পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ সংখ্যা । ] স্কুলের স্মৃতি। Xboዓ মাসে এই ১২১৩ টাক মাঝির বাধা বেতন, তা ছাড়া পূজার সময় সে প্রায় সকল, ছাত্রের নিকট হইতে ধুতি-চাদর এবং ছাত্রগণের বিবাহ, উপনয়ন অথবা ‘পাঁস হওয়া প্রভৃতি উপলক্ষে নানা প্রকার বকৃসিস পাঃ ত । গ্রীষ্মাবকাশ বা পূজার বন্ধে কলেজ বন্ধ হুইত, কিন্তু মাঝিদের বেতন বন্ধ হইত না । এইসময় মাঝিরা স্বে ছামত নৌকা ভাড়া দিত। তদ্ভিন্ন প্রাতে, মধ্যাহে ও রাত্রে তাহার। গঙ্গায় ইলিশ-মাছ ধরিত বা ভাড়া পাইলে ভাড়ায় যাক্টত মোটের উপর কলেজের নৌকার মাঝিদেয় অবস্থা মন্দ ছিল না। অনেকেরই মাসে গড়ে ত্রিশটাকা উপার্জন হইত। অধিকাংশ নৌকায় একজন করিয়াই মাঝি থাকিত, কেবল দুই একখানি নৌকাতে একজন সহকারী মাঝি বা দাড়ি দেখা যাইত, নতুবা নৌকার বাবুরাই মাঝির সহকারী হইত। কলেজের নৌকায় প্রত্যেক বাবুই একএকজন পাক৷ মাঝি। প্রত্যহ প্রাতে এবং অপরাত্ত্বে ছাত্রেরা পাল করিয়া হাল না ধরিলে, নৌকা কেবলমাত্র মাঝির সাহায্যে দ্রুতগতি যাইতে পারিত না, তাহাতে স্কুলের বেলা হইবার সম্ভাবনা,আর বাড়ী আসিতেও বিলম্ব ঘটিত । স্বতরাং ছাত্রদিগকে পালা করিয়া হাল ধরিতেই হইত। ভাদ্রমাসের ভর-গাঙে রক্তবর্ণ বারিরাশি যখন প্রবলবেগে সগর্জনে সাগরাভিমুখে ছুটিত, তখন আমরা অতি নিশ্চিন্তভাবেই হাল ধরিয়া বসিয়া থাকিতাম ; জলের গর্জনে,আবর্তের আস্ফালনে.স্রোতের আকর্ষণে ক্ৰক্ষেপও করিতাম না । আমরা ' প্রায়ই হালের নিকটে বসিয়া যাম কক্ষে হাল জড়াইয়া ধরিতাম,আর দক্ষিণ হস্তে ছত্র ধরিয়া সম্মুখে পুস্তক খুলিয়। রাখিয়া পাঠ মুখস্থ করিতাম । নৌকা ঘুরাইবার ফিরাইবার অবিশ্রাক হইলে বাম হস্তের সাহায্যেই তাহ সমাধা হইত। বৈশাখমাসের অপরাহ্লে কলেজ হটতে ফিরিবার সময় প্রায়ই ঝড়বৃষ্টিতে পড়িতাম। অপরাত্নে পশ্চিম অtকাশে মেঘ দেখিলে আমাদের অভিভাবকগণ চিন্তিত হইতেন, কিন্তু আমরা তাহ। গ্ৰাহও করিতাম না । আমরা যখন কলেজে পড়ি, সেই সময় হুগলীর পুল নিৰ্ম্মিত হইতে থাকে । পুলনিৰ্ম্মাণকালে ‘মার্গারেট’-নামক একখানি অতি দ্রুতগামী ক্ষুদ্র ষ্টীমার প্রায়ই কলিকাতা হইতে হুগলীতে যাতায়াত করিত । তাহার মস্ত দুইখান চাকা ছিল, সেইজন্য ষ্টীমারখানি চলিয়া গেলে, ৪৫টা অতি প্রকা গু ঢেউ সমস্ত গঙ্গার একুল ওকুল আলোড়িত করিয়া দিত। মার্গারেটের ঢেউ লাগিয়া বড় বড় নৌকাগুলিও জুলিয়া উঠিত; কিন্তু আমরা সে ঢেউ দেখিয়া, ভয় পাওয়া দুরে থাক, সময়-সময় এক আধ-ক্রোশ এই চলন্ত ষ্টীমার ধরিয়াই চলিয়। যাইতাম । কথনকখন তিন-চারি-থানা কলেজের নৌকাতে বাচ-খেলা লাগিয়া যাইত । বাচ-খেলাট প্রায় অপরাহ্লেই হইত। আমাদের নৌকায় দিনকয়েকের জন্ত একজন দাড়ি আসিয়াছিল। সে বড় অদ্ভুত প্রকৃতির লোক । নৌকায় যদি ছাত্রেরা গোলমাল করিত, তাহা হইলে সে বলিত, “বাবুরা গোলমাল কোরে না গো-গোলমাল কল্পে নৈকেফৈকে চলে না।” সে নৌকাকে বলিত নৈকে’ । গোলমাল করিলে অর্থাৎ আরো