পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ সংখ্যা । ] চোখেয় ৰালি । ३ ● s ميمي : বিনোদিনী সেদিনকার উদ্যত চুম্বনের রক্তিম আভার দ্বারা সেগুলিকে আজ এমন বিবর্ণ, অকিঞ্চিৎকর করিয়া দিয়া গেল ! মহেন্দ্রের ছায়ার মত হইয়া জীবনের অধিকাংশ দিন কেমন করিয়া কাটিয়াছিল ? তাছার মধ্যে কি চরিতার্থতা ছিল । প্রেমের বেদনায় সমস্ত জল-স্থল-আকাশের কেন্দ্রকুহর হইতে যে এমন রাগিণীতে এমন বঁাশা বাজে, তাহা ত অচেতন বিহারী পূৰ্ব্বে কখনো অমুমান করিতেও পারে নাই ! যে বিনোদিনী দুই বাহুতে বেষ্টন করিয়া একমুহূৰ্ত্তে অকস্মাৎ এই অপরূপ সৌন্দৰ্য্যলোকে বিহারীকে উত্তীর্ণ করিয়া দিয়াছে, তাহাকে সে আর কেমন করিয়া ভুলিবে ? তাহার দৃষ্টি, তাহার আকাঙ্ক্ষা আজ সৰ্ব্বত্র ব্যাপ্ত হইয়া পড়িয়াছে, তাহার ব্যাকুল ঘননিশ্বাস বিহারীর রক্তস্রোতকে অহরহ তরঙ্গিত করিয়া তুলিতেছে এবং তাহার স্পশের মুকোমল উত্তাপ বিহারীকে বেষ্টন করিয়া পুলকাবিষ্ট ঈদয়কে ফুলের মত ফুটাইয়। রাখিয়াছে । কিন্তু তবু সেই বিনোদিনীর কাছ হস্ততে বিহারী আজ এমন দূরে রহিয়াছে কেন ? তাহার কারণ এই, বিনোদিনী যে সৌন্দৰ্য্যরসে বিহারীকে অভিষিক্ত করিয়া দিয়াছে, সংসারের মধ্যে বিনোদিনীর সহিত সেই সৌন্দর্য্যের উপযুক্ত কোন সম্বন্ধ সে কল্পনা করিতে পারে না। পদ্মকে তুলিতে গেলে পঙ্ক উঠিয়া পড়ে। কি বলিয়া তাহাকে এমন কোথায় স্থাপন করিতে পারে, যেখানে মুন্দর বীভৎস হইয়া না উঠে ! তাহা ছাড়া মহেঞ্জের সহিত যদি কাড়াকড়ি বধিয়া युग्नि, তৰে সমস্ত ব্যাপারটা এতই কুৎসিত আকার ধারণ করিবে যে, সে সম্ভাবনা বিহারী মনের প্রান্তেও স্থান দিতে পারে না। তাই বিহারী নিভৃত গঙ্গাতীরে বিশ্বসঙ্গীতের মাঝখানে তাহার মানসী প্রতিমাকে প্রতিষ্ঠিত করিয়া আপনার হৃদয়কে ধূপের মত দগ্ধ করি*তেছে। পাছে এমন কোন সংবাদ পায়, যাহাতে তাহার মুখস্বপ্নজাল ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হষ্টয়া যায়,তাই সে চিঠি লিখিয়া বিনোদিনীর কোন থবরও লয় না ! তাহার বাগানের দক্ষিণ প্রাস্তে ফলপুর্ণ জামগাছের তলায় মেঘাচ্ছন্ন প্রভাতে বিহারী চুপ করিয়া পড়িয়া ছিল, সন্মুখ দিয়া কুঠির পাক্ষসী যাতায়াত করিতেছিল, তা-ই সে অলসভাবে দেখিতেছিল। ক্রমে বেলা বাড়িয়া যাইতে লাগিল। চাকর আসিয়া, আহারের আয়োজন করিবে কি না, জিজ্ঞাসা করিল—বিহারী কহিল, “এখন থাকু ” মিস্ত্রির সর্দার আসিয়া বিশেষ পরামর্শের জন্য তাহাকে কাজ দেখিতে আহবান করিল— বিহারী কহিল –“আর একটু পরে ” এমন-সময় বিহারী হঠাৎ চমকিয়া উঠিয়া দেখিল, সম্মুখে অন্নপূর্ণ। শশব্যস্ত হইয়া উঠিয়া পড়িল—দুই হাতে র্তাহার প। চাপিয়া ধরিয়া ভূতলে মাথা রাথিয় প্রণাম করিল। অন্নপূর্ণ র্তাহার দক্ষিণহস্ত দিয়া পরমস্নেহে বিহারীর মাথা ও গা স্পশ করিলেন । অশ্রুজড়িতস্বরে কহিলেন, “বিহারি, তুই এত রোগ হইয়া গেছিল কেন ?” বিহারী কহিল, “কাকীমা, তোমার স্নেহ ফিরিয়া পাইবার জন্ত ।” শুনিয়া অন্নপূর্ণার চোখ দিয়া ঝরঝর