পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S१२ চয়। নিম্নশ্রেণীর পক্ষে এমন সাত্বনা—এমন বলের কথা আর কি আছে s যে দরিদ্র, দুইবেলা আহার জোটাইতে পারে না, সে-ই শক্তির লীলায় সোণার ঘড়া পাইল ; যে বাধ নীচজাতীয়, ভদ্রজনের অবজ্ঞাভাজন, সে-ই মহত্ত্বলাভ করিয়া কলিঙ্গরাজের কস্তাকে বিবাহ করিল ;–ইহাই শক্তির লীলা । তাহার পরে দেখি, শিবের পূজাকে হতমান করিয়াই নিজের পূজা প্রচার কয়৷ দেবীর চেষ্টা । শিব তাহার স্বামী বটেন, কিন্তু তাহাতে কোন সঙ্কোচ নাই। শিবের সহিত শক্তির এই লড়াই। এই লড়াইয়ে পদে পদে দয়ামায়া বা দ্যায়-অন্তায় পৰ্য্যন্ত উপেক্ষিত হইয়াছে । কবিকঙ্কণ চণ্ডীতে ব্যাধের গল্পে দেখিতে পাই, শক্তির ইচ্ছায় নীচ উচ্চে উঠিয়াছে। কেন উঠিয়াছে, তাহার কোন কারণ নাই— ব্যাধ যে ভক্ত ছিল, এমনো পরিচয় পাই না। বরঞ্চ সে দেবীর বাহন সিংহকে মারিয়া দেবীর ক্রোধতাজন হইতেও পারিত । কিন্তু দেবী নিতান্তই যথেচ্ছাক্রমে তাহাকে দয়া করিলেন । ইহাই শক্তির খেলা । ব্যাধকে যেমন বিনা কারণে দেবী দয়া করিলেন, কলিঙ্গরাজকে তেমনি তিনি রিনা দোষে নিগ্ৰহ করিলেন । তাহার দেশ জলে ডুবাইয়া দিলেন। জগতে ঝড়, জলপ্লাবন, ভূমিকম্পে যে শক্তির প্রকাশ দেখি, তাহার মধ্যে ধৰ্ম্মনীতিসঙ্গত কাৰ্য্যকারণমালা দেখা যায় না - এবং সংসারে সুখদুঃখবিপৎসম্পদের যে আবৰ্ত্তন দেখিতে পাই, তাহার মধ্যেও ধৰ্ম্মনীতির স্বসঙ্গতি খুজিয়া পাওয়া কঠিন। দেখিতেছি, যে শক্তি নিৰ্ব্বি বঙ্গদর্শন । [ ২য় বর্ষ, গ্রাৰণ । চারে পালন করিতেছে, সেই শক্তিই নিৰ্ব্বিচারে ধ্বংস করিতেছে। এই অহৈতুক পালনে এবং অহৈতুক বিনাশে সাধু অসাধুর ভেদ নাই। এই দয়ামায়াহীন ধৰ্ম্মাধৰ্ম্মবিবর্জিত শক্তিকে বড় করিয়া দেখা তখনকার কালের পক্ষে বিশেষ স্বাভাবিক ছিল । তখন নীচের লোকের আকস্মিক অভু্যখান ও উপরের লোকের হঠাৎ পতন সৰ্ব্বদাই দেথা যাইত, হীনাবস্থার লোক কোথা হইতে শক্তি সংগ্ৰহ করিয়া অরণ্য কাটিয়া নগর বানাইয়াছে এবং প্রতাপশালী রাজা হঠাৎ পরাস্ত হইয়া লাঞ্ছিত হইয়াছে। তখনকার নবাব-বাদশাহদের ক্ষমতাও বিধিবিধানের অতীত ছিল— তাহীদের খেয়ালমাত্রে সমস্ত হইতে পারিত । ইহারা দয়। করিলেই সকল বাধা অতিক্রম করিয়া নীচ মহৎ হইত, ভিক্ষুক রাজা হইত। ইহার নির্দয় হইলে ধৰ্ম্মের দোহাইও কাহাকে বিনাশ হইতে রক্ষা করিতে পারিত না। ইহাই শক্তি । এই শক্তির প্রসন্ন মুখ মাতা, এই শক্তির অপ্রসন্ন মুখ চণ্ডী । ইহার “প্রসাদোহপি ভয়ঙ্করঃ”—সেইজন্ত সৰ্ব্বদাই করজোড়ে বসিয়া থাকিতে হয় । কিন্তু যতক্ষণ ইনি যাহাকে প্রশ্রয় দেন, ততক্ষণ তাহার সাত-খুন মাপ—যতক্ষণ সে প্রিয়পাত্র, ততক্ষণ তাহার সঙ্গত-অসঙ্গত সকল আবদারই অনায়াসে পুর্ণ হয়। এইরূপ শক্তি ভয়ঙ্করী হইলেও মানুষের চিত্তকে আকর্ষণ করে। কারণ, ইহার কাছে প্রত্যাশার কোন সীমা নাই। আমি অন্তায় করিলেও জয়ী হইতে পারি, আমি