চতুর্থ সংখ্যা । ] হইয়া উঠিল-সে মুখের উপর আঁচল চাপিয়া ধরিল * * এইরূপে রোগীর গৃহে নিরানন্দ দিন মন্দগতিতে কাটিয়া গেল। অভিমানের মধ্যেও এই দুই নারীর ভিতরে ভিতরে আশা ছিল, এখনি মহেন্দ্র আসিবে। শব্দমাত্রেই উভয়ের দেহে যে একটি চমক-সঞ্চার হইতেছিল, তাহ উভয়েই বুঝিতে পারিতেছিল। ক্রমে দিবাবসানের আলোক অস্পষ্ট হইয়া আসিল ; কলিকাতার অন্তঃপুরের মধ্যে সেই গোধূলির যে আভা, তাহাতে আলোকের প্রফুল্লতাও নাই, অন্ধকারের আবরণও নাই-তাহ বিষাদকে গুরুভার এবং নৈরাশুকে অশ্রীহীন করিয়া তোলে, তাহা কৰ্ম্ম ও আশ্বাসের বল হরণ করে, অথচ বিশ্রাম ও বৈরাগ্যের শাস্তি আনয়ন করে না। রুগণগৃহের সেই শুষ্ক শ্ৰীহীন সন্ধ্যায় আশা নিঃশব্দপদে উঠিয়া একটি প্রদীপ জালিয়া ঘরে অনিয়া দিল । রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “বেীমা, আলো তাল লাগিতেছে না, প্রদীপ বাহিরে রাখিয়া দাও!” আশা প্রদীপ বাহিরে রাখিয়া আসিয়৷ বসিল । অন্ধকার যখন ঘনতর হইয়া এই ক্ষুদ্রকক্ষের মধ্যে বাহিরের অনন্ত রাত্রিকে অনিয়া দিল, তখন আশ। রাজলক্ষ্মীকে মৃদ্ধস্বরে জিজ্ঞাসা করিল –“মা, র্তাহাকে কি একবার খবর দিব ?” রাজলক্ষ্মী দৃঢ়স্বরে কছিলেন, “না বেীমা, তোমার প্রতি আমার শপথ রছিল, মহেন্দ্রকে খবর দিয়ে না।", e শুলিয়া আশা স্তন্ধ হইয়া রহিল ; তাহার আর কাদিবার বল ছিল না। চোখের বালি । సిd বাহিরে দাড়াইয়া বেহার কহিল, “বাবুর কাছ হইতে চিঠি আসিয়াছে।” শুনিয়া মুহূর্তের মধ্যে রাজলক্ষ্মীর মনে হইল, মহেঞ্জের হয় ত হঠাৎ একটা কিছু ব্যামো হইয়াছে, তাই সে কোনমতেই আসিতে না পারিয়া চিঠি পাঠাইয়াছে। অমুতপ্ত ও ব্যস্ত হইয়া কহিলেন, “দেখ ত বোমা, মহীন কি লিথিয়াছে ?” আশা বাহিরের প্রদীপের আলোকে কম্পিতহস্তে মহেন্দ্রের চিঠি পড়িল। মহেন্দ্র লিখিয়াছে, কিছুদিন হইতে সে ভাল বোধ করিতেছিল না, তাই সে পশ্চিমে বেড়াইতে যাইতেছে । মতার অমুখের জষ্ঠ বিশেষ চিন্তার কারণ কিছুই নাই । র্তাহাকে নিয়মিত দেখিবার জন্ত সে নবীনডাক্তারকে বলিয়া দিয়াছে। রাত্রে ঘুম না হইলে বা মাথা ধরিলে কখন কি করিতে হইবে, তাছাও চিঠির মধ্যে লেখা আছে— এবং দুই-টিন লঘু ও পুষ্টিকর পথ্য মহেন্দ্র ডাক্তারখানা হইতে আনাইয়া চিঠির সঙ্গে পাঠাইয়াছে। আপাতত গিরিধির ঠিকানায় মাতার সংবাদ অবশু অবস্ত জানাইবার জন্ত চিঠিতে পুনশ্চের মধ্যে অনুরোধ আছে । এই চিঠি পড়িয়া আশা স্তম্ভিত হইয়া গেল ;–প্রবল ধিক্কার তাহার দুঃখকে অতুিক্রম করিয়া উঠিল । এই নিষ্ঠুর বার্তা মাকে কেমন করিয়া শুনাইবে ? আশার বিলম্বে রাজলক্ষ্মী অধিকতর উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিলেন । কছিলেন, “বেীমা, মহীন কি লিখিয়াছে, শীঘ্র আমাকে শুনাইয়। যাও ”—বলিতে বলিতে তিনি আগ্ৰছে বিছানায় উঠিয়া বসিলেন।