পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>br8 বঙ্গদর্শন । [ ২য় বর্ষ, শ্রাবণ । সম্মুখের মেঝের উপরেই পুস্তক রাখিত। এই পুস্তকরক্ষাও ঠিক সরলরেখাতে করিতে হইত। যদি রেখা বাকিয়! যাইত, তহে হইলে পণ্ডিতমহাশয় এক একবার নাম ধরিয়া হহুঙ্কার দিয়া উঠিতেন, আর ছাত্রদের একসের রক্ত শুখাইয়া যাইত। হেড পণ্ডিত মহাশয় একটু অধিক প্যারেড প্রিয় ছিলেন । তিনি ক্লাসে প্রবেশ করিয়াই বলিতেন, “পুস্তক লও—সমশির” অর্থাৎ সকলে মস্তক সমান নত করিয়া পুস্তক লও। তার পর যতক্ষণ তিনি না বলিতেন “মস্তক তোল”, ততক্ষণ আমরা মাথা নত করিয়া থাকিতাম । এই স্কুলে ছুটির পর সারিবন্দী হইয়া যাওয়া অথবা কোন অপরাধে লেখা-দণ্ড ছিল না । বড় পণ্ডিতমহাশয় বেত্ৰদণ্ডেই সকল অপরাধের শাস্তিবিধান করিতেন। এই স্কুলে *lify a 5&n offs capital punishment ছিল ‘গাধার টুপি"। গাধার টুপি আবার দুই প্রকারের ছিল—ক্লাসের মধ্যে গাধার টুপি, আর স্কুলের প্রাঙ্গণে গাধার টুপি । স্কুলের মাঝখানে একটা বড় উঠান ছিল। কাহাকেও চরম শাস্তি দিতে হইলে এই উঠানের মাঝখানে একটা টুল রাথিয়। অপরাধীর মস্তকে একটা ত্রিকোণ কাগজের টুপি পরাইয়া দেওয়া হইত। নিৰ্ব্বদ্ধিতা যদি গাধার লক্ষণ হয়, তাহা হইলে যাহাদের মাথায় এই টুপি দেওয়া হইত, তাহাদিগকে গাধা বলিতে পারি না । কারণ নিৰ্ব্বোধ ছেলের প্রায় কখনও দুই হয় না। এই গাধার টুপি কখনও নিৰ্ব্বদ্ধিতার জন্য ব্যবহৃত হইত না । যাহারা অতিরিক্ত বুদ্ধিমান অর্থাৎ দুষ্ট, তাহারাই এই অদ্ভূত শিরকাশে সজ্জিত হইত। গ্রীষ্মাবকাশের একমাস পূৰ্ব্ব হইতে আমাদের মণিং স্কুল হইত। সে এক মহা আমোদ । আমাদের বাড়ী হইতে গড়ের স্কুল নিতান্ত কাছে ছিল না, প্রায় দেড় মাইল পথ হইবে । প্রাতে সাড়ে ছরটার সময় আমাদের স্কুল বসিত, কিন্তু আমরা অতি প্রত্যুষে, বোধ হয় সাড়ে তিনটা বা চারিটার সময়, শয্যাত্যাগ করির স্কুলে যাইবার জন্য প্রস্তুত হইতাম । মা পূৰ্ব্বদিন বৈকালে কিছু খাবার আনাইয়। রাখিতেন । অতি প্রত্যুষে উঠিয়া মুখ হাত ধুইয়া সেই খাবার খাইয়। পথে বাহির হইতাম । তখনও বেশ অন্ধকার থাকিত । মার অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমাদিগকে এই অন্ধকার থাকিতে থাকিতে যাইতে হইত, কারণ পাড়ার অন্যান্য বয়স্কর আমাদিগকে ডাকিতে থাকিত। এক-একদিন এত প্রাতে যাইতাম যে, ষখন স্কুলে উপস্থিত হইতাম, তখনও ১০।১৫ হাত দুরের লোক চিনিতে পারা যাইত না । স্কুলে একটি অতি প্রাচীন মালী ছিল। সে বেচার সমস্তরাত্রি মশার অত্যাচারে ছট্‌ফট্‌ করিয়া ভোরবেলায় একটু চক্ষু বুজিত, আর সেই সময় স্কুলের পোড়োরা গিয়া চীৎকারস্বরে তাহার নিদ্র। ভাঙাইয়া দিত। পথে যাইবার সময় যে আমরা খুব ভাল মানুষটির মত যাইতাম না, তাহ বলাই বাহুল্য। চৈত্রমাসের প্রার অৰ্দ্ধেক আন্দাজ হইলেই আমাদের মর্ণিং,স্কুল আরম্ভ হইত। সেই সময় তারকেশ্বরযাত্রী সন্ন্যাসীর প্রাতে গঙ্গাস্নান করিয়া দলবদ্ধ হইয়া তারকেশ্বর যাত্র