পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম সংখ্যা । ]

  • বিহারী ক্ষণকাল স্তব্ধ হইয়া রহিল। তাহার পর দৃঢ়স্বরে বলিল, “সে তোমার নহে। আমি তাহাকে চুরি করিয়া আনি নাই, সে নিজে আমার কাছে আসিয়া ধরা দিয়াছে।”

মহেন্দ্র গর্জন করিয়া উঠিল—“মিথ্য কথা !”—এই বলিয়া পাশ্ববৰ্ত্তী ঘরের রুদ্ধদ্বারে আঘাত দিতে দিতে উচ্চস্বরে ডাকিল, “বিনোদ, বিনোদ ।” ঘরের ভিতর হইতে কাল্লার শব্দ শুনিতে পাইয়া বলিয়া উঠিল, “ভয় নাই বিনোদ । আমি মহেন্দ্র, আমি তোমাকে উদ্ধার করিয়া লইয়া যাইব—কেহ তোমাকে বন্ধ করিয়া রাখিতে পারিবে না।” বলিয়া মহেন্দ্র সবলে দ্বারে ধাক্কা দিতেই দ্বার খুলিয়৷ গেল। ভিতরে ছুটিয়া গিয়া দেখিল, ঘরে অন্ধকার । অস্ফুট ছায়ার মত দেখিতে পাইল, বিছানার কে যেন ভয়ে আড়ষ্ট হইয়া অব্যক্ত শব্দ করিয়া বালিশ চাপিয়া পরিল । বিহারী তাড়াতাড়ি ঘরের মধ্যে ঢুকিয় বসন্তকে বিছানা হইতে কোলে তুলিয়। সাস্তুনার স্বরে বলিতে লাগিল, “ভয় নাই, বসন্ত,-ভয় নাই, কোন ভয় নাই ।” 婚 মহেন্দ্র তখন দ্রুতপদে বাহির হইয়। বাড়ীর সমস্ত ঘর দেখিয়া আসিল । যখন ফিরিয়া আসিল, তখনো বসন্ত ভয়ের আবেগে থাকিয়া থাকিয়ার্কাদিয়া উঠিতেছিল, এবং বিহারী তাহার ঘরে আলো জালিয়া তাহাকে বিছানায় শোয়াইয়া, उँीशब গায়ে হাত বুলাইয় তাহাকে ঘুম পাড়াইবার চেষ্ট৷ করিতেছিল । চোখের বালি । Sළු মহেন্দ্র আসিয়া কহিল, “বিনোদিনীকে কোথায় রাখিয়াছ ?” বিহারী কহিল,“মহিন্দ, গোল করিয়ো না, তুমি অকারণে এই বালককে যেরূপ ভয় পাওয়াইয়া দিয়াছ, ইহার অসুখ করিতে পারে। আমি বলিতেছি, বিনোদিনীর পবরে তোমার কোন প্রয়োজন নাই!” মহেন্দ্ৰ কহিল, “সাধু, মহাত্মা, ধৰ্ম্মের আদর্শ খাড়া করিয়ে না! আমার স্ত্রীর এই ছবি কোলে করিয়া রাত্রে কোন দেবতার ধ্যানে কোন পুণ্যমন্ত্র জপ করিতেছিলে ? ভণ্ড ” বলিয়া, ছবিখানি মহেন্দ্র ভূমিতে ফেলিয়া জুতামৃদ্ধ পা দিয়া তাহার কাচ চূর্ণচূর্ণ করিল এবং প্রতিমূৰ্ত্তিটি লইয়া টুক্‌রা-টুকুর। করিয়া ছিড়িয়া “ বিহারীর গায়ের উপর ফেলিয়া দিল । তাহার মত্তত দেখিয়া বসন্ত আবার ভয়ে কাদিয়া উঠিল। বিহারীর কণ্ঠ রুদ্ধপ্রায় হইয়া আসিল —দ্বারের দিকে হস্ত নির্দেশ করিয়া কহিল—“যাও!” মহেন্দ্র ঝড়ের বেগে বাহির হইয়া চলিয়া গেল । ( రిసె ) বিনোদিনী তাহদের গ্রামে তাহার পরিত্যক্ত প্রায় ঘরে গিয়া উপস্থিত হইল। পূৰ্ব্বে যখন সে এখানে বাস করিত, তখন তাহার তরুণ জীবনের সমস্ত দুঃখ-দৈন্ত-অসম্পূর্ণতার স্মৃতিতে বিজড়িত এই জীর্ণকুটার তাহার অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছিল। তাহার মূঢ় অশিক্ষিত অসচ্চরিত্র স্বামীর সঙ্গে যে কয়টা দিন কাটিয়াছিল, যে কয়দিনের আক্রমণে তাহার