পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SNుe বঙ্গদর্শন । [ ২য় বর্ষ, শ্রাবণ পাঠ্যগ্রন্থে আলোচিত হয়, তাহ ব্যক্তিগত অসত্যরূপে বড় বা অসত্যরূপে ছোট করিয়া কাহিনীমাত্র । কিন্তু দীনেশবাবুর এই গ্রন্থে হুসেন ল', পরাগল খা, ছুটিখার সহিত আমাদের যেটুকু পরিচয় হইয়াছে, তাহাতে ইতিহাস আমাদের কাছে অনেকটা সজীব হইয়া উঠিয়াছে। মুসলমান ও হিন্দু যে কত কাছাকাছি ছিল, নানা উপদ্রব-উচ্ছৃঙ্খলত সত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে যে হৃদ্যতার পথ ছিল, ইহা এমন একটি কথা, যাহ। যথার্থই জ্ঞাতব্য, স্বাহ প্রকৃতপক্ষেই ঐতিহাসিক । ইহা দেশের কথা,ইহা লোকবিশেষের সংবাদবিশেষ নহে । যেমন ভুস্তরপর্য্যায়ে ভূমিকম্প, অগ্নিউচ্ছ,সি, জলপ্লাবন,তু্যারসংহতি,কালে কালে ভূমিগঠনের ইতিহাস নানা অক্ষরে লিপিবদ্ধ করে এবং বৈজ্ঞানিক সেই লিপি উদঘাটন করিয়া বিচিত্র স্বজনশক্তির রহস্তলীলা বিস্ময়ের সহিত পাঠ করেন – তেমনি যে সকল প্রলয়ুশক্তি ও স্বজনশক্তি অদৃশুভাবে সমাজকে পরিণতিদান করিয়া আসিয়াছে, সাহিত্যের স্তরে স্তরে তাহাদের ইতিবৃত্ত আপনি মুদ্রিত হইয়া যায় । সেই নিগুঢ় ইতিহাসটি উদঘাটন করিতে পারিলে প্রকৃতভাবে—সজীবভাবে আমাদের দেশকে আমরা জানিতে পারি। রাজার দপ্তর ঘাটিয়া যে সকল কীটজর্জর দলিল পাওয়া যায়, তাহাতে অনেক সময়ে কেবলমাত্র কৌতুহল পরিতৃপ্ত ও অনেক সময়ে ভুল ইতিহাসের স্বষ্টি হইতে পারে—কারণ, তাহাকে ভাহার যথাস্থান ও যথাসময় হইতে, ভাহার চারিপাশ হইতে বিচু্যত আকারে যখন দেখি, তখন কল্পনা ও প্রবৃত্তির বিশেষ ঝোকে তাহাকে t দেখিতে পারি । বৌদ্ধযুগের পরবর্তী ভারতবর্ষই বর্তমান ভারতবর্ষ 1 সেই যুগের অস্তিম অবস্থায় যখন গৌড়ের রাজসিংহাসন ক্ষণে ক্ষণে হিন্দু ও বৌদ্ধ রাজত্বের মধ্যে দোলায়মান হইতেছিল, তখন " প্রজাসাধারণের মধ্যে সমাজ যে স্থিরভাবে ছিল, ভাহা সম্ভব নহে । তখনকার সেই আধ্যাত্মিক অরাজকতার মধ্যে বাংলাদেশে যেন একটা দেবদেবীর লড়াই বাধিয়াছিল—তখন সমস্ত সাজ-সরগুঞ্জাম-সমেত এক দেবতার মন্দির আর এক দেবতা অধিকার করিয়া পুজাৰ্চনায় নানাপ্রকার মিশ্রণ উৎপন্ন করিতেছিল। তখন এক দেবতার বিগ্রহে আর এক দেবতার সঞ্চার, এক সম্প্রদায়ের তীর্থে’ আর এক সম্প্রদায়ের প্রাচুর্ভাব, এমনি একটা বিপৰ্য্যয়ব্যাপার ঘটিতেছিল। ঠিক সেই সময়কার কথা সাহিত্যে আময় স্পষ্ট করিয়া খুজিয়া পাই না । ইহা দেখিতেছি, বৈদিককালের দেবতন্ত্রে মহাদেবের আধিপত্য নাই । তাহার পরে দীর্ঘকালের ইতিহাসহীন নিস্তব্ধতা কাটিয়া গেলে দেখিতে পাই, ইন্দ্র ও বরুণ ছায়ার মত অস্পষ্ট হইয়া গেছে, এবং ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে দ্বন্দ্ব ও মিলন ঘটিতেছে । এই দৈবসংগ্রামে ব্ৰহ্মা সৰ্ব্বপ্রথমেই পুজাগৃহ হইতে দূরে আশ্রয় লইলেন, বিষ্ণু নানা পরিবর্তনের মধ্যে নানা আকারে নিজের দাবী রক্ষা করিতে লাগিলেন এবং মহেশ্বর এক সময়ে অধিকাংশ ভারত অধিকার করিয়া লইলেন । -