পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१९8. বঙ্গদর্শন: | সহিত আমাদের—অর্থাৎ এইবিদেশী নাট্যের ভারতবর্ষীয় দর্শকদের–পরিচয় অস্পষ্ট হইয়া আসিতেছে। প্রাচীন বেদীর উপর হইতে কোন রাত্রে তাছার আহবান बैिं আসে, তবে সাজ বদল করিয়া, মচমচে বুটু খুলিয়া কাষায়-বসন পরিয়া করজোড়ে তাহার কাছে যাইবার পথ কি আর খুজিয়া পাইব ? যে পতঙ্গ প্রদীপে পুড়িয়া মরিতে আসে, হার, সেই দগ্ধপক্ষ পঙ্গু কি আর তাহার স্নিগ্ধগুমেল জন্মভূমির কোমল ক্রোড়ে মরিবার জষ্ঠ ও ফিরিয়া যাইতে পারে না ? ইতিহাস সকল দেশে সমান হইবেই, এ কুসংস্কার বর্জন না করিলে নয়। যে ব্যক্তি রথচাইলডের জীবনী পড়িয়া পাকিয়৷ গেছে, সে খৃষ্টের জীবনীর বেলায় তাহার হিসাবের খাতাপত্র ও আপিসের ডায়ারি তলৰ করিতে পারে ; যদি সংগ্ৰহ করিতে ন পারে, তবে তাছার অবজ্ঞা জন্মিবে এবং সে বলিবে, যাহার এক পয়সার সঙ্গতি ছিল না, তাহাঁর আবার জীবনী কিসের ? তেমনি ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীর দফতর হইতে তাহার রাজবংশমালা ও জয়পরাজয়ের কাগজপত্র না পাইলে যাহারা ভারতবর্ষের ইতিহাসসম্বন্ধে হতাশ্বাস হইয়া পড়েন এবং বলেন, যেখানে পলিটিক্স নাই, সেখানে আবার হিষ্ট্রী কিসের, তাহারা ধানের ক্ষেতে বেগুন খুজিতে যান এবং না পাইলে মনের ক্ষোভে ধানকে শস্তের মধ্যেই গণ্য করেন না। সকল ক্ষেতের আবাদ এক নহে, ইহা জানিয়া যে ব্যক্তি যথাস্থানে উপযুক্ত শস্তের প্রত্যাশ করে, সেই প্রাজ্ঞ । যিশু খৃষ্টের হিসাবের খাত্ত দেখিলে [ ২য় বর্ষ, ভঞ্চি । তাহার প্রতি অবজ্ঞা জন্মিতে পারে, কিন্তু তাহার অন্ত,বিষয় সন্ধান করিলে খাতাপত্র সমস্ত নগণ্য হইয়া যায়। তেমনি রাষ্ট্রীয় ব্যাগারে ভারতবর্ষকে দীন ৰলিয়া জানিয়াও অন্ত বিশেষ দিক্ হইতে সে দীনতাকে তুচ্ছ করিতে পারা যায়। ভারতবর্ষের সেই নিজের দিক্ হইতে ভারতবর্ষকে না দেখিয়া, আমরা শিশুকাল হইতে তাহাকে খৰ্ব্ব করিতেছি ও নিজে খৰ্ব্ব হইতেছি। ইংরাজের ছেলে জানে, তাহার বাপ-পিতামহ অনেক যুদ্ধজয়, দেশ-অধিকার ও বাণিজ্যব্যবসায় করিয়াছে, সে-ও নিজেকে রণগৌরব, ধনগৌরব, রাজ্যগৌরবের অধিকারী করিতে চায়। আমরা জানি, আমাদের পিতামহগণ দেশ-অধিকার ও বাণিজ্যবিস্তার করেন নাই—এইটে জানাইবার জন্তই ভারতবর্ষের ইতিহাস । তাছারা কি করিয়াছিলেন জানি না, সুতরাং আমরা কি করিব, তাহাও জানি না । সুতরাং পরের নকল করিতে হয় । ভিতরে সার না থাকিলে আসল জিনিষটির নকল কেহ করিতে পারে না, তাই বিদেশা নিত্যবস্তুর পরিবর্তে বিদেশী পোষাক-তকৃমা, বিলাস-বিহারচালচলন গ্রহণ করিয়া প্রচুর বাক্যাড়ম্বরে সমস্ত শূন্ততাকে স্ফীত করিয়া তুলিতে হয়। আমরা কন্‌গ্রেস করিতেছি, মনে করিতেছি যেন আমরা লড়াই করিতেছি ; ভিক্ষাপত্রে সই করিতে একত্র হইয়াছি, মনে করিতেছি আমরা পালামেণ্ট করিতেছি ; যথেচ্ছাচার করিতেছি, মনে করিতেছি আমরা সমাজসংস্কারক ; পরের সমস্ত সংস্কার অন্ধভাবে গ্রহণ করাকেই রলিতেছি ঔদার্য্য, নিজের