পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

›ፃ8 থাকে ;–সংসার, মুখে যাহাই বলুক্‌, মুক্তি চায় না, ধন-জন-মান চায় । ধনপতির মত ব্যবসায়ী লোক সংযমী সদাশিবকে আশ্রয় করিয়া থাকিতে পারিল না, বহুতর নৌকা ডুবিল, ধনপতিকে শেষকালে শিবের উপাসনা ছাড়িয়া শক্তি-উপাসক হইতে হইল । কিন্তু তখনকার নানাবিভীষিকাগ্রস্ত পরিবর্তনব্যাকুল দুৰ্গতির দিনে শক্তিপূজারূপে এই যে প্রবল তার পূজা প্রচলিত হইয়া, ছিল, ইহা আমাদের মনুষত্বকে চিরদিন পরিতৃপ্ত রাখিতে পারে না । যে ফলের মিষ্ট হইবার ক্ষমতা আছে, সে প্রথম অবস্থার তীব্র অম্লত্ব পঙ্ক অবস্থায় পরিহার করে ; যথার্থ ভক্তি স্বতীব্র কঠিন ক্ষমতাকে গোড়ায় যদি-ব৷ প্রাধান্ত দেয়, শেষকালে তাহাকে উত্তরোত্তর মধুর, কোমল ও বিচিত্র করিয়া আনে । বাংলাদেশে অত্যুগ্র চণ্ডী ক্রমশ মাতা অন্নপূর্ণার রূপে, ভিখারীর গৃহলক্ষ্মীরূপে, বিচ্ছেদবিধুর পিতামাতার কন্যারূপে–মাত, পত্নী ও কন্ত’, রমণীর এই ত্ৰিবিধ মঙ্গল-মুন্দর রূপে দরিদ্র বাঙালীর ঘরে যে রসসঞ্চার করিয়াছেন, চণ্ডীপূজার সেই পরিণামরমণীয়তার দৃশ্য দীনেশবাবু তাহার এই গ্রন্থে বঙ্গসাহিত্য হইতে যথেষ্টপরিমাণে উদ্ধার করিয়া দেখান নাই। কালিদাসের কুমারসম্ভব সাহিত্যে দাম্পত্য-প্রেমকে মহীয়ান্‌ করিয়া এই মঙ্গলভাবটিকে মূৰ্ত্তিমান করিয়াছিল। বাংলা সাহিত্যে এই তাবের সম্পূর্ণ পরিস্ফুটত অপেক্ষাকৃত আধুনিক। তথাপি বাঙালীর দরিদ্রগৃহের মধ্যে এই মঙ্গলমাধুৰ্য্যসিক্ত দেবভাবের অবতারণা কবিকঙ্কণ চণ্ডাতে কিয়ুৎপরিমাণে আপনাকে অঙ্কিত করিয়াছে, বঙ্গদর্শন । [ ২য় বর্ষ, শ্রাবণ । অন্নদামঙ্গলও তাহার উপর রঙ ফুলাইয়াছে। কিন্তু মাধুর্য্যের ভাব গীতিকবিতার সম্পত্তি । চণ্ডীপূজা ক্রমে যখন ভক্তিতে স্নিগ্ধ ও রসে মধুর হইয়া উঠিতে লাগিল,তখন তাহা মঙ্গলকাব্য ত্যাগ করিয়া খণ্ড খণ্ড গীতে উৎসারিত হইল । এই সকল বিজয়া-আগমনীর গীত ও গ্রাম্য খণ্ডকবিতাগুলি বাংলাদেশে বিক্ষিপ্ত হইয়া আছে । বৈষ্ণবপদাবলীর দ্যায় এগুলি সংগৃহীত হয় নাই । ক্রমে ইহারা নষ্ট ও বিকৃত হইবে, এমন সম্ভাবনা আছে। এক সময়ে ভারতীতে গ্রাম্যকবিতানামক প্রবন্ধে আমি এই কাব্যগুলির আলোচনা করিয়াছিলাম । চণ্ডী যেমন প্রচণ্ড উপদ্রবে আপনার পুজা প্রতিষ্ঠা করেন, মনসা-শীতলাও তেমনি র্তাহার অনুসরণ করিয়াছিলেন। শৈব চাদ-সদাগরের দুরবস্থা সকলেই জানেন । বিষহরি, দক্ষিণরায়, সত্যপীর প্রভৃতি আরো অনেক ছোটখাট দেবতা আপন আপন বিক্রম প্রকাশ করিতে ক্রটি করেন নাই । এমনি করিয়া সমাজের নিম্নস্তরগুলি প্রবল ভূমিকম্পে সমাজের উপরের স্তরে উঠিবার জন্য কিরূপ চেষ্টা করিতেছিল, দীনেশবাবুর গ্রন্থে পাঠকেরা তাহার বিবরণ পাইবেন— এই প্রবন্ধে তাহার আলোচনা সম্ভব নহে । কিন্তু দীনেশবাবুর সাহায্যে বঙ্গসাহিত্য আলোচনা করিলে স্পষ্টই দেখা যায়, সাহিত্যে বৈষ্ণবই জয়লাভ করিয়াছেন । শঙ্করের অভু্যথানের পর শৈবধৰ্ম্ম ক্রমশই অদ্বৈতবাদকে আশ্রয় কুরিতেছিল। বাংলা সাহিত্যে দেখা যায়, জনসাধারণের ভক্তিব্যাকুল হৃদয়সমুদ্র হইতে, শাক্ত ও বৈষ্ণব, এই দুই দ্বৈতবাদের