পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৯২ বঙ্গদর্শন । [ ২য় বর্ষ, শ্রাবণ। ভ্ৰষ্ট জীবনের পঙ্কশয্যায় ঘৃণা এবং আসক্তির মধ্যে যে প্রাত্যহিক লড়াই হইতে থাকিবে, তাহা অত্যন্ত বীভৎস । বিনোদিনী স্বহস্তে, স্বচেষ্টায় মাটি খড়িয়া মহেঞ্জের হৃদয়ের অস্তস্তল হইতে এই যে একটা লোলজিহব। লোলুপতার ক্লেদাক্ত সরীস্বপকে বাহির করিয়াছে,ইহার পুচ্ছপাশ হইতে সে নিজেকে কেমন করিয়া রক্ষা করিবে ? একে বিনোদিনীর ব্যথিত হৃদয়, তাহাতে এই ক্ষুদ্র অবরুদ্ধ বাস,তাহাতে মহেন্দ্রের বাসনাতরঙ্গের অহরহ অভিঘাত—ইহা কল্পনা করিয়াও বিনোদিনীর সমস্ত চিত্ত আতঙ্কে পীড়িত হইয়া উঠে ! জীবনে ইহার সমাপ্তি কোথায় ? কবে সে এই সমস্ত হইতে বাহির হইতে পরিবে ? বিনোদিনীর সেই ক্লশ-পাণ্ডুর মুখ দেখিয়া মহেন্দ্রের মনে ঈর্ষানল জলিয়া উঠিল । তাহার কি এমন কোন শক্তি নাই,যাহা দ্বারা সে বিহারীর চিস্ত হইতে এই তপস্বিনীকে বলপূর্বক উৎপাটিত করিয়া লইতে পারে ? ঈগল যেমন মেষশাবককে এক নিমেষে ছো মারিয়া তাহার সুদুৰ্গম অভ্ৰভেদী পৰ্ব্বতনীড়ে উত্তীর্ণ করে, তেমনি এমন কি কোন মেঘপরিবৃত নিখিলবিষ্কৃত স্থান নাই, যেখানে একাকী মহেন্দ্র তাহার এই কোমলসুন্দর শিকারটকে আপনার বুকের কাছে লুকাইয়া রাখিতে পারে ? ঈর্ষার উত্তাপে তাহার ইচ্ছার আগ্রহ চতুগুণ বাড়িয়া উঠিল। আর কি সে একমুহূৰ্ত্তও বিনোদিনীকে চোখের আড়াল করিতে পারিবে ? বিহারীর বিভীষিকাকে অহরহ ঠেকাইয়৷ রাখিতে হইবে, তাহাকে স্বচ্যগ্রমাত্র অব কাশ দিতে আর ত মহেন্ত্রের সাহস হইবে 预1! t বিরহতাপে রমণীর সৌন্দৰ্য্যকে স্বকুমার করিয়া তোলে, মহেন্দ্র এ কথা সংস্কৃতকাব্যে পড়িয়াছিল, আজ বিনোদিনীকে দেখিয়৷ সে তাহা যতই অনুভব করিতে লাগিল, ততই মুখমিশ্রিত দুঃখের স্বতীব্র আলোড়নে তাহার হৃদয় একান্ত মথিত হইয়া উঠিল । বিনোদিনী ক্ষণ কাল স্থির থাকিয়া মহেন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি কি চা থাইয়া আসিয়াছ ?” মহেন্দ্র কহিল, “না হয় খাইয়া আসিয়াছি, তাই বলিয়া স্বহস্তে আর এক পেয়াল দিতে কৃপণতা করিয়ো না --পালা মুঝ ভর দেরে ” বিনোদিনী বোধ হয় ইচ্ছা করিয়া নিতান্ত নিষ্ঠুরভাবে মহেন্দ্রের এই উচ্ছ,াসে হঠাৎ আঘাত দিল—কহিল, “বেহারি-ঠাকুর পে এখন কোথায় আছেন, খবর জান ?” মহেন্দ্র নিমেষের মধ্যে বিবর্ণ হইয়া কহিল, “সে ত এখন কলিকাতায় নাই।” বিনোদিনী । তাহার ঠিকানা কি ? মহেন্দ্র । সে ত কাহাকেও বলিতে চাহে না । বিনোদিনী । সন্ধান করির কি খবর লওয়া যায় না ? মহেন্দ্র । আমার ত তেমন জরুরি দরকার কিছু দেখি না। বিনোদিনী ।“ দরকারই কি সব ? আশৈশব বন্ধুত্ব কি কিছুই নয় ? . মহেন্দ্র । বিহারী আমার আশৈশব বন্ধু বটে, কিন্তু তোমার সঙ্গে তাহার বন্ধুত্ব