পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>brbr হীরা সকলে একসঙ্গে উচ্চস্বরে কথা কহিলে “নৈকো" যে কেন চলিবে না, তাহা আমরা বুঝিতে পারিতাম না । tı আমরা যে সময়ের কথা বলিতেছি, তখন কলেজের সন্মুখে গঙ্গার মাঝখানে একটা খুব বড় রকমের চড়া ছিল। চড়াটা বড় বড় ঘাস, হোগল, শর, খড়ি এবং অনেকগুলি শিমুলগাছে ভরিয়া গিয়াছিল । চড়ার গানিকট একজন রুষক আবাদ করত। সময়ে সময়ে মধ্যান্ত্রে আমরা নৌকা লইয় এই চড়ায় যাইতাম । আমাদের নৌকায় হুগলী কলেজ ছাড়া অন্যান্য স্কুলেরও দুইচারিজন ছাত্র ছিল। যদি কোন কারণে আমাদের হাফ স্কুল হইত, তাহা হইলে আমরা অন্তান্ত ছাত্রদের জন্য তিনটা পৰ্য্যন্ত অপেক্ষা করিতাম। এই অপেক্ষাট অনেকসময়ে চড়ার উপরেই কাটিয়া যাইত। মধ্যাহ্লে মাঝিরা প্রায় নৌকার থাকিত না। কলেজের ঘাটের দক্ষিণের ঘাটে একটা খুব বৃহৎ অশ্বখবৃক্ষ আছে, তাহার তলদেশ সান-বাধান । মাঝিরা প্রায় প্রতিদিন এই অশ্বখতলে একত্র হইয়া তাস খেলিত, কেহ বা গাত্রমার্জনীর উপাধান করিয়া নিদ্রাদেবীর সেয। করিত । আমরা যখন মধ্যাহ্লে চড়ায় যাইতাম, তখন প্রায়ই মাঝির নৌকায় থাকিত না । একদিন আমরা ৪৫ জনে জুটিয়া এইপ্রকার চড়ায় গিয়া দেখি যে, একটা শিমুল গাছের তলায় আমাদের তিনজন সমপাঠী বসিয়া ‘চড়িভাতি’ করিতেছে। তাহদের নৌকার মাঝি তাহাদের আয়োজন করিয়া দিতেছে। কেরোসিনের ষ্ট্রোভ জালিয়। তাছাতে বঙ্গদর্শন। হইবে। [ ২য় বর্ণ, শ্রীৰণ । খিচুড়ি রন্ধন হইয়াছে, আর ইলিশমাছ ভাজা হইতেছে। o কলেজে অধ্যয়নকালে আমাদের জলযোগটা প্রায়ই ছুটির পর নৌকায় বসিয়া হইত। ঐ সময় দুইজন খাদ্যবিক্রেতা মিষ্টান্ন, লুচি, কচুরি ও আলুর দম লইয়। ঘাটে বসিয়া থাকিত। আমরা নৌকায় যাইবার সময় তাহার নিকট হইতে খাবার কিনিয়া লইতাম । কখনও বা স্কুলে যাই বার সময় আমাদের মাঝির নিকট পরস। দিয়া যাইতাম, সে বাজার হইতে খাবার কিনিয়া-অানিয়া রাখিয়া দিত। আমাদের মাঝি দিনকতক খাযারের ব্যবসা আরম্ভ করিয়াছিল। অমিয়া যে কয়জন নৌকার জল খাইতাম, মাঝি সেই হিসাবে বাজার হইতে ওজন করিয়া খাবার কিনিয়া আনিত এবং আমাদিগকে খুচরা দরে বিক্রয় করিত। তাহাতে আমাদেরও কোন ক্ষতি হইত না, অথচ মাঝে হইতে মাঝি প্রত্যহ দুই-একতান পাইয়। যাইত । আমাদের পাঠ্যাবস্থায় বার্ডসাই’ ছিল চুরুটও যাহা ছিল, তাহা স্কুলের বালকগণের মধ্যে বড় দেখিতে পাইতাম না। এখন দেখিতে পাই, ৬৭বৎসরের ছেলেগুলোও বার্ডসাই খায়। তখন যুবকেরাও চুরুট খাইত না, তবে অনেকে হকাতে তামাকু খাইত। আমি যখন সপ্তম কি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি, তখন একজন প্রথম শ্রেণীর ছাত্রকে চুরুট খাইতে দেখিয়া আশ্চৰ্য্য হইয়াছিলাম , তাহার বয়স তখন ১৮১৯বৎসর ভদ্রলোকের ছেলে এত অল্প বয়সে চুরুট খায়, তাছ। পূৰ্ব্বে কখনও দেখি নাই। ন} {