুদ্র জগৎটুকুর উপর সে তাহার জীবনের প্রতিষ্ঠা করিয়াছিল, তাহ কোনখানে কোন দুগ্রহের সহিত সংঘাত পাইল, তাহাই সে মনে করিয়া দেখিতে লাগিল। প্রথমে বাহির হইতে কে আসিল ? স্বৰ্য্যাস্তকালের করুণ রক্তিমছটায় আভাসিত আশার লজ্জামণ্ডিত তরুণ মুখখানি অন্ধকারে অঙ্কিত হইয়া উঠিল, তাহার সঙ্গে সঙ্গে মঙ্গল উৎসবের পুণ্যশঙ্খধ্বনি তাহার কাণে বাজিতে লাগিল। এই শুভগ্রহ অদৃষ্ঠাকাশের অজ্ঞাত প্রান্ত হইতে আসিয়া দুই বন্ধুর মাঝখানে দাড়াইল—একটু যেন বিচ্ছেদ আনিল, কোথা হইতে এমন একটি গুঢ়-বেদন আনিয়া উপস্থিত করিল, যাহা মুখে বলিবার নহে, যাহা মনেও লালন করিতে নাই । কিন্তু তবু এই বিচ্ছেদ, এই বেদনা অপূৰ্ব্ব স্নেহ রঞ্জিত মাধুৰ্য্যরশ্মির দ্বারা আচ্ছন্ন—পরিপূর্ণ হইয়া রহিল । তাহার পরে যে শনিগ্রহের উদয় হইল, বন্ধুর প্রণয়, দম্পতির প্রেম, গৃহের শাস্তি ও পবিত্রতা একেবারে ছারথার করিয়া দিল, বিহারী প্রবল ঘ্নণায় সেই বিনোদিনীকে সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত সুদূরে ঠেলিয়া ফেলিতে চেষ্টা করিল। কিন্তু একি আশ্চৰ্য্য !— আঘাত যেন অত্যন্ত মৃদ্ধ হইয়া গেল, তাহাকে যেন স্পর্শ করিল না। সেই পরমাসুন্দরী’প্ৰহেলিকা ভাহার ছর্ভেদ্যরহস্তপুর্ণ ঘনকৃষ্ণ অনিমেষ দৃষ্টি লইয়া কৃষ্ণপক্ষের অন্ধকারে বিহারীর সন্মুখে স্থির হইয়া দাড়াইল । গ্রীষ্ম