পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ সংখ্যা । ] বঙ্গভাষা ও সাহিত্য । ›ዓጓ অভিমানে, রিং মিলনে वाॉकूण श्ब्राहि । শক্তির প্রতি ভক্তি আমাদের মনকে বীর্যের পথে লইয়া যায় নাই, প্রেমের পূজা আমা' দের মনকে কৰ্ম্মের পথে প্রেরণ করে নাই । আমরা ভাববিলাসী বলিয়াই আমাদের দেশে ভাবের বিকার ঘটিতে থাকে, এবং এইজন্তই চরিতকাব্য আমাদের দেশে পূর্ণ সমাদর লাভ করিতে পারে নাই। একদিকে দুর্গায় ও আর একদিকে রাধায় আমাদের সাহিত্যে নারীভাবই অত্যন্ত প্রাধান্য লাভ করিয়াছে। বেহুল ও অন্যান্য নায়িকার চরিত্র-সমালোচনায় দীনেশবাবু তাহার আভাস দিয়াছেন। পৌরুষের অভাব ও ভাবরসের প্রাচুর্য্য বঙ্গসাহিত্যের প্রধান লক্ষণ বলিয়। গণ্য হইতে পারে। বঙ্গসাহিত্যে দুর্গ ও রাধাকে অবলম্বন করিয়া দুই ধারা দুই পথে গিয়াছে— প্রথমটি গেছে বাংলার গৃহের মধ্যে, দ্বিতীয়টি গেছে বাংলার গৃহের বাহিরে। কিন্তু এই দুইটি ধারারই অধিষ্ঠাত্রী দেবতা রমণী এবং এই দুইটিরই স্রোত ভাবের স্রোত । যাহা হউকৃ, বঙ্গসাহিত্যে শাক্ত ও বৈষ্ণব প্রভাবের সম্বন্ধে যে আলোচনা করা গেল, তাহা হইতে সাহিত্যসম্বন্ধে আমরা একটি সাধারণ তত্ত্ব লাভ করিতে পারি। সমাজের চিত্ত যখন নিজের বর্তমান অবস্থাবন্ধনে বদ্ধ থাকে এবং সমাজের চিত্ত যখন ভাবপ্রাবল্যে নিজের অবস্থার উদ্ধে উৎক্ষিপ্ত হয়, এই দুই অবস্থার সাহিত্যের প্রভেদ অত্যন্ত অধিক । সমাজ যখন নিজের চতুৰ্দ্দিকৃবর্তী বেষ্টনের মধ্যে, নিজের বর্তমান অবস্থার মধ্যেই সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ থাকে, তখনে সে বসিয়া বসিয়া আপনার সেই অবস্থাকে কল্পনার দ্বারা দেবত্ব দিয়া মণ্ডিত করিতে চেষ্ট করে। সে যেন কারাগারের ভিত্তিতে ছবি আঁকিয় কারাগারকে প্রাসাদের মত সাজাইতে চেষ্টা পায় । সেই চেষ্টার মধ্যে মানবচিত্তের যে বেদনা—যে ব্যাকুলত আছে, তাহা বড় সকরুণ । সাহিত্যে সেই চেষ্টার বেদনা ও করুণা আমরা শাক্তযুগের মঙ্গলকাব্যে দেখিয়াছি । তখন সমাজের মধ্যে যে উপদ্রব-উৎপীড়ন, আকস্মিক উৎপাত, যে অন্যায়, যে অনিশ্চয়ত ছিল, মঙ্গলকাব্য তাহাকেই দেবমৰ্য্যাদা দিয়া সমস্ত দুঃখঅবমাননাকে ভীষণ দেবতার অনিয়ন্ত্রিত ইচ্ছার সহিত সংযুক্ত করিয়া কথঞ্চিৎ সামুনলাভ করিতেছিল এবং দুঃখক্লেশকে ভাঙাইয়। ভক্তির স্বর্ণমুদ্র গড়িতেছিল। এই চেষ্টা কারাগারের মধ্যে কিছু আনন্দ–কিছু সাঙুন আনে বটে, কিন্তু কারাগারকে প্রাসাদ করিয়া তুলিতে পারে না । এই চেষ্টা সাহিত্যকে তাহার বিশেষ দেশকালের বাহিরে লইয়া যাইতে পারে না । কিন্তু সমাজ যখন পরিব্যাপ্ত ভাবাবেগে নিজের অবস্থাবন্ধনকে লঙ্ঘন করিয়া আনন্দে ও আশায় উচ্ছ,সিত হইতে থাকে, তখনই সে হাতের কাছে যে তুচ্ছভাষা পায়, তাহাকেই অপরূপ করিয়া তোলে, ষে সামান্ত উপকরণ পায়, তাহার দ্বারাই ইন্দ্রজtল ঘটাইতে পারে। এইরূপ অবস্থায় যে কি হইতে পারে ও না পারে, তাহা পূৰ্ব্ববৰ্ত্তী অবস্থা হইতে কেহ অনুমান করিতে পারে না। একটি নূতন আশার যুগ চাই। সেই আশার যুগে মানুষ নিজের সীমা দেখিতে পায় না— সমস্তই সম্ভব বলিয়া বোধ করে । সমস্তই